চট্টগ্রাম বৃহষ্পতিবার, ২৫ এপ্রিল, ২০২৪

চট্টগ্রামে পাঁচ বছরে পশু উৎপাদন দ্বিগুণ

কোরবানির আগে ‘সুসংবাদ’

মুহাম্মদ নাজিম উদ্দিন

২৮ জুন, ২০২০ | ৪:৪৯ অপরাহ্ণ

১০ বছর আগেও ভারতীয় বা অন্য জেলার পশু দিয়ে চট্টগ্রামে কোরবানির পশুর চাহিদা মেটানো হতো। গত তিন বছর ধরে সেই চিত্র পাল্টেছে। স্থানীয়ভাবে লালন-পালন করা পশু দিয়েই কোরবানির পশুর চাহিদার সিংহভাগ পূরণ করা হচ্ছে। পাঁচ বছরে চট্টগ্রামে গবাদি পশু উৎপাদন বেড়েছে দ্বিগুণ। শুধু চট্টগ্রাম নয়, একই চিত্র সারাদেশের। তাই সরকার এবার ভারত থেকে গরু আমদানি না করার বিষয়ে নীতিগত সিদ্ধান্ত নিয়েছে। দেশীয় উৎপাদনকারী যাতে ন্যায্যমূল্য পায়, উৎপাদন বাড়াতে উদ্বুদ্ধ হয়, সেজন্য সরকার এ উদ্যোগ নিয়েছে।  কয়েক বছর ধরে কোরবানির পশু মজুত ও সার্বিক অবস্থা পর্যবেক্ষণ করে আসছে সরকারের প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তর। মাঠ পর্যায়ে খামারি, ক্ষুদ্র উদ্যোক্তা ও ব্যক্তিগত লালন-পালনকারিদের এ বিষয়ে উদ্বুদ্ধ করে আসছে। দিয়ে আসছে সহায়তা।  জেলা প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের হিসাব অনুযায়ী, চলতি বছর চট্টগ্রাম জেলায় কোরবানির জন্য গবাদি পশু লালন-পালন করা হয়েছে ৬ লাখ ৬০ হাজার। ২০১৫ সালে ছিল তিন লাখ ২০ হাজার।  প্রাণিসম্পদের পরিসংখ্যান বলছে, গেল বছর (২০১৯ সাল) পশু উৎপাদন ছিল ৬ লাখ ১০ হাজার ২১৯টি। এরমধ্যে গরু উৎপাদন হয়েছে ৪ লাখ ১৪,৩৮৭টি, মহিষ ৪৮,২৮৪টি ও ছাগল-ভেড়া এক লাখ ৪৭,৫৪৮টি। সেবছর কোরবানিতে পশু জবেহ করা হয়েছে ৭ লাখ ২০ হাজার ৭৮৯টি। ২০১৮ সালে স্থানীয়ভাবে উৎপাদন ছিল ৫ লাখ ৮১ হাজার ৬৩৪টি। কোরবানিতে জবেহ করা হয়েছে ৬ লাখ ৫৬ হাজার। ২০১৭ সালে স্থানীয় উৎপাদন ছিল তিন লাখ ৫৬ হাজার ১৬৩টি। কোরবানিতে জবেহ করা হয়েছে ৫ লাখ ৯৫ হাজার ৮৩১টি। ২০১৬ সালে স্থানীয় উৎপাদন ছিল তিন লাখ ৩৬ হাজার ১১৯টি। কোরবানিতে জবেহ করা হয়েছে ৫ লাখ ১৬ হাজার ৮৬২টি। ২০১৫ সালে স্থানীয় উৎপাদন ছিল তিন লাখ ২০ হাজার। কোরবানিতে জবেহ করা হয়েছে চার লাখ ৯২ হাজার ২৫০টি।

পরিসংখ্যান বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, ২০১৫ সালে স্থানীয় উৎপাদন ছিল তিন লাখ ২০ হাজার। বর্তমানে ৬ লাখ ৬০ হাজার। সেই হিসাবে পাঁচ বছরে উৎপাদন বেড়েছে দুই দুই গুণের কিছু বেশি। তবে ২০১৮ ও ২০১৯ সালে উৎপাদনের সূচক ছিল বেশি। ২০২০ সালে এসে সূচক স্লথগতিতে নেমে এসেছে।

স্থানীয় উৎপাদন বাড়ানোর পেছনে খামারিদের বড় ভূমিকার রয়েছে উল্লেখ করেছেন জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ও চট্টগ্রাম ডেইরি ফার্ম এসোসিয়েশন।

জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. রেয়াজুল হক জসিম বলেন, খামারি বা গরু লালন-পালন এখন শিক্ষিত, ভদ্র ও সম্মানজনক পেশা হয়ে দাঁড়িয়েছে। এটি এখন লাভজনক পেশা। তাই এখন শিক্ষিত ছেলেরা এ পেশায় ঝুঁকছেন। বিনিয়োগ করছেন। সবমিলে পশু লালন-পালন এখন শিল্প হিসেবে গড়ে ওঠেছে।

চলতি বছর কোরবানিতে পশুর লক্ষ্যমাত্র ধরা হয়েছে প্রায় ৭ লাখ ২০ হাজার। এটি হচ্ছে গত বছরের জবেহ করা পশুর সমান। প্রতিবছর ৫ বা ১০ শতাংশ বাড়িয়ে লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়। এবার ধরা হয়েছে গত বছরের সমান। লক্ষ্যমাত্রা নতুন করে বাড়ানো হয়নি।

এ বিষয়ে প্রাণিসম্পদ বিভাগ বলছে, করোনা সংকটের কারণে অনেকেই আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ব্যবসা-বাণিজ্য থেকে বেসরকারি চাকরিজীবীদের অর্থনৈতিক মন্দাভাব বিরাজ করছে। এতে অনেকেই গরুর কেনার বাজেট কমিয়ে আনার সম্ভাবনা রয়েছে। এছাড়াও চট্টগ্রামে কোরবানির পশুর মাংস আত্মীয়স্বজন, পাড়া-পড়শি ও গরিবদের মধ্যে বিলি-বণ্টনের রেওয়াজ রয়েছে। চলতি বছর সংক্রমণ পরিস্থিতির কারণে গবিরদের ছাড়া আত্মীয়স্বজনের বিলি বণ্টনও কমিয়ে আনবে। শহরের অনেক বাসিন্দা এবার গ্রামে না এসে ছোট পরিসরে কোরবানি দেওয়ার মনস্থির করেছে। এছাড়াও অনেকেই করোনা পরিস্থিতিতে গত তিন মাস ধরে কর্মহীন ও গরিবদের মধ্যে ত্রাণ সহায়তা দিয়ে আসছে।

প্রিমিয়ার বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ফখরুল আবেদীন দিহান বলেন, গত সাড়ে ১৩ লাখ টাকা দামে চারটি গরু কিনে কোরবানি দিয়েছেন তাদের পরিবার। এবার দেবে তিনটি। কারণ পারিবারিক ব্যবসা-বাণিজ্য মন্দা যাচ্ছে। এছাড়াও করোনা পরিস্থিতিতে তাদের পরিবার প্রায় কোটি টাকার খাদ্য সহায়তা দিয়েছে। চলতি বছর আত্মীয়স্বজনের মধ্যে বিলি-বন্টনের হার কমিয়ে এবার গরিবদের মধ্যে বিলি করা হবে।

এদিকে, চলতি বছর কোরবানিদাতার সংখ্যা না বাড়লেও প্রাণিসম্পদের হিসাবে এক লাখের বেশি পশুর সংকট থাকবে।

জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. রেয়াজুল হক জসিম বলেন, প্রতিবছর চট্টগ্রাম ও আশপাশ জেলা থেকে এক থেকে দেড় লাখ পশু চট্টগ্রামে আসে। এতে পশুর কোনো সংকট থাকবে না।

প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. জসিম বলেন, দেশীয় খামারি বা লালন-পালনকারীরা ন্যায্য দাম পাওয়ার জন্য প্রতিবেশী রাষ্ট্র ভারত থেকে গরু আমদানি বন্ধে নীতিগত সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। এতে খামারি ও প্রান্তিক গরু লালন-পালনকারীরা লাভবান হবেন। গরু পালনে উৎসাহিত হবেন।

 

পূর্বকো/এএ

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট