চট্টগ্রাম শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল, ২০২৪

সর্বশেষ:

প্রতি মাসে ক্ষতি দুই কোটি টাকার বেশি

‘বিশাল ক্ষতির’ মুখে বিনোদন কেন্দ্র

ইমরান বিন ছবুর

৭ জুলাই, ২০২০ | ১:০৫ অপরাহ্ণ

করোনার ছোবলে সারা দেশের ন্যায় বিশাল ক্ষতির মুখে পড়েছে নগরীর বিনোদন কেন্দ্রগুলো। প্রতিবছর যেখানে ঈদের দিন থেকে বিনোদন কেন্দ্রগুলোতে দর্শনার্থীদের উপচে পড়া ভিড় থাকতো, এবার সেখানে ছিল দর্শনার্থীশূন্য। নগরীর আগ্রাবাদ শিশু পার্ক, চিড়িয়াখানা, ফয়’স লেক, সি ওয়ার্ল্ড, স্বাধীনতা কমপ্লেক্স (মিনি বাংলাদেশ), কাজির দেউড়ি শিশু পার্ক- সবগুলো এখন বন্ধ। দীর্ঘদিন বন্ধ থাকায় পার্কের যন্ত্রাংশ (রাইড) ও মালামাল নষ্ট হয়ে যাচ্ছে বলে জানান কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। অন্যদিকে, এসব বিনোদন কেন্দ্রের প্রতিমাসে রক্ষণাবেক্ষণ বাবদ খরচ হচ্ছে এক কোটি টাকার বেশি এবং প্রতি মাসে দুই কোটি টাকার বেশি ক্ষতি হচ্ছে বলে জানান কর্তৃপক্ষ।

করোনার ছোবলে গত ১৮ মার্চ থেকে সরকারের নির্দেশনায় সারা দেশের ন্যায় চট্টগ্রামের সব বিনোদন কেন্দ্র বন্ধ ঘোষণা করা হয়। এরপর থেকে এখনো বন্ধ রয়েছে বিনোদন কেন্দ্রগুলো। কবে নাগাদ এসব খোলা হবে তা জানা নেই কারো। তবে ঈদুল আযহাকে সামনে নিয়ে সামাজিক দূরত্ব ও স্বাস্থ্যবিধি মেনে বিনোদন কেন্দ্রগুলো খুলে দেয়ার অনুরোধ করেছেন কর্তৃপক্ষ।

আগ্রাবাদ শিশু পার্ক। নগরীর অন্যতম বিনোদন কেন্দ্র। প্রতিদিন সকাল থেকে রাত পর্যন্ত শিশুসহ সব বয়সের দর্শনাথীদের পদচারণায় ভরপুর থাকতো। তবে এখনকার চিত্র সম্পূর্ণ উল্টো। এর কারণও সবার জানা। গত রবিবার সকাল ১১টার দিকে পার্কে প্রবেশ করে দেখা যায়, বড়শি দিয়ে মাছ ধরছেন দু’জন। কথা বলে জানা যায়, তাদের একজন আগ্রাবাদ শিশু পার্কের হিসাব রক্ষক মো. দেলোয়ার হোসেন, অন্যজন সিকিউরিটি সুপার ভাইজার নেসার উদ্দিন আহমেদ। পার্ক বন্ধ থাকায় বেকার সময় কাটাচ্ছেন বলে জানান তারা। সেখানে আরো কথা হয়, পার্কে গেমসের পরিচালক মো. জুয়েলের সাথে। তিনি জানান, করোনার প্রকোপ শুরু হওয়ার কয়েকদিন আগেও দু’টি দামি রাইড এনেছিলাম। এই অবস্থা যে হবে, তা কে জানতো? কয়েকদিন পর পর পার্কের স্পোর্টস রাইড ও যন্ত্রাংশ নিয়মিত ট্রায়াল দিতে হচ্ছে। দীর্ঘদিন বন্ধ থাকলে এসব নষ্ট হয়ে যাওয়ার আশংকা থাকে। পার্ক বন্ধ থাকায় প্রতিমাসে ৩০ লাখ টাকার বেশি ক্ষতি হচ্ছে বলে জানান তিনি।

একই দৃশ্য দেখা যায়, ফয়’স লেকে। সেখানে কর্মচারীদের অলস সময় পার করতে দেখা যায়। কেউ কেউ বসে আড্ডা দিচ্ছেন, কয়েকজন পার্কের ঘাস পরিষ্কার করছেন। কথা হলে ফয়’স লেকের মার্কেটিং অফিসার বিশ্বজিৎ ঘোষ জানান, প্রতিদিন প্রায় ৬০ জন কর্মচারীর জন্য খাওয়ার ব্যবস্থা করতে হচ্ছে। পার্ক বন্ধ থাকলেও রক্ষণাবেক্ষণ করতে হচ্ছে। এতে মাসে ব্যয় হচ্ছে প্রচুর টাকা। কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বেতন ও বিদ্যুৎ ও অন্যান্য খরচ মিলে মাসে প্রায় ৩০ লাখ টাকার বেশি খরচ হচ্ছে। তিনি আরো জানান, প্রায় তিন মাসের বেশি সময় মানুষ ঘরে বসে থাকতে থাকতে একগুয়েমি চলে এসেছে। প্রতিদিন দর্শনার্থীরা ফোন করে জানতে চাচ্ছেন, ফয়’স লেক কখন খোলা হবে। আমরা তাদের কোন তারিখ বলতে পারছি না। সরকারের কাছে আমাদের অনুরোধ, স্বাস্থ্যবিধি এবং সামাজিক দূরত্ব মেনে যাতে ঈদুল আযহার আগে বিনোদন কেন্দ্রগুলো খোলার অনুমতি দেয়া হয়।

স্বাধীনতা কমপ্লেক্স (মিনি বাংলাদেশ) এর পরিচালক হেলাল উদ্দিন জানান, সরকারের নির্দেশনা অনুযায়ী গত ১৮ মার্চ থেকে পার্ক বন্ধ ঘোষণা করা হয়। স্টাফদের বেতন ও বিদ্যুৎ বিল মিলে প্রতি মাসে আমাদের প্রায় ২৫ লাখ টাকার বেশি খরচ হচ্ছে। এই বাইরে রয়েছে সরকারের লিজ এর কিস্তির টাকা। এভাবে চলতে থাকলে তো, আমরা দেউলিয়া হয়ে যাবো। আমাদের কথা চিন্তা করে সরকারের উচিত লিজের কিস্তির টাকা মওকুফ করা। অন্যথায়, আমাদের অস্তিত্ব থাকবে না।

অন্যদিকে, বাংলাদেশ এসোসিয়েশন অব এমিউজম্যান্ট পার্কস এন্ড এট্রাকশনস (বাপা) সম্প্রতি একটি প্রেস বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে জানায়, স্বাস্থ্য সুরক্ষার সব নিয়ম মেনে সীমিত পরিসরে পার্কগুলো খুলতে ইতোমধ্যে প্রয়োজনীয় প্রস্তুতি নেয়া হয়েছে। সরকারি নির্দেশনা পাওয়া মাত্রই এসব পার্ক খুলতে পারবেন বলে জানান সংগঠনটি। এছাড়া, দীর্ঘদিন পার্ক ও বিনোদন কেন্দ্র বন্ধ থাকায় রাইডগুলো নষ্ট হয়ে যাওয়ার আশংকা করছেন তারা। তাই পার্ক ও বিনোদন কেন্দ্র খোলার ক্ষেত্রে সরকারের নির্দেশনার জন্য অপেক্ষা করছেন মালিক ও সংগঠন।

পূর্বকোণ/এএ

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট