চট্টগ্রাম মঙ্গলবার, ১৬ এপ্রিল, ২০২৪

সর্বশেষ:

করোনায় সাধারণ ছুটিতে জমে গেছে বকেয়া বিল, যা অনলাইনে কিস্তিতে নিচ্ছে না # ওয়াসা, পিডিবি’তে রয়েছে কিস্তিতে পরিশোধের সুযোগ

বিপাকে কর্ণফুলী গ্যাসের গ্রাহকেরা

মোহাম্মদ আলী

৫ জুলাই, ২০২০ | ৪:১৪ অপরাহ্ণ

বিল প্রদানে বিপাকে পড়েছেন কর্ণফুলী গ্যাস কোম্পানি লিমিটেডের গ্রাহকরা। করোনার কারণে সাধারণ ছুটিতে বিল দিতে না পেরে তারা এই হয়রানির শিকার হচ্ছেন।

গ্রাহকদের অভিযোগে জানা গেছে, করোনার কারণে এপ্রিল-মে মাসে গ্যাস বিল পরিশোধ করতে পারেননি অধিকাংশ গ্রাহক। এ কারণে তাদের বকেয়া বিলের পরিমাণ বেড়ে যায়। জুনে তারা নিয়মিত বিল পরিশোধ করতে গেলে ব্যাংক তাদের থেকে বিল নেয়নি। ওখান থেকে জানিয়ে দেওয়া হয়, বকেয়াসহ সব বিল এক সাথে পরিশোধ করতে হবে। কিস্তিতে পরিশোধের সুযোগ নেই। এরপর ভুক্তভোগী গ্রাহকরা প্রতিকার পেতে কর্ণফুলী গ্যাস কোম্পানিতে গেলে সেখান থেকে একই কথা বলেন সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা। কর্ণফুলী গ্যাস কোম্পানি লিমিটেডের কর্মকর্তারা জানান, অনলাইনে কিস্তিতে বিল পরিশোধের সুযোগ নেই। পূর্ববর্তী মাসের বকেয়াসহ এক সাথে বিল পরিশোধ করতে হবে। অন্যথায় বিল গ্রহণ করা সম্ভব নয়। এ কারণে হয়রানিতে পড়ে যান গ্রাহকরা।

নগরীর বিভিন্ন এলাকায় প্রি-পেইড মিটার স্থাপন করা হয়েছে। কিন্তু মিটার স্বল্পতার কারণে বিপুল সংখ্যক গ্রাহক প্রি-পেইড মিটার পাননি। যেসব গ্রাহক প্রি-পেইড মিটার পাননি তাদের প্রতি মাসের ২০ তারিখের মধ্যে পূর্ববর্তী মাসের বিল প্রদান বাধ্যতামূলক। ব্যর্থ হলে সবগুলো বকেয়া বিল এক সাথে প্রদান করতে হবে। বিল প্রদানে হয়রানির শিকার হওয়া এমনি এক গ্রাহক নগরীর চান্দগাঁও আবাসিক (বি ব্লক) কল্যাণ সমিতির সাংগঠনিক সম্পাদক ও ১০ নং রোডের বাসিন্দা তৌফিক হোসেন। দৈনিক পূর্বকোণকে তিনি অভিযোগ করে বলেন, ‘করোনার কারণে মানুষের স্বাভাবিক জীবন ও অর্থনৈতিক অবস্থা চরম হুমকির মুখে পড়েছে। এই সময়ে কর্ণফুলী গ্যাস কোম্পানি লিমিডেটের এনালগ মিটার গ্রাহকরা তাদের বকেয়া বিল কিস্তিতে পরিশোধের চেষ্টা করে ব্যর্থ হচ্ছেন। গ্যাস কোম্পানির এককথা- অনলাইন পদ্ধতিতে কিস্তিতে বিল পরিশোধের সুযোগ নেই। যদি কোন গ্রাহকের পূর্বের মাসের বিল বকেয়া থাকে, তবে তা একই সাথে পরিশোধ । ৭ম পৃষ্ঠার ৩য় ক. করতে হবে’।

তৌফিক হোসেন বলেন, ‘বকেয়া বিল পরিশোধ করতে গিয়ে আমি হয়রানির শিকার হচ্ছি। কর্ণফুলী গ্যাস কোম্পানি লিমিটেডের কর্মকর্তাদের কাছে আবেদন করেও কোন প্রতিকার পাইনি। যদি আমাকে কয়েক কিস্তিতে বকেয়া বিল পরিশোধের সুযোগ দিত তাহলে আমি সব বিলই পরিশোধ করতে পারতাম। কিন্তু অনলাইনের অজুহাত দেখিয়ে তারা আমার কাছ থেকে কিস্তিতে বিল নিচ্ছে না’।

তিনি বলেন, চান্দগাঁও আবাসিক এলাকার সব গ্রাহক প্রি-পেইড মিটার পাননি। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক অনেক বাড়ির মালিক করোনার কারণে বকেয়া গ্যাস বিল পরিশোধে তাদের অসহায়ত্বের কথা তুলে ধরেন। গত মার্চ থেকে সাধারণ ছুটি ও লকডাউনের কারণে ভাড়াটিয়া না থাকায় গ্যাস বিল সময় মত পরিশোধ করতে পারেননি। যদি কিস্তির সুযোগ থাকত তবে সারচার্জ দিয়েও মাসে মাসে কিস্তির মাধ্যমে তা পরিশোধে আগ্রহ দেখাতো।

তৌফিক হোসেনের মতো একই অভিযোগ করেছেন আগ্রাবাদ চৌমহনী খান বাড়ির বাসিন্দা মারুফ হোসেন। তিনি জানান, চট্টগ্রামে অন্যান্য সরকারি সেবা প্রদানকারী প্রতিষ্ঠানসমূহ বিশেষ করে ওয়াসা, পিডিবি’তে কিস্তিতে বকেয়া পরিশোধের সুযোগ থাকলেও কর্ণফুলী গ্যাস কোম্পানিতে নেই। তাদের অজুহাত অনলাইনে কিস্তিতে বকেয়া পরিশোধের সুযোগ নেই। অথচ এই অনলাইন পদ্ধতি মানুষের সৃষ্ট। ইচ্ছে করলে কিস্তিতে বকেয়া পরিশোধ পদ্ধতি তৈরি করা কোন ব্যাপারই না। কিস্তির সুযোগ থাকাটা অত্যাবশ্যকীয়। কারণ গ্রাহকদের সদিচ্ছার কারণে বিল পরিশোধ হয়। বিশেষ সময়ে বিশেষ বিবেচনায় গ্রাহকবান্ধব করা উচিত। এতে সরকারও যেমন লাভবান হয়, তেমনি গ্রাহকরাও বকেয়া বিল পরিশোধে উৎসাহিত হবে’।

গ্রাহকদের অভিযোগে জানা গেছে, করোনার বর্তমান পরিস্থিতিতে চাকরি কিংবা ব্যবসা হারিয়ে নগরীর বিভিন্ন এলাকায় যারা ভাড়া থাকতেন তাদের অনেকেই বাসা ছেড়ে গ্রামে চলে যাচ্ছেন। অনেক এলাকায় বাড়িতে ঝুলছে ‘ঘর ভাড়া দেয়া হবে’ সাইনবোর্ড। এ অবস্থায় কিস্তিতে বিল পরিশোধের সুযোগ থাকলে তবে সারচার্জ দিয়ে হলেও মাসে মাসে কিস্তির মাধ্যমে তা পরিশোধে আগ্রহ দেখাতো।

এদিকে, অনলাইনে কিস্তিতে বিল পরিশোধের সুযোগ নেই গ্রাহকের এমন অভিযোগের বিষয়টির জানতে শনিবার কর্ণফুলী গ্যাস কোম্পানির ব্যবস্থাপনা পরিচালক খায়েজ আহম্মদ মজুমদার এবং ম্যানেজার (অর্থ ও হিসাব) মো. শাহ জামানের মোবাইলে ফোন করা হলে তারা রিসিভ করেননি। ফলে তাদের মন্তব্য জানা যায়নি।

পূর্বকোণ/ এম আলী-এস

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট