চট্টগ্রাম বৃহষ্পতিবার, ২৫ এপ্রিল, ২০২৪

সর্বশেষ:

ডাকাতির তদন্ত করতে গিয়ে মিলল ৬ ছিনতাইকারীর খোঁজ

‘এতিমদের টাকা খাওয়া ঠিক হয়নি’

নাজিম মুহাম্মদ

১ জুলাই, ২০২০ | ৭:২৬ অপরাহ্ণ

নিরাপদে থাকতে লুন্ঠিত অর্থ থেকে ৫০ জন এতিমকে এক বেলা খাবারের মানত করেছিলো ডাকাত দল। পাঁচ লাখ টাকা লুন্ঠনের পর দুই ডাকাত সদস্যকে ১০ হাজার টাকা দেয়া হয় এতিমদের খাওয়ানোর জন্য। ডাকাতির ঘটনার পরদিন দুুপুরে আমানত শাহ মাজারে ৫০ জন এতিমকে খাবারের পেছনে তিন হাজার টাকা খরচ করে সাত হাজার টাকা পকেটে রেখে দেয় ডাকাত দলের অন্যতম সদস্য দক্ষিণ জেলা তাঁতী লীগের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি মাসুদুর রহমান মাসুদ ও পেশাদার ছিনতাইকারি কামাল হোসেন। পুলিশের হাতে ধরা পড়ার পর মাসুদের উপলব্ধি এতিমদের টাকা খাওয়া ঠিক হয়নি। এতিমের সাত হাজার টাকা পকেটে না রাখলে হয়তো পুলিশের হাতে ধরা পড়তো না। অভিশাপ লেগেছে।
লকডাউনে গত দুইমাসে নগরীতে ঘুরে ঘুরে ডাকাতি করছিলো ছয় সাতজন মিলে। বেশ ভালোই চলছিলো দিনকাল। ডাকাতদলে সম্মানজনক অবস্থানে ছিলো দক্ষিণ জেলা তাঁতী লীগ নেতা মাসুদ। ইতিমধ্যে নগরীর মুরাদপুর, টেক্সটাইল মোড় ও রুবি গেইট এলাকায় তিনটি ডাকাতির ঘটনার পরও তারা ফুরফুরে মেজাজে নগরীতে ঘুরছিলো। ওইসব ডাকাতির ঘটনা পুলিশ তেমন আমলে নেয়নি। গত ১৬ জুন দুপুরে জমিয়তুল ফালাহ মসজিদের পশ্চিম গেইটে সংগঠিত ডাকাতির ঘটনায় ৫ লাখ টাকা পায় তারা। কথা ছিলো পুলিশের হাতে বাঁচতে ১০ হাজার টাকা খরচ করে আমানত শাহ মাজারে এতিমদের একবেলা খাবার খাওয়াবে। ডাকাতদলের সদস্য মাসুদ ও কামাল হোসেনকে ডাকাতির টাকা থেকে ১০ হাজার টাকাও দেয়া হয়। তারা পরদিন দুপুরে আমানত শাহ মাজারে গিয়ে তিন হাজার টাকা খরচ করে এতিমদের এক বেলা খাবার খাওয়ায়। বাকী সাত হাজার টাকা পকেটে রেখে দেয়।
গত ১৬ জুন দুপুরে কোতোয়ালী থানার জমিয়তুল ফালাহ মসজিদ গেইটের পশ্চিম পাশে একটি সিএন্ডএফ এজেন্টের ম্যানেজারের কাছ থেকে ৫ লাখ টাকা ছিনতাই করে আটজনের একদল ডাকাত। গত ২৬ জুন রাতে ছয় ডাকাত সদস্য ধরা পড়ে। উদ্ধার করা হয় ডাকাতির ৫০ হাজার টাকা। গ্রেপ্তারের পরদিন ডাকাতির ঘটনায় জড়িত থাকার কথা স্বীকার করে আদালতে জবানবন্দি প্রদান করেন এরশাদ। ডাকাতদলের বাকী ছয়সদস্য মাসুদুর রহমান মাসুদ, মোক্তার হোসেন, মো. সাদ্দাম, কামাল হোসেন ও শের আলিকে তিন দিনের রিমান্ডে জিজ্ঞাসাবাদের অনুমতি দেয় বিজ্ঞ আদালত।
মামলার তদন্ত কর্মকর্তা কোতোয়ালী থানার পরিদর্শক মো. মহসিন জানান,জিজ্ঞাসাবাদ শেষে পাঁচজনকে গতকাল মঙ্গলবার আদালতে হাজির করা হয়েছে। ডাকাতির ঘটনায় জড়িত থাকার স্বীকার করে আদালতে স্বীকারোক্তিমুলক জবানবন্দি দিয়েছে মাসুদ।
মোটরসাইকেল ভাড়া ৭০ হাজার : পুলিশের জিজ্ঞাসাবাদে গ্রেপ্তার ডাকাতদলের সদস্য কামাল হোসেন জানান, ডাকাতির ঘটনার পর সবাই আতুরার ডিপো মাসুদের বোনের নির্মাণাধীণ ভবনে যায়। সেখানে লুন্ঠিত টাকা ভাগভাটোয়ারা করে। এরমধ্যে নেতা হিসাবে মাসুদকে দেয়া হয় এক লাখ ২০ হাজার টাকা। মাসুদ যে মোটরসাইকেলটি ডাকাতির ঘটনায় ব্যবহার করেছে সেটির ভাড়া নিয়েছে ৭০ হাজার টাকা, বাকী টাকার মধ্যে এরশাদ ৫০হাজার, সাদ্দাম ২০ হাজার, মোক্তার ৫০ হাজার, কামাল হোসেন ৫০ হাজার, শের আলি ১০ হাজার ও শাহাবউদ্দিন (পলাতক) ৭০ হাজার টাকা নেয়। এরমধ্যে ৫০ হাজার টাকা উদ্ধার করে পুলিশ।
ডাকাতির টাকায় ঘরভাড়া : লকডাউনে গত দুইমাসে আরো বেশ কয়েকটি ডাকাতির ঘটনায় জড়িত থাকার কথা স্বীকার করে গতকাল মঙ্গলবার আদালতে স্বীকারোক্তিমুলক জবানবন্দি দিয়েছেন মাসুদ । মাসুদ বলেন, জমিয়তুল ফালাহ মসজিদের পশ্চিম গেইটে সড়কে ডাকাতির লুন্ঠিত পাঁচ লাখ টাকার মধ্যে ভাগে পাওয়া টাকা থেকে ৪৪ হাজার টাকা ঘর ভাড়া দিয়েছেন। বাকী টাকা দিয়ে কয়েকজনের দেনা শোধ করেছেন। এরআগেও চলতি মাসের ৯জুন বায়েজিদ অক্সিজেন ক্যান্টনমেন্ট পাবলিক স্কুলের সামনে, গতমাসের শেষের দিকে রুবি গেইটে, মুরাদপুরে সংগঠিত একই কায়দায় তিনটি ডাকাতির ঘটনায় জড়িত ছিলেন। প্রত্যেকটি ঘটনায় গ্রেপ্তার হওয়া সবাই ছিলেন।

 

পূর্বকোণ / আরআর

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট