চট্টগ্রাম শনিবার, ২০ এপ্রিল, ২০২৪

সর্বশেষ:

করোনাযোদ্ধা শাহজাদা মিজানুর রহমান

করোনায় শবদেহের সারথি

মুহাম্মদ নাজিম উদ্দিন

৭ জুলাই, ২০২০ | ১:২১ অপরাহ্ণ

রাতের কোন এক সময়ে মারা যান এক ব্যক্তি। পরিবারের সদস্যরা আঁচ করতে পারেন সকালে। করোনা উপসর্গ নিয়ে মারা যাওয়ায় পাড়া-পড়শিরা ওই ঘরের আশপাশও ঘেঁষেনি। বিপাকে পড়েন পরিবারের সদস্যরা। পিতার মৃত্যুর খবর পেয়ে শহর থেকে ছুটে যায় ছেলে। পিতার কাছে যেতে সংকোচবোধ করেন সন্তান-সন্ততিরাও। এমন নির্মমতায় সকাল ১১টার দিকে লাশ দাফনের ডাক পড়ে পৌরসভার প্যানেল মেয়র শাহজাদা এস এম মিজানুর রহমানের।
তিনি বলেন, লাশ দীর্ঘক্ষণ পড়ে থাকার পর অবস্থা ভালো ছিল না। তড়িঘড়ি করে গোসল দেওয়া, কবর খনন ও জানাজা শেষ করে দাফন করতে হয়।
বোয়ালখালী উপজেলা ও পৌরসভায় করোনা শনাক্ত-করোনা উপসর্গ নিয়ে মারা যাওয়া ব্যক্তিদের লাশ দাফন ও সৎকার করে আসছেন তিনি। তিন মাস ধরে এ মহতী কাজে নিয়োজিত আছেন শাহজাদা মিজান। শুধু কী তাই! ত্রাণ বিতরণ থেকে শুরু করে বিনামূল্যে অক্সিজেন সেবা দিয়ে আসছেন। জনসেবামূলক এ কাজ করতে গিয়ে হয়েছেন গৃহত্যাগী। দূরে ছিলেন পরিবার-পরিজন থেকে।

প্যানেল মেয়র ও উপজেলা আওয়ামী লীগ নেতা মিজানুর রহমান বলেন, ‘ছোটকাল থেকে বাবার কাছে মানবকল্যাণ ও জনসেবা দেখে আসছি। শিখে আসছি। মানুষের সেবায় নিবেদিত ছিলেন আমার প্রয়াত বাবা হারুনুর রশিদ। তাঁর শিক্ষায় দীক্ষিত হয়েছি। বড় হয়েছি। ছাত্রজীবন থেকে ছাত্রলীগের রাজনীতির মাধ্যমে হাতেখড়ি। রাজনীতিতে আদর্শিক ও মানবকল্যাণের সোপান হিসেবে দেখে আসছি। তাই মানুষের কল্যাণে বাবার মতো নিজেকে সঁপে দিয়েছি।’
করোনা মহামারীর আগে করোনা আক্রান্ত ব্যক্তিদের বাড়ি লকডাউন, খাবার পৌঁছে দেওয়া, দেখভাল করা থেকে শুরু করে উপজেলা ও পৌর এলাকায় সব কাজে কাজি ছিলেন তিনি। উপজেলা প্রশাসনের সঙ্গে সম্পৃক্ত হয়ে করোনা সংক্রান্ত কাজে নিবেদিত ছিলেন তিনি। কখনো প্রশাসনের সঙ্গে, কখনো পুলিশের সঙ্গে রাত-বিরাতে ছুটতে হচ্ছে তাকে। করোনা সংক্রমণে মৃত ব্যক্তিদের লাশ দাফন-কাফন ও সৎকারের দায়িত্বও পড়ে তার কাঁধে। করোনা আক্রান্ত মৃত ব্যক্তিদের লাশ দাফন সংক্রান্ত উপজেলা পর্যায়ে সরকারিভাবে একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে। কমিটির সদস্যদের দিকে না তাকিয়ে তাকেই সারতে হয় লাশ গোসল থেকে শুরু করে দাফন-কাফন পর্যন্ত।

করোনা আক্রান্ত ও উপসর্গ নিয়ে মৃত ব্যক্তিদের লাশ দাফন বিষয়ে তিনি বলেন, ‘প্রথম দিকে চরম বেকায়দায় ছিলাম। করোনায় মারা গেলে আশপাশের মানুষ ভয়ে ঘর থেকে বের হতো না। দরজা বন্ধ করে দিত। লাশের গোসল ও দাফনে কাউকে পাওয়া যেত না। এখন সেই অবস্থা নেই। আমাদের সহায়তা করতে শরিক হয়েছে বোয়ালখালী উপজেলা গাউসিয়া কমিটির সদস্যরা। জানাজার ইমামতি থেকে শুরু করে লাশ দাফনের কাজে পারদর্শী গাউসিয়া কমিটির সদস্যরা। ছুটে এসেছে পূর্বাশার আলো। দুটি সংগঠনের সদস্যরা সওয়াবে উদ্দেশ্যে নির্বিঘ্নে কাজ করে যাচ্ছেন। ডাক পড়লে গভীর রাতেও ছুটে আসেন তারা। এখন মাইজভান্ডারী গাউসিয়া হক কমিটি ও চরণদ্বীপ দরবার শরিফের পক্ষেও লাশ দাফনে শরিক হতে আবেদন করেছেন।

প্রথম দিকে একটি লাশ দাফনে অভিজ্ঞতা তুলে ধরে তিনি বলেন, ‘রাত ২টায় নারায়ণগঞ্জ থেকে আসা একটি লাশ নিয়ে বিপাকে পড়ে যায়। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাসহ প্রশাসন ও পুলিশ প্রশাসনের লোকজন উপস্থিত ছিলেন। লাশের সঙ্গে ছিলেন দুই মহিলাসহ ৫ জন। খাটিয়া ধরার লোক পাওয়া যায়নি। লাশ দাফনের পর বাড়ি ঘরে যায়নি। ঢাকায় ফিরে যান।’

অসুস্থ ব্যক্তিদের অক্সিজেন সহায়তা নিয়েও ছুটে আসেন তিনি। ফোন করলেই পৌঁছে দিচ্ছে অক্সিজেন সিলিন্ডার। বিনামূল্যে দিয়ে যাচ্ছেন অক্সিজেন সেবা।
শাহজাদা মিজানুর রহমান বলেন, করোনা সংক্রমণের প্রথমে উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তার তত্ত্বাবধানে করোনা সংক্রমণে মৃত ব্যক্তি লাশ দাফন-সৎকারের বিষয়ে প্রশিক্ষণ কর্মশালা হয়। সেই অভিজ্ঞতা কাজে লাগিয়ে এখন লাশের গোসল ও দাফন কাজ করে যাচ্ছি।

পূর্বকোণ/এএ

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট