চট্টগ্রাম শুক্রবার, ২৯ মার্চ, ২০২৪

সর্বশেষ:

সিক্স মার্ডার রহস্যের কুলকিনারা নেই, আধিপত্যের লড়াইয়ে অশান্ত বান্দরবান

সন্ত্রাসপ্রবণ বাঘমারায় অফিস নেয়াই কাল হল সংস্কারপন্থীদের!

বান্দরবান সংবাদদাতা

৭ জুলাই, ২০২০ | ৮:৩৮ অপরাহ্ণ

বান্দরবান জেলা শহর থেকে অন্তত ১৭ কিলোমিটার দূরে বাঘমারা বাজার এলাকায় সংগঠনের অফিস নেয়াই কাল হল জনসংহতি সমিতির সংস্কারপন্থী গ্রুপের সদস্যদের। বাঘমারা, জামছড়ি, নাসালং পাড়া, আন্তাহা পাড়া, ক‍্যনাইজু পাড়া রাঙ্গামাটির রাজস্থলী সীমান্ত ঘেঁষা বান্দরবানের এসব এলাকা এমনিতেই সন্ত্রাসপ্রবণ। চাঁদাবাজি অপহরণ সন্ত্রাসী তৎপরতা প্রায় সময় এসব এলাকায় হয়ে থাকে। এসব এলাকায় দীর্ঘদিন ধরে আঞ্চলিক রাজনৈতিক দল জনসংহতি সমিতির মূল গ্রুপ সন্তু লারমা পক্ষের নিয়ন্ত্রণে ছিল।

গত দু’বছর ধরে ঘাঁটি গেড়ে বসে মগ লিবারেশন পার্টি নামে একটি সশস্ত্র গ্রুপ। স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতাদের বিরুদ্ধে মগ লিবারেশন পার্টিকে সহায়তার দানের অভিযোগও উঠে ওই সময়। আধিপত্য বিস্তার নিয়ে জনসংহতি সমিতি, মগ লিবারেশন পার্টি ও আওয়ামী লীগের মধ্যে ত্রিমুখী দ্বন্দ্বের জেরে কমপক্ষে ১৫ জন নিহত হয়।

সাম্প্রতিক সময়ে মগ লিবারেশন পার্টির তৎপরতা কিছুটা কমে আসলেও হঠাৎ করেই তৎপরতা শুরু হয় জনসংহতি সমিতির সংস্কারপন্থী গ্রুপের। গত মার্চে কমিটি গঠন করে বান্দরবানের সদর উপজেলার রাজবিলা ইউনিয়নের বাঘমারা এলাকায় তাদের কার্যক্রম শুরু হয়। প্রথমদিকে এ সংগঠনের সদস্যরা বান্দরবান শহরে অবস্থান নিলেও পরে বাঘমারা বাজারে একটি অফিস নিয়ে সেখানে তাদের কার্যক্রম শুরু করে। বাজারের অফিসে থেকে বাজার পাড়ার রতন তঞ্চঙ্গ্যার বাসায় খাওয়া-দাওয়া করতো সদস্যরা। খাগড়াছড়ি রাঙ্গামাটি থেকে বাঘমারায় নতুন বেশ কিছু সদস্যের আনাগোনায় আতঙ্কে ছিল এলাকার লোকজন। দুর্গম এলাকায় একটি রাজনৈতিক সংগঠনের অফিস কেন এই প্রশ্ন ছিল অনেকের মধ‍্যে।

স্থানীয়রা জানিয়েছেন, কিছুদিন আগে খাগড়াছড়ি থেকে বেশকিছু কেন্দ্রীয় নেতা ও সদস্য যোগ দেয় গ্রুপটিতে। আর এতেই ক্ষিপ্ত হয়ে উঠে জনসংহতি সমিতির সন্তু লারমা গ্রুপ। খাগড়াছড়ি ও রাঙ্গামাটি উভয় সংগঠনের দ্বন্দ্ব-সংঘাত এখন বান্দরবানে এসে পড়েছে। মঙ্গলবার সকালে একটি সশস্ত্র গ্রুপ বাঘমারা বাজারে রতন তঞ্চঙ্গ্যার বাড়িতে অতর্কিত হামলা চালিয়ে সংস্কারপন্থী গ্রুপের ৩ কেন্দ্রীয় নেতাসহ ৬ জনকে ব্রাশফায়ারে হত্যা করে। গুলিবিদ্ধ হয়ে আহত হয় সংগঠনের দুই সদস্যসহ তিনজন।

কিন্তু হঠাৎ কেন এই হামলা। এই প্রশ্ন তুলতে স্থানীয় জনপ্রতিনিধি সেম্প্রু মারমা ও খুশি কুমার তংচঙ্গা জানান, স্থানীয়রা রতন তঞ্চঙ্গ্যা ও তাদের সদস্যদের এই এলাকায় না থাকতে অনেকবারই বলেছিল। যেকোনো সময় হামলার শিকার হতে পারে এ ধরনের আশঙ্কার কথাও স্থানীয়রা বলেছিলেন তাদের। কিন্তু তারা কর্ণপাত না করায় হামলার ঘটনায় ছয়জন নিহত হয়েছে। এ হামলার জের আরো বড় ধরনের সংঘাতের জন্ম দিতে পারে বলে এখন আশঙ্কা করছেন স্থানীয়রা।

সংস্কারপন্থী গ্রুপের জেলা কমিটির সাধারণ সম্পাদক উবামং মারমা জানিয়েছেন, আমাদের সংগঠনের কার্যক্রম সহ্য হচ্ছিল না জনসংহতি সমিতির সন্তু গ্রুপের। তারা এর আগেও আমাদের হুমকি-ধমকি দিচ্ছিল।

বাঘমারা ও আশেপাশের এলাকায় সমর্থক বেশি থাকায় সেখানেই অফিসটি নেয়া হয়েছে বলে জানিয়ে তিনি বলেন, কিন্তু অফিস নেয়া হলেও হামলা করে নেতাকর্মীদের হত্যা এটা কোনোভাবেই মেনে নেওয়া যায় না।

এদিকে, ঘটনার জন্য সংস্কারপন্থী গ্রুপ জনসংহতি সমিতির সন্তু লারমার গ্রুপকে দায়ী করলেও এখনো সন্তু লারমা গ্রুপের পক্ষের কোনো বক্তব্য পাওয়া যায়নি।

জেলা পুলিশ সুপার জেরিন আখতার জানিয়েছেন, ধারণা করা হচ্ছে, এক পক্ষের হামলায় ঘটনাটি ঘটেছে। তবে পুলিশ ঘটনাটি খতিয়ে দেখছে।

 

 

 

 

পূর্বকোণ/মিনার-আরপি

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট