চট্টগ্রাম শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল, ২০২৪

হাসপাতালে অনাগ্রহ, অধিকাংশ রোগী বাসায় চিকিৎসা নিচ্ছেন

ইফতেখারুল ইসলাম

৮ জুলাই, ২০২০ | ১:১৫ অপরাহ্ণ

মোহাম্মদপুর এলাকার বাসিন্দা তানভীর মাহমুদ। দুই সপ্তাহ আগে তার প্রচণ্ড জ্বর হয়। টানা দুই দিন জ্বর ছিল। সাথে শ্বাসকষ্টও। এছাড়া মুখের স্বাদ চলে যাওয়া, নাকে কোন ধরনের ঘ্রাণ না পাওয়া, কাশিসহ করোনার বেশকিছু উপসর্গ ছিল। অক্সিমিটারে তার অক্সিজেন স্যাচুরেশন ৯০ এ নেমে এসেছিল। এই টেনশনে প্রেসারও হাই হয়ে যায়। তবুও তিনি হাসপাতালেও যাননি। আর নমুনা পরীক্ষার কথা মাথায়ও আনেননি। তবে নিয়মিত চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়েছেন। এখন তিনি অনেকটা সুস্থ। তবে হালকা কাশি আছে। ধীরে ধীরে শারীরিক দুর্বলতা কাটিয়ে উঠছেন। জানতে চাইলে তানভীর মাহমুদ পূর্বকোণকে জানান, দেশে যে হারে মানুষ আক্রান্ত হচ্ছে সবাইকে হাসপাতালে সেবা দেয়া এবং নমুনা পরীক্ষা করার মত সামর্থ আমাদের দেশের নেই। তাই আমি মনে করেছি, চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে বাসায় সেবা নেব। তাতে তেমন অসুবিধা হয়নি। তবে পরিবারের সদস্যদের বলে রেখেছিলাম, অক্সিজেন স্যাচুরেশন যদি ৯০ এর নিচে নেমে যায় তাহলে সাথে সাথে হাসপাতালে নেয়ার জন্য। আল্লাহ মাফ করেছেন। এখন অনেকটা সুস্থ আছি।

শুধু তানভীর মাহমুদ নয়, শহরে এবং গ্রামে এরকম অসংখ্য মানুষ আছে যাদের নমুনা পরীক্ষার প্রতি চরম অনীহা। ঘরে বসেই তারা চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে চিকিৎসা নিচ্ছেন। উপসর্গ দেখা দিলে চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে বাসায় থেকেই করোনা জয় করার সংখ্যা বাড়ছে।

ভুক্তভোগীদের অভিযোগ, নমুনা দেয়ার ১০ থেকে ১৫ দিন পরও রিপোর্ট না আসা, নমুনা কেন্দ্র থেকে সংক্রমণের শঙ্কা ও নমুনা প্রদানে ভোগান্তির কারণে অনেকেই এখন আগ্রহ হারিয়ে ফেলেছে। একাধিক রোগীর সাথে করোনাভাইরাসের নমুনা পরীক্ষায় এখন আর পূর্বের মত ভিড় দেখা যাচ্ছে না। মানুষ যে হারে জ্বরে আক্রান্ত হচ্ছে কিংবা অন্যান্য উপসর্গ দেখা যাচ্ছে সে হারে পরীক্ষা করাতে এখন আর নমুনা সংগ্রহ বুথে ছুটছে না। ফলে ভিড় বাড়ছে না নমুনা সংগ্রহ কেন্দ্রে, রোগী কমছে হাসপাতালে। তবে প্রতিদিনই গড়ে ২৫০ জনের মত করে আক্রান্ত হচ্ছে।

সিভিল সার্জন ডা. সেখ ফজলে রাব্বি বলেন, ‘নমুনা পরীক্ষার সংখ্যা কমছে না। বলা যায়, সবাই এখন করোনার উপসর্গ বিষয়ে অনেক সতর্ক ও সচেতন হয়েছেন। ফলে উপসর্গ দেখা দিলেই চিকিৎসকের পরামর্শে ওষুধ খাচ্ছেন। এ কারণে কেউ কেউ এখন আর পরীক্ষা করাচ্ছেন না। আমরা মনে করি, অহেতুক আতঙ্কিত হয়ে, তাড়াহুড়ো করে নমুনা পরীক্ষা না করে চিকিৎসকের পরামর্শ মেনে চলা উচিত। হাসপাতালে রোগী ভর্তির হার কমে গেছে। একটা সময় আইসিইউ’র অভাব নিয়ে যেভাবে পেনিক সৃষ্টি হয়েছিল তা এখন অনেকটাই প্রশমিত হয়েছে। জেনারেল হাসপাতালে গতকাল রোগী ছিল ১০১ জন। এখানে আরও প্রায় ৬০টি বেড খালি আছে। অন্যান্য হাসপাতালেও বেড খালি আছে। এটা চিকিৎসক, গণমাধ্যম, জনপ্রতিনিধিসহ সর্বস্তরের মানুষের প্রচারণার ফসল। রোগীরা বাসায় বসে চিকিৎসা নিচ্ছে। পাঁচ শতাংশ রোগীকেও হাসপাতালে ভর্তি দিতে হচ্ছে না। করোনা মোকাবিলায় এটা বিশাল একটা ইতিবাচক দিক’।
চট্টগ্রাম সিভিল সার্জন কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, গতকাল সকাল পর্যন্ত চট্টগ্রামে মোট আক্রান্ত হন ১০ হাজার ৪৪৭ জন। এরমধ্যে মহানগরে ৭ হাজার ২৮৬ জন ও উপজেলায় ৩ হাজার ১৯১ জন। করোনা আক্রান্ত হয়ে মারা যান ১৯৮ জন। এরমধ্যে মহানগরে ১৪০ জন ও উপজেলায় ৫৮ জন। চিকিৎসা নিয়ে সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরেছেন এক হাজার ২৬৫ জন। নতুনভাবে করোনা জয় করেছেন ৪৯ জন। চট্টগ্রামে প্রথম করোনা রোগী শনাক্ত হয় গত ৩ এপ্রিল। প্রথম করোনা আক্রান্ত হয়ে মারা যান ৯ এপ্রিল। গত এক মাসেই সংক্রমিত হয়েছেন সাড়ে ৬ হাজার মানুষ। সর্বশেষ ১৫ দিনে সংক্রমিত হন ৪ হাজারের বেশি । গত ৫ জুন আক্রান্তের সংখ্যা ছিল ৩ হাজার ৬৬৬ এবং এ সময় পর্যন্ত মোট মারা যান ৮৯ জন। গত ২০ জুন পর্যন্ত মোট আক্রান্ত হয়েছিলেন ৬ হাজার ৯৪ জন, মারা যান ১৩৯ জন।

পূর্বকোণ/এএ

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট