চট্টগ্রাম শনিবার, ২০ এপ্রিল, ২০২৪

সর্বশেষ:

শহর ছাড়ছে কর্মহীন মানুষ । নগরীর ২ নম্বর গেট থেকে ছবিটি তুলেছেন - শরীফ চৌধুরী।

আর্থিক দৈন্যতায় টালমাটাল নগর অর্থনীতি

নাজিম মুহাম্মদ

৩০ জুন, ২০২০ | ৭:১৯ অপরাহ্ণ

করোনায় বহুমাত্রিক সমস্যার মুখে নগর অর্থনীতি। আর্থিক দৈন্যতা মধ্যবিত্ত ও নিম্ন মধ্যবিত্তের দরজায় কড়া নাড়ছে। এভাবে চলতে থাকলে বাড়বে মানুষের আর্থিক সংকট। করোনা কালের শুরুতে সাধারণ ছুটির সুযোগে তাৎক্ষনিকভাবে যারা বেড়ানোর উদ্দেশ্যে গ্রামে ছুটে গিয়েছিলেন, তারা জানতেন না পরবর্তী পরিস্থিতি কতখানি অপেক্ষার হবে। শিক্ষামন্ত্রী চলতি শিক্ষাবর্ষের মেয়াদ বাড়ানোর সম্ভাবনা ঘোষণার পর এ পরিবারগুলো আর শহরে ফিরতে চাইছেন না। ফলে সন্তানদের লেখাপড়ার জন্য যারা শহরে বাস করেন, আগামী মার্চে তাদের শহর ত্যাগের একবছর পূর্ণ হবে।
বাংলাদেশ অর্থনীতি সমিতির সাবেক সভাপতি অধ্যাপক ড.মইনুল ইসলাম বলেন, আগামী চার পাঁচমাসে বাংলাদেশের অর্থনীতি খুবই সংকটে পড়বে। আগামী বছর দেশে মহামন্দা ও সংকোচন আসবে। অর্থনীতির জন্য অনেক খারাপ পরিস্থিতি অপেক্ষা করছে। এতে নিম্নবিত্ত থেকে শুরু করে উচ্চবিত্ত কেউ বাদ যাবে না। নগর অর্থনীতির এখন যে খারাপ অবস্থা, আগামীতে সে সংকট আরো গভীর হবে।
খোঁজখবর নিয়ে জানা যায়, করোনার প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ প্রভাব দুইটিই আছে শহর ত্যাগের ক্ষেত্রে। আর্থিক দুরাবস্থায় পড়ে নিম্ন আয়ের অনেকে ঘরভাড়ার টাকা জোগাড় করতে না পেরে গ্রামে গিয়ে পুরোপুরি বেকার জীবন কাটাচ্ছে। অন্যদিকে বাসা ছেড়ে দেওয়ার কারণে নগরীর বাড়ি ও ফ্ল্যাটের মালিকরা আর্থিক সংকটে পড়েছেন। অনেকের শহুরে আয় বলতে আছে একমাত্র বাড়িভাড়া। সেটা বন্ধ হয়ে যাওয়ায় তাদেরও এখন দিন চলছে না।
ক্যাবের সিনিয়র সহ-সভাপতি এসএম নাজের হোসাইন বলেন, নগরীতে অনেকে ব্যাংক থেকে ঋণ নিয়ে বাড়ি নির্মাণ করেছেন। তারা ভাড়ার টাকা থেকে কিছু নিজেরা খরচ করেন, অবশিষ্ট টাকা দিয়ে ব্যাংকের কিস্তি শোধ করেন। ভাড়াটিয়ারা চলে যাওয়ায় এখন ব্যাংকের কিস্তি দেওয়া বন্ধ। নিজেদের দিন চলতেই তাদের কষ্টের সীমা থাকছে না।
শহর ছেড়ে চলে যাওয়াদের বড় একটি অংশ হলো শিক্ষার্থী। উচ্চ শিক্ষার্থে নগরীতে অনেক ছাত্র ম্যাচে থাকেন। ছাত্রীরা থাকেন বিভিন্ন বেসরকারি ছাত্রী হোস্টেলে। এ ধরনের একাধিক ছাত্রী হোস্টেল থেকে মেয়েরা চলে গেলেও তাদের ভাড়া পরিশোধ করতে হচ্ছে। কারণ মূল মালিক থেকে পুরো বাড়ি ভাড়া নিয়ে কিছু লোক এগুলোকে হোস্টেল বানিয়ে ছাত্রীদের ভাড়া দেন। নগরীর ছাত্রী হোস্টেলের ৯৫ শতাংশই চকবাজার এলাকায়।
চকবাজার থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) নিজাম উদ্দিন বলেন, ছাত্রীরা বাড়ি চলে গেছেন। কিন্তু কক্ষ ত্যাগ করেননি। হোস্টেলের মালিক থেকে ভবনের মালিকরা দাবি করছেন ভাড়া। এ নিয়ে থানায় একটা বৈঠকও হয়েছিল। আমরা ঠিক করে দিয়েছি, ছাত্রীদের থাকা খাওয়া ও এ সংক্রান্ত আনুষাঙ্গিক টাকা বাদ দিয়ে বাদ বাকি টাকা পরিশোধ করতে হবে। সে টাকা দিয়ে হোস্টেল মালিকরা ভবন মালিকের ভাড়া পরিশোধ করবেন।
ভিন্ন চিত্রও পাওয়া গেছে। শহরে থেকেও আয় বন্ধ হয়ে যাওয়ায় বাড়ির মালিককে ভাড়া পরিশোধ করতে পারছেন না অনেকে। বাসাও ছাড়ছেন না। নগরীর চক সুপার মার্কেটের পাশের এক ব্যক্তি নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, তিনি একাধিক বাড়ি থেকে মাসে ভাড়া হিসেবে সাতলাখ টাকা আয় করেন। কিন্তু করোনার কারণে অর্থনীতির চাকা প্রায় বন্ধ। তাই বেশিরভাগ ভাড়াটিয়া গত দুইমাসে কোনো ভাড়া দেননি।
একই ধরনের তথ্য জানালেন নাসিরাবাদ আবাসিক এলাকার আরেক বাড়ির মালিক। তার বেশিরভাগ ভাড়াটিয়াই ওষুধ কোম্পানিতে চাকরি করেন। তিনি বলেন, ভাড়াটিয়াদের বেতন কমে গেছে শুনে আমি প্রত্যেকের বাসা ভাড়া দুই হাজার টাকা কমিয়ে দিয়েছি। তাতেও ভাড়া পাচ্ছি না। অনেক পরিবার গ্রামে গিয়ে আর ফিরেনি। তাদের আসবাবপত্রসহ সবকিছু আছে। তারা ভাড়া দেবে কিনা তাও নিশ্চিত নয়।
জানা গেছে, লকডাউন খোলার আগে অতি হতদরিদ্র নারী ও পুরুষ সরকারি এবং ব্যক্তিগত পর্যায় থেকে পাওয়া সহায়তা নিয়েছে চলেছেন। কেউ কেউ ভিক্ষার টাকা দিয়ে বাসা ভাড়া দিয়েছেন। কিন্তু লকডাউন উঠে যাওয়ার পর আর ভিক্ষার টাকা মিলছে না। কিন্তু করোনা সংক্রমনের ঝুঁকি থাকায় অনেকে কাজও পাচ্ছে না। বাসা বাড়িতে যারা কাজ করতো, তারা এখন শতভাগ বেকার হয়ে আছে। নির্মাণ শ্রমিকরদের হাতেও কাজ নেই। জেলার সাতকানিয়া কেরানীহাটে আম বিক্রি করা আজিজুল হক (আজিজ বাবুর্চি) বলেন, সারাবছর বিয়ে সাদিতে রান্নার কাজ করেছি। এখন বিয়ে সাদি নেই। তাই মৌসুমি ফল বিক্রি করে পেট চালানোর চেষ্টা করছি।

পূর্বকোণ / আরআর

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট