চট্টগ্রাম বুধবার, ২৪ এপ্রিল, ২০২৪

সর্বশেষ:

আক্রান্ত ও মৃত্যু বেড়েই চলেছে

চট্টগ্রামে নব্বই দিনে শনাক্ত নয় হাজার ছুঁইছুঁই

ইমাম হোসাইন রাজু

২ জুলাই, ২০২০ | ১:৩৭ অপরাহ্ণ

করোনাভাইরাসের সংক্রমণ শনাক্তের নব্বই দিন পার করলো চট্টগ্রাম। ইতোমধ্যে গেল নব্বই দিনে আক্রান্তের সংখ্যা নয় হাজার ছুঁইছুঁই। কিন্তু সংক্রমণ রোধ কিংবা আক্রান্তের গতি কমার দৃশ্য এখন পর্যন্ত চোখে পড়ছে না চট্টগ্রামে। নেই তেমন কোন সুখবরও। বরং দিন গড়াতেই অবনতি হচ্ছে পরিস্থিতির। বাড়ছে আক্রান্তের সংখ্যা ও মৃত্যুও। কঠিন হয়ে পড়ছে বন্দর নগরী।

এমন পরিস্থিতিতে অনেকটাই উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন স্বয়ং স্বাস্থ্য বিভাগও। আর জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা বলছেন, করোনার গতি রোধ এবং মানুষের মাঝে এ সচেতনতা বৃদ্ধি না বাড়লে সামনের দিনগুলোতে আরও ভয়ঙ্কর হতে পারে এ সংক্রমণ। এছাড়া স্বাস্থ্য সংশ্লিষ্টদের দৃশ্যত কোন উদ্যোগ কাজে না লাগানোর কারণেই এমন খেসারত দিতে হচ্ছে বলেও অভিযোগ তাদের। তাই স্বাস্থ্য বিভাগসহ সকলকে এ বিষয়ে আরও বেশি সচেতন হওয়ার পরামর্শ বিশেষজ্ঞদের।
এদিকে, শনাক্তের নব্বইতম দিনে গতকাল বুধবারও আক্রান্ত হয়েছেন সাড়ে তিনশ’র অধিক মানুষ। এরমধ্যে মোট আক্রান্তের সাড়ে পাঁচ হাজার অধিক মানুষ আক্রান্ত হয়েছেন শুধুমাত্র গেল জুন মাসেই। অর্থাৎ শুধুমাত্র জুন মাসেই ৬৩ দশমিক ৯৫ শতাংশ করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন। অন্যদিকে, আক্রান্তের হার যেমন বাড়ছে, তেমনি মৃত্যুর সংখ্যাও কমছে না। বরং সেটিও পাল্লা দিয়ে বাড়ছে। যদিও এমন খারাপ খবরের মধ্যেও সুখবর রয়েছেন। ইতোমধ্যে করোনায় আক্রান্তের প্রায় ১৩ শতাংশ সুস্থ হয়েছেন। আর স্বাস্থ্য বিভাগ বলছে, সামনের দিনগুলোতে সুস্থতার হার আরও বৃদ্ধি পাবে।

চট্টগ্রাম জেলা সিভিল সার্জন কার্যালয়ের প্রাপ্ত তথ্য বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, চট্টগ্রামে প্রথম করোনায় আক্রান্ত ব্যক্তি শনাক্ত হয় গত ৩ এপ্রিল। এরপর থেকেই ধীরে ধীরে আক্রান্তের সংখ্যা বৃদ্ধি পেতে থাকে। যা বর্তমানে প্রায় নয় হাজারের দ্বারপ্রান্তে। এরমধ্যে পুরো এপ্রিল মাসে শনাক্ত হয়েছেন শুধুমাত্র ৭২ জন। কিন্তু মে মাসে তা তিন হাজার ছাড়িয়ে যায়। দুই মাসে চট্টগ্রামে করোনায় আক্রান্ত রোগী ছিল ৩ হাজার ১৯১ জন। তবে দুইমাসের চেয়ে দ্বিগুণের অধিক বৃদ্ধি পেয়েছে শুধুমাত্র বিদায়ী জুন মাসেই। অর্থ্যাৎ গেল জুন মাসেই আক্রান্ত হয়েছেন ৫ হাজার ৬৬১ জন। যা মোট আক্রান্তের ৬৩ দশমিক ৯৫ শতাংশ। হিসেবে দেখা যায় মে মাসের তুলনায় জুন মাসে আক্রান্তের সংখ্যা ২৮ দশমিক ৭২ শতাংশ বেড়েছে।

আক্রান্ত নয়, মৃত্যুর সংখ্যাও বিশ্লেষণে ভাল খবর নেই। বরং দিন গড়াতেই তাও বৃদ্ধি পাচ্ছে। গতকাল বুধবার পর্যন্ত স্বাস্থ্য বিভাগের তথ্যে মৃত্যুর সংখ্যা ছিল ১৭৮ জনের। এরমধ্যে ৯৯ জনেরই মৃত্যু হয়েছে গেল জুন মাসে। যা মোট মৃত্যুর ৫৫ দশমিক ৬১ বা অর্ধেকের চেয়ে বেশি। তার আগের মাস মে’তে মৃত্যু হয় ৭৩ জনের। সংক্রমন ধরা পড়ার প্রথম মাস এপ্রিলে মৃত্যু হয় মাত্র ৬ জনের। অর্থ্যৎ মে মাসের তুলনায় জুন মাসে মৃত্যুর সংখ্যা বেড়েছে ১৪ দশমিক ৬ শতাংশ।

স্বাস্থ্য সংশ্লিষ্টরা বলছেন, করোনার প্রাদুর্ভাব শুরু হওয়ার পর থেকেই জুন মাসকে করোনার পিক সময় ধরা হয়। যার কারণেই জুনে এসে আক্রান্ত মৃত্যুর সংখ্যাটা বেড়েছে। তবে এখন যদি এ সংক্রমণ রোধে কঠোর পদক্ষেপ না নেওয়া হয় তাহলে সামনের দিনগুলোতে পরিস্থিতি মহামারী ধারণ করবে।
করোনার পরিস্থিতি নিয়ে জনস্বাস্থ্য রক্ষা কমিটির আহ্বায়ক মুক্তিযোদ্ধা ডা. মাহফুজুর রহমান পূর্বকোণকে বলেন, ‘শুরু থেকেই এ ভাইরাসটি নিয়ন্ত্রণের কোন কার্যত উদ্যোগ কাজে লাগাতে পারেনি স্বাস্থ্য বিভাগ। তাদের কিছু এলোমলো সিদ্ধান্তের কারণে এ ভাইরাসটি ছড়িয়ে পড়ছে। এরমধ্যে লকডাউন ও সর্বশেষ রেড জোন ঘোষণার করেও কাজে লাগাতে পারেনি। এটি শুধুমাত্র স্বাস্থ্য বিভাগেরও একার কাজ নয়, প্রশাসনেরও দৃশ্যত কোন কার্যক্রম চোখে পড়েনি আজও। চিকিৎসা সুবিধাও যেমন থাকার দরকার ছিল, তা নেই। তাই দ্রুত সময়ের মধ্যে চিকিৎসা ব্যবস্থায় উন্নয়নের পাশাপাশি সামাজিক সংক্রমণ রোধে কার্যত লকডাউন নিশ্চিত করতে হবে। তাহলে এ সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে কিছুটা হলেও উন্নতি হবে বলে মনে করেন প্রবীণ এ চিকিৎসক।’

এমন অবস্থায় স্বাস্থ্য বিভাগ থেকে একাধিক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হচ্ছে জানিয়ে চট্টগ্রাম জেলা সিভিল সার্জন ডা. সেখ ফজলে রাব্বি পূর্বকোণকে বলেন, ‘শুরু থেকেই চিকিৎসা সেবা নিশ্চিতে স্বাস্থ্য বিভাগ কাজ করে যাচ্ছে। যদিও মাঝখানে কিছুটা সমস্যা ছিল, তবে সেটিও ধীরে ধীরে সমাধান করা হচ্ছে। সংক্রমন রোধে জোন ভিত্তিক ঘোষণা করা হয়েছে। সামনে এমন একাধিক পরিকল্পনাও গ্রহণ করা হবে। তবে স্বাস্থ্য বিভাগ চাইলেও সংক্রমন রোধ করতে পারবে না, এটি প্রতিটি ব্যক্তি, পরিবার ও সামাজিকভাবে সকলকে সচেতন হতে হবে। তাহলেই এ সংক্রমণ থেকে বাঁচা যেমন সম্ভব হবে, তেমনি নিয়ন্ত্রণও করা যাবে।’
পূর্বকোণ/এএ

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট