চট্টগ্রাম শনিবার, ২০ এপ্রিল, ২০২৪

সর্বশেষ:

ঝুঁকিতে ৫ সহস্রাধিক গার্মেন্টস কর্মীর জীবিকা, ৩২ লাখ ডলারের কার্যাদেশ

সাইফুল আলম

২৯ জুন, ২০২০ | ৫:৪১ অপরাহ্ণ

লকডাউনের কারণে চট্টগ্রামের উত্তর কাট্টলি ওয়ার্ডে অবস্থিত ৬টি গার্মেন্টস কারখানার প্রায় ৩২ লাখ মার্কিন ডলারের কার্যাদেশ বাতিল হওয়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। রেড জোনের আওতায় পড়ায় গত ১৬ জুন থেকে কর্মীদের সাধারণ ছুটি দিতে বাধ্য হওয়ায় কারখানাগুলো বন্ধ হয়ে যায়।
২১ দিনের জন্য লকডাউন পরিস্থিতিতে পড়ে এই ছয় কারখানার পাঁচ সহ¯্রাধিক শ্রমিক- কর্মচারীর বেতন- ভাতা কীভাবে- কোথা থেকে দিবেন, সেই দুশ্চিন্তায় পড়েছেন মালিকেরা।
আক্ষেপ করে ভুক্তভোগী গার্মেন্টস মালিকরা বলছেন, একই ওয়ার্ডে অবস্থিত বিসিক শিল্প এলাকাকে লকডাউন থেকে অব্যাহতি দেয়া হলেও বহু অনুরোধ এবং কঠোর স্বাস্থ্যবিধি অনুসরণের আশ্বাস দিয়েও গার্মেন্টস কারখানাগুলোকে চালু রাখতে প্রশাসনের সম্মতি মিলেনি।
মালিকদের প্রত্যাশা, বাস্তবতা অনুধাবন করে প্রশাসন কাট্টলি এলাকার গার্মেন্টস কারখানাগুলো দ্রুত খুলে দেয়ার ব্যবস্থা নিবেন। এতে মালিক ও শ্রমিক- কর্মচারীদের জীবিকা নিয়ে দুশ্চিন্তা কাটবে। একইসঙ্গে ক্রেতা হারানোর আশঙ্কাও দূর হবে।
গার্মেন্টস মালিকদের সংগঠন বিজিএমইএ সূত্র জানায়, চট্টগ্রাম শহরে ঘোষিত প্রথম রেড জোন এলাকা উত্তর কাট্টলিতে যে ছয়টি গার্মেন্টস কারখানা রয়েছে সেগুলোতে পাঁচ হাজারের উপর শ্রমিক- কর্মচারী কাজ করে। প্রত্যেকটি কারখানায় কঠোর কমপ্লায়েন্স অনুসরণ করা হয়। করোনা সংক্রমণের কারণে চলতি মাসের ১৬ জুন রাত থেকে ২১ দিনের জন্য কাট্টলি এলাকা লকডাউন ও সাধারণ ছুটি ঘোষণা করায় ছয়টি গার্মেন্টস কারখানার ১৬ লাখ ২৩ হাজার ৪১৪ পিস পণ্যের বিপরীতে ৩১ লাখ ৯৯ হাজার ৮২১ মার্কিন ডলার মূল্যের কার্যাদেশ বাতিলের শঙ্কা তৈরি হয়েছে। এসব পণ্য তৈরি করে জুলাই মাসের মধ্যে পাঠানোর কথা রয়েছে। এরমধ্যে এইচকেটিজি গার্মেন্টসের ৪৭ হাজার ৪৭২ পিস পণ্যের বিপরীতে সম্ভাব্য ক্ষতির পরিমাণ ২ লাখ ২৬ হাজার মার্কিন ডলার। এছাড়া, কাট্টলি টেক্সটাইলের ৩ লাখ পণ্যের বিপরীতে ২ লাখ মার্কিন ডলার, ভ্যানগার্ড গার্মেন্টস লি. এর আড়াই লাখ পিসের বিপরীতে ৭ লাখ মার্কিন ডলার, এইচ বি ফ্যাশন লি.এর ৭ লাখ ৪৭ হাজার পিসের বিপরীতে ১০ লাখ মার্কিন ডলার, পারটেক্স গার্মেন্টসের ১ লাখ ১৪ হাজার পিসের বিপরীতে সাড়ে ৩ লাখ মার্কিন ডলার এবং এম এন ক্লথিং লি.এর ১ লাখ ৬৪ হাজার ৪১৪ পিসের বিপরীতে ৭ লাখ ২৩ হাজার ৭৫৫ মার্কিন ডলারের ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছে।
বিজিএমইএর পরিচালক ও এইচকেটিজি গামেন্টসের ব্যবস্থাপনা পরিচালক এনামুল আজিজ চৌধুরী বলেন, লকডাউনের কারণে কারখানা বন্ধ থাকায় রাশিয়া এবং কানাডার দুই ক্রেতার কার্যাদেশ পেয়েও আমি প্রতিশ্রুত সময়ে তাদের পণ্য পাঠাতে পারিনি। কমপক্ষে ৫শ শ্রমিকের বেতন নিয়ে খুবই দুশ্চিন্তায় আছি। সামনে আসছে ঈদ।
এনামুল আজিজ বলেন, একই এলাকায় বিসিক শিল্প এলাকার কারখানাগুলো লকডাউনের আওতামুক্ত রাখা হয়েছে। কিন্তু গার্মেন্টস কারখানাগুলো বন্ধ রাখার নির্দেশ দেয়া হয়েছে। এটা আমার কাছে বোধগম্য নয়।
‘বিসিক খোলা রাখা গেলে গার্মেন্টস খোলা রাখতে অসুবিধা কোথায়, আমরা প্রশাসনকে এটা বোঝাতে পারিনি। অথচ, খোঁজ নিয়ে দেখুন- এখানকার ৬টি গার্মেন্টস কারখানায় কঠোরভাবে কমপ্লায়েন্স অনুসরণ করা হয়। সরকার নির্দেশিত স্বাস্থ্যবিধি পুরোপুরি মেনেই আমরা এতদিন কারখানা চালিয়েছি’- বলেন তিনি।
বিজিএমইএ’র পরিচালক এনামুল আজিজ বলেন, ‘প্রশাসনকে আমরা কয়েক দফায় অনুরোধ জানিয়েছি- অন্ততঃ এলাকার শ্রমিক দিয়ে হলেও আমাদেরকে কারখানা চালাতে দিন। প্রয়োজনে নির্ধারিত দিন পর্যন্ত আমরা বাইরের শ্রমিককে দিয়ে কাজ করাব না। তারপরও আমাদের অর্ডারগুলো যাতে ক্যানসেল না হয়, শ্রমিকদের জীবন- জীবিকা যাতে ঝুঁকির মধ্যে না পড়ে- সে ব্যবস্থা করুন। কিন্তু প্রশাসন আমাদের আকুতিতে সায় দিচ্ছে না।’
১০ নম্বর উত্তর কাট্টলি ওয়ার্ডের কাউন্সিলর ও প্যানেল মেয়র নিছার উদ্দিন আহমেদ মঞ্জু বলেন, যখন লকডাউন ঘোষণা করা হয় তখন এলাকায় করোনা সংক্রমণের যে সংখ্যা ছিল সেটা গত ১২ দিনে প্রায় এক দশমাংশে নেমে এসেছে। এখন পরিস্থিতি সন্তোষজনক। তিনি বলেন, আমার ব্যক্তিগত পর্যবেক্ষণ হল- সরেজমিন গিয়ে আমরা দেখেছি, ওয়ার্ডের ৪টি পাড়ায় করোনা আক্রান্তদের বাস। এই অবস্থায় গোটা ওয়ার্ড লকডাউন না করে যদি শুধু আক্রান্ত পাড়াগুলোতে লকডাউন করা হতো, তাহলেই হয়ে যেত।
নিছার উদ্দিন আহমেদ বলেন, আজ সোমবার আমাদের (লকডাউন বাস্তবায়ন কমিটি) ভার্চুয়াল বৈঠক আছে। আমি সেখানে এই প্রস্তাবটা রাখব। কমিটির সকলেই যদি সহমত প্রকাশ করে সম্মতি দেন, তাহলে ব্যাপক এলাকা লকডাউন থেকে মুক্তি পাবে। একইসঙ্গে লকডাউন বাস্তবায়নে যে জনবল ও পরিশ্রম হচ্ছে সেটা থেকে প্রশাসনেরও কিছুটা স্বস্তি মিলবে। তখন গার্মেন্টসগুলো চালু রাখতে আর অসুবিধা হবে না।

 

পূর্বকোণ/ এস

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট