চট্টগ্রাম শনিবার, ২০ এপ্রিল, ২০২৪

সর্বশেষ:

মাসের শেষে দু’তিনদিন ভ্যানচালকদের যেন ‘ঈদ’

মরিয়ম জাহান মুন্নী

১ জুলাই, ২০২০ | ৬:৩২ অপরাহ্ণ

করোনার এ মহাদুর্যোগে অনেকেই দীর্ঘদিন যাবত বেকার। তেমনি বেকার ভ্যানচালকরাও। কিন্তু গত কয়েকদিন তারা ব্যস্ত সময় কাটিয়েছেন। ভাড়াও বাড়িয়ে দিয়েছেন কয়েকগুণ। ঘরের আসবাপত্র নিয়ে এক এলাকা থেকে অন্য এলাকায় ছুটেছেন তারা। ভ্যানচালকরা বলছেন, আমাদের জন্য মাসের শেষের দুই থেকে তিন দিন এক প্রকার ঈদের মত। এ সময় আমরা সারাদিন ব্যস্ত থাকি মানুষের ঘরের আসবাবপত্র টানায়। গত দুই মাস ধরে তুলনামূলক ব্যস্ততা বেশি। ঘর পরিবর্তন করছে প্রায় সব শ্রেণির মানুষ। এক্ষেত্রে নিম্ন মধ্যবিত্ত ও মধ্যবিত্ত শ্রেণির মানুষরা একটু বেশি পরিবর্তন করছেন।
গতকাল সরেজমিনে দেখা যায়, নগরীর বাসিন্দাদের মধ্যে যেন ঘর পরিবর্তনের হিড়িক পড়েছে। বিভিন্ন সড়কে, অলি গলিতে বাসিন্দাদের আসবাবপত্র বোঝাই করে ভ্যান ও মিনি ট্রাক এক জায়গা থেকে আরেক জায়গায় যাচ্ছে।
জয়নাল, আবু তাহের, মিলন ও কাউছার নামের চারজন ভ্যানচালকের সাথে আলাপ হয় এ প্রতিবেদকের। তারা বলেন, দুই দিন ধরে ভোর থেকে গভীর রাত অবধি ব্যস্ততা। আমরাতো মাসের এ দুই, তিন দিনই কাজ পাই। আর সারা মাস বলতে গেলে বসে থাকি।
জয়নাল বলেন, একদিনে তিন থেকে চার পরিবারের আসবাবপত্র টানা যায়। তাই এ কয়েকটা দিন শরীরকে আর শরীর বলিনা। ভ্যানের ভাড়া দূরত্ব, মালামাল এবং ভবনের উচ্চতার উপর নির্ভর করে। ভ্যানভাড়া প্রতি ট্রিপ তিনশ টাকা থেকে ১২শ’ টাকা পর্যন্ত হয়।
কাউছার বলেন, আমার পরিবারে তিন মেয়ে, এক ছেলে, স্ত্রী ও মা আছে। এক মেয়ে পোশাক কারখানায় কাজ করে। আর তিনজন পড়ালেখা করে। করোনার কারণে অনেক দিন কাজ ছিল না। এরমধ্যে সংসারে অভাব দেখা দিয়েছে। তাই আর করোনাকে ভয় না করে ভ্যান নিয়ে কাজে এসেছি। এরমধ্যে ৬টি ভাড়াও টেনেছি। মোটামুটি কিছু আয় হয়েছে।
মিলন বলেন, আমি সিজনাল ভ্যানচালক। আমাদের মধ্যে অনেকেই এমন আছে যারা মাসের শেষ দিকে শুধু মানুষের ঘরের আসবাবপত্র টানার অর্ডার নেয়। আর সারামাস আমরা বিভিন্ন দোকানের মালপত্র টানি। তবে এতে খুব ভালো আয় হয় না। ভালো আয় হয় মাসের শেষ ক’দিনে।
নগরীর দুই নম্বর গেট এলাকা থেকে বাসা পরিবর্তন করে চকবাজার এলাকায় যান নজরুল ইসলাম ভুঁইয়া নামের এক ব্যক্তি। তিনি বলেন, আমি একটি প্রাইভেট কোম্পানিতে চাকরি করি। করোনায় আমিও আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত। তাই তুলনামূলক কম ভাড়ার একটি ঘর বেছে নিয়েছি। এছাড়া আমার মা শারীরিকভাবে অসুস্থ। মায়ের জন্য আমাকে নিচতলার ঘরে যেতে হচ্ছে।
বেবি সুপার মার্কেট এলাকার ভবন মালিক মো. বাবু বলেন, ‘আমার বাসাগুলোর ভাড়া ১৪ থেকে ১৮ হাজার টাকার পর্যন্ত। আমার বাসাগুলো রাস্তার পাশে হওয়ার কারণে কখনোই খালি হতো না। তবে করোনার দুর্যোগের এ তিন মাসে এক ভবনেই ৪টি বাসা খালি হয়েছে। আজকে আরো দুইজন ভাড়াটিয়া চলে গেছে। কারণ একটাই ভাড়া দিতে পারছে না’।

 

পূর্বকোণ / আরআর

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট