দীর্ঘ এক মাসের বেশি বন্ধ থাকার পর ফের কাজ শুরু হয়েছে ‘এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের’। দেশে করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাব ও লকডাউনের কারণে মার্চ মাস থেকে কাজ বন্ধ হয়ে যায় এ প্রকল্পের। নগরীর লালখান বাজার থেকে শাহ আমানত আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর পর্যন্ত নির্মাণাধীন এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের কাজের মোট অগ্রগতি হয়েছে ২৫ শতাংশের মত। সিএমপি’র ট্রাফিক বিভাগ থেকে যথাসময়ে কাজের অনুমতি পেলে অগ্রগতির পরিমাণ আরো বৃদ্ধি পেত বলে দাবি প্রকল্প পরিচালকের।
অন্যদিকে, চলতি মাসে প্রকল্পের মেয়াদ শেষ হচ্ছে। প্রকল্পের মেয়াদ আরো এক বছর ইতোমধ্যে বাড়ানো হয়েছে। তবে প্রকল্প সংশ্লিষ্টরা ধারণা করছেন ২০২৩ সাল নাগাদ প্রকল্পের কাজ সম্পন্ন হবে।
কাজের অগ্রগতি সম্পর্কে জানতে চাইলে এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের প্রকল্প পরিচালক মাহফুজুর রহমান জানান, আগ্রাবাদ থেকে শেখ মুজিব রোড পর্যন্ত কাজের অনুমতি পাচ্ছি না। আমাদের সব জায়গায় কাজের অনুমতি দিচ্ছে না সিএমপি’র ট্রাফিক বিভাগ। সে কারণে আমাদের কাজের অগ্রগতি কম। না হয়, কাজের অগ্রগতি আরো বেশি হতো। তবে এক বছরে কাজের অগ্রগতি কম হয়নি।
তিনি আরো জানান, লকডাউনের কারণে এপ্রিল মাস কাজ বন্ধ ছিল। গত মে মাস থেকে কাজ আবার শুরু হয়েছে। বর্তমানে সিমেন্ট ক্রসিং থেকে সল্টগোলা ক্রসিং অংশে আট কিলোমিটারের কাজ চলমান রয়েছে। এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের মোট কাজের ৫০ শতাংশের মত কাজ চলমান রয়েছে।
এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের ডেপুটি ম্যানেজার মো. রাফি সাজ্জাদ জানান, সিমেন্ট ক্রসিং থেকে পতেঙ্গা সি বিচ পর্যন্ত পিলারের কাজ সম্পন্ন হয়েছে। আমরা এখন গার্ডারের কাজ করছি। ঈদের পর থেকে আমরা সিমেন্ট ক্রসিং থেকে সল্টগোলা ক্রসিং অংশে কাজ শুরু করেছি। এ পর্যন্ত ৮৯টি পিলার নির্মাণ সম্পন্ন হয়েছে। এ প্রকল্পে মোট ৩৭৮টি পিলার নির্মাণ করা হবে। এছাড়া, বৈদ্যুতিক খুঁটির কারণে কেপিজেড ও কাটগড় এলাকায় পাঁচটি পিলারের কাজ করতে পারিনি। কাজ করার জন্য আমাদের বিভিন্ন মেশিন ও যন্ত্রপাতি রয়েছে। কিন্তু সব জায়গায় আমরা কাজ করার অনুমতি পাচ্ছি না।
প্রকল্প সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের লালখান বাজার থেকে বিমানবন্দর পর্যন্ত পাঁচ অংশে ভাগ করা হয়েছে। লালখান বাজার থেকে বারিক বিল্ডিং পর্যন্ত প্রথম অংশ। বারিক বিল্ডিং থেকে সল্টগোলা ক্রসিং পর্যন্ত দ্বিতীয় অংশ। সল্টগোলা ক্রসিং থেকে সিমেন্ট ক্রসিং পর্যন্ত তৃতীয় অংশ। সিমেন্ট ক্রসিং থেকে কাটগড় পর্যন্ত চতুর্থ এবং কাটগড় থেকে বিমানবন্দর সড়ক পঞ্চম অংশ হিসেবে ধরা হয়েছে। এরমধ্যে কাটগড় থেকে বিমানবন্দর অংশে পিলারের কাজ সম্পন্ন হয়েছে। অন্যদিকে সিমেন্ট ক্রসিং থেকে সল্টগোলা ক্রসিং পর্যন্ত অংশের কাজ ঈদের পর শুরু হয়েছে।
সিডিএ সূত্র থেকে জানা যায়, ১৬ কিলোমিটার দীর্ঘ এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের ৭টি পয়েন্টে ১৪টি র্যাম্প ও লুপ থাকার কথা রয়েছে। লালখান বাজার থেকে শুরু হওয়া এক্সপ্রেসওয়েতে টাইগারপাসে ১টি, আগ্রাবাদে ৪টি, বারিক বিল্ডিং মোড়ে ১টি, কাস্টমস মোড়ে ২টি, সিইপিজেডে ২টি, কেপিজেডে ২টি, পতেঙ্গা সমুদ্রসৈকত এলাকায় ২টি র্যাম্প থাকবে। র্যাম্প এবং লুপগুলোসহ এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়েটির মোট দৈর্ঘ্য দাঁড়াবে প্রায় ২৪ কিলোমিটারের মত।
উল্লেখ্য, বিমানবন্দর কেন্দ্রিক যানজট নিরসনে চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (সিডিএ) এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে নির্মাণের উদ্যোগ গ্রহণ করে। তিন হাজার ২৫০ কোটি ৮৩ লাখ টাকা ব্যয়ে লালখান বাজার থেকে বিমানবন্দর পর্যন্ত এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে নির্মাণ প্রকল্পটি ২০১৭ সালের ১১ জুলাই একনেকে অনুমোদন পায়। ২০১৯ বছরের ফেব্রুয়ারিতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের নির্মাণ কাজ উদ্বোধন করেন।