চট্টগ্রাম শনিবার, ২০ এপ্রিল, ২০২৪

সর্বশেষ:

স্লুইস গেট নির্মাণে শম্বুকগতি # চাক্তাই-খাতুনগঞ্জে জলাবদ্ধতার শঙ্কা

এবারের বর্ষা কাঁদাবে, বর্ষা ভাসাবে!

মুহাম্মদ নাজিম উদ্দিন

৪ জুলাই, ২০২০ | ৮:২৭ অপরাহ্ণ

কর্ণফুলী নদী ও রাজাখালী খালের মোহনায় স্লুইস গেট নির্মাণে ধীরগতির কারণে জলাবদ্ধতা আতঙ্কে রয়েছে চাক্তাই-খাতুনগঞ্জের ব্যবসায়ীরা। সিডর ও আইলা ঘূর্ণিঝড়ে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছিল এ বাণিজ্যপাড়া।

ব্যবসায়ী নেতাদের অভিমত, চাক্তাই-রাজাখালী খাল হচ্ছে চট্টগ্রাম নগরের পানি প্রবাহের প্রধান খাল। স্লুইস গেট নির্মাণের ধীরগতির কারণে দীর্ঘদিন ধরে খাল দুটির মোহনা আটকে রয়েছে। চলতি বর্ষায় পানি চলাচলে বাধা পেয়ে শুধু চাক্তাই-খাতুনগঞ্জ নয়, পুরো নগরী ডুবে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। দীর্ঘদিন ধরে চাক্তাই ও রাজাখালী খাল নিয়ে দখল-বেদখল চলে আসছে। অবৈধ দখলদারের তালিকায় রয়েছে চসিকসহ অন্তত ৪৬ জন।

চট্টগ্রাম শহরের জলাবদ্ধতার অন্যতম প্রধান কারণ হচ্ছে খাল দুটি দখল ও ভরাটে সরু হয়ে যাওয়া। এতে পানি প্রবাহ বাধাগ্রস্ত হয়ে খালের দুই তীর, বাণিজ্যপাড়া চাক্তাই-খাতুনগঞ্জ এবং নগরীর বড় অংশ জলাবদ্ধতায় ডুবে যায়। দেখা যায়, চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (সিডিএ) নগরীর জলাবদ্ধতা নিরসনে মেগাপ্রকল্পের আওতায় খাল দুটিতে  স্লুইস গেট নির্মাণ করা হচ্ছে। দীর্ঘদিন ধরে নির্মাণ কাজ চলে আসলেও বেইস ঢালাইয়ের কাজ হয়নি। স্থানীয়দের অভিযোগ, কাজের ধীরগতির কারণে ভোগান্তি বাড়বে নগরবাসীর। চাক্তাই-খাতুনগঞ্জ আড়তদার ও ব্যবসায়ী সমিতির সাধারণ সম্পাদক মো. মহিউদ্দিন বলেন, স্লুইস গেটের কাজ চলছে ধীরগতিতে। দুই বছর ধরে খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে। এতে নৌ-বাণিজ্য ব্যাহত হচ্ছে। চলতি বর্ষায় জলাবদ্ধতা আতঙ্কে রয়েছেন ব্যবসায়ীরা। নগরীর বিভিন্ন খালের পানি প্রবাহ হয় খাল দুটি দিয়ে। মোহনায় পানি চলাচল বাধাগ্রস্ত হলে ডুবে যাবে চাক্তাই-খাতুনগঞ্জ। ব্যবসায়ীরা জানায়, গত তিন-চার বছর আগে জলাবদ্ধতায় এ বাণিজ্যপাড়ার ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। ডুবে নষ্ট হয়েছে কোটি কোটি টাকার পণ্য। এরপর থেকে জলাবদ্ধতারোধ করার জন্য আন্দোলন-সংগ্রাম করে আসছেন ব্যবসায়ীরা। খাল দুটিতে স্লুইস গেট নির্মাণের দাবি ছিল তাদের।

চাক্তাই-খাতুনগঞ্জ আড়তদার ও ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি মো. জাহাঙ্গীর আলম পূর্বকোণকে বলেন, ‘খাল দুটি ভরাট ও সরু হয়ে যাওয়ায় প্রতি বর্ষায় জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়। ব্যবসায়ীদের কোটি কোটি টাকার পণ্য নষ্ট হয়ে যাওয়ার পর সিটি করপোরেশন স্থানীয় সড়কগুলো উঁচু করেছে। এতে দু-এক বছর পর্যন্ত জলাবদ্ধতা থেকে অনেকটা রেহাই পাওয়া যাচ্ছে। তবে, চলতি বছর ফের আতঙ্কে রয়েছেন ব্যবসায়ীরা। কারণ নগরীর পানি প্রবাহের প্রধান মাধ্যম চাক্তাই ও রাজাখালী খাল অনেকটা বন্ধ। স্লুইস গেট নির্মাণ কাজে ধীরগতির কারণে পানি চলাচল ব্যাহত হয়ে বাণিজ্যপাড়া ডুবে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। দেখা যায়, জলাবদ্ধতা থেকে রেহাই পেতে চাক্তাই, খাতুনগঞ্জসহ আশপাশের সব দোকানের সামনে আড়াই থেকে তিন ফুট উচ্চতার দেয়াল দেয়া হয়েছে। তিন-চার বছর আগে এই দেয়াল দেওয়া হয়েছে বলে জানান ব্যবসায়ীরা। সিডর ও আইলা এবং বিভিন্ন ঘূর্ণিঝড়ে জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়ে কোটি কোটি টাকার পণ্য নষ্ট হয়েছিল ব্যবসায়ীদের। এরপর থেকে দেয়াল নির্মাণ করে দিয়েছেন ব্যবসায়ীরা।

স্থানীয় কাউন্সিলর হাজী নূরুল হক বলেন, ‘সিটি করপোরেশনের পক্ষ থেকে চাক্তাই-খাতুনগঞ্জ, আসাদগঞ্জ ও আশপাশের সব সড়ক উঁচু ও পাকাকরণ করা হয়েছে। এতে দোকানে পানি ঢোকা অনেকটা লাঘব হচ্ছে। জলাবদ্ধতা থেকেও মুক্তি মিলছে। কিন্তু রাজাখালী খালের তীরে স্লুইস গেট নির্মাণে ধীরগতির কারণে এবার জলাবদ্ধতার আশঙ্কা সৃষ্টি হয়েছে। অগ্রাধিকার ভিত্তিতে দ্রæত কাজ শেষ করার জন্য অনুরোধ করেছিলাম। তারপরও কাজ চলছে শম্বুকগতিতে। জানা যায়, লকডাউনের পর নির্মাণ কাজ অনেকটা বন্ধ ছিল। এখনো কাজের গতি নেই। এতে ভোগান্তি বাড়ার আশঙ্কা দিন দিন প্রকট হচ্ছে। ব্যবসায়ীদের অভিযোগ, চাক্তাই ও রাজাখালী খালে স্লুইস, সংস্কার কাজের ধীরগতির কারণে নৌবাণিজ্য ব্যাহত হচ্ছে। হাতিয়া, নোয়াখালী, স›দ্বীপসহ বিভিন্ন চরাঞ্চলে এখান থেকে ভোগ্যপণ্যসহ নানা পণ্য পরিবহন হয় নৌপথে। খালের মোহনা সরু হয়ে যাওয়ার পর ব্যবসা-বাণিজ্য ব্যাহত হচ্ছে। অনেকটা জোয়ারনির্ভর হয়ে পড়েছে। এছাড়াও খালের তীর দখল করে গড়ে ওঠেছে বরফকল ও হিমাগার এবং মৎস্য অবতরণকেন্দ্র। এ খাল দুটি হচ্ছে নগরীর পানি প্রবাহের প্রধান মাধ্যম। শুধু চাক্তাই রাজাখালী নয়, নগরীর অর্ধেক অংশ ডুবে যাওয়ার আশঙ্কা করছেন এলাকাবাসী।

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট