চট্টগ্রাম শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল, ২০২৪

রোগীর স্বজনকেই অক্সিজেন সরবরাহ করতে হচ্ছে বেসরকারি হাসপাতালে !

ইফতেখারুল ইসলাম

২৫ জুন, ২০২০ | ৬:২৩ অপরাহ্ণ

বেসরকারি হাসপাতালসমূহে এখনো বাইরে থেকে অক্সিজেন সিলিন্ডার নিয়ে রোগীকে দিতে হচ্ছে। এনিয়ে রোগীর অভিভাকদের দুর্ভোগ এবং দুশ্চিন্তার শেষ নেই। যদিও বিভিন্ন স্বেচ্ছাসেবী ব্যক্তি এবং প্রতিষ্ঠান এক্ষেত্রে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিচ্ছে। তবে রোগীর স্বজনদের প্রশ্ন হল, বেসরকারি হাসপাতালসমূহ প্রতি কেবিনে একটি অক্সিজেন সিলিন্ডার না রেখে সরকারি অনুমোদন পায় কিভাবে ?
বেসরকারি হাসপাতালসমূহ ন্যূনতম অক্সিজেন সেবা নিশ্চিত করতে পারছে না। বাহারি প্রচার এবং চাকচিক্য দেখে সাধারণ মানুষ ঘুণাক্ষরেও বুঝতে পারেনা তারা এখনো পর্যন্ত সংকটাপন্ন রোগীদের জন্য অক্সিজেন সেবা নিশ্চিত করতে পারেনি। সংশ্লিষ্টদের মতে একটি বেসরকারি হাসপাতালে রোগীকে অক্সিজেন দিতে না পারা একটি বড় ধরনের অপরাধ।
সম্প্রতি ডায়াবেটিস এবং অন্যান্য রোগের জটিলতা নিয়ে নগরীর মেহেদীবাগের একটি হাসপাতালে ভর্তি হওয়া এক রোগীর সন্তান রাজীব হোসেন পূর্বকোণকে জানান, মহামারী শুরু হওয়ার আগে প্রাইভেট হাসপাতালসমূহের বাইরের চাকচিক্য দেখে ঘুর্ণাক্ষরেও বুঝতে পারিনি ভেতরে সব ফাঁকা। আসলে তাদের কাছে ন্যূনতম অক্সিজেন সিলিন্ডার পর্যন্ত নেই। তিনি জানান, তাঁর মাকে ওই বেসরকারি হাসপাতালে নেয়ার পর অক্সিজেন দেয়ার প্রয়োজন হচ্ছিল। কিন্তু হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ বলেছে অক্সিজেনের সিলিন্ডার যোগাড় করে আনতে। তিনি তার পরিচিত একজনের মাধ্যমে শুলকবহর ওয়ার্ড কাউন্সিলর মো. মোরশেদ আলমের সাথে যোগাযোগ করেন। সিলিন্ডারের প্রয়োজনীয়তার কথা ফোনে জানানোর ১০ মিনিটের মধ্যে কাউন্সিলর একটি সিলিন্ডার পাঠিয়ে দেন। তার মা সেই উছিলায় রক্ষা পান। এখন তার স্বাস্থ্যের অবস্থা ধীরে ধীরে উন্নতির দিকে।
কাউন্সিলর মোরশেদ আলম পূর্বকোণকে জানান, তিনি পাঁচলাইশ এলাকার একটি দামি হাসপাতালসহ আরো বেশ কয়েকটি কয়েকটি সংকটাপন্ন রোগীর জন্য অক্সিজেন সিলিন্ডার পাঠিয়েছেন। শুধু মেহেদীবাগের ওই হাসপাতাল নয়, নগরীর একাধিক নামী-দামি হাসপাতালে বাইরের সিলিন্ডার দিয়ে অক্সিজেন দিতে হচ্ছে।
এনিয়ে ভুক্তভোগীদের ক্ষোভের অন্ত নেই। তাদের অভিযোগ, প্রাইভেট হাসপাতালসমূহ তাদের সক্ষমতার বাইরে রোগী ভর্তি নিচ্ছে না। বেড খালি থাকলেও জটিল রোগী ফিরিয়ে দেয়ার অভিযোগ অহরহ। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনা কিংবা হাসপাতাল অনুমোদনের ক্ষেত্রে যেসব নীতিমালা রয়েছে তাতে চিকিৎসা না দিয়ে রোগী ফিরিয়ে দেয়ার কোন সুযোগ নেই। বর্তমান মহামারীতে প্রাইভেট হাসপাতালসমূহের আসল চেহারা ফুটে উঠেছে। তাদের কাছে ন্যূনতম অক্সিজেন সিলিন্ডার পর্যন্ত নেই।
স্বাধীনতা চিকিৎসক পরিষদের কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক ডা. আ ম ম মিনহাজুর রহমান এবিষয়ে পূর্বকোণকে বলেন, এই ক্রান্তিকালে অক্সিজেন নেই এই কথা বলা অপরাধের পর্যায়ে পড়ে। প্রতি কেবিনের অধীনে অন্তত একটি সিলিন্ডার থাকা উচিত। আর প্রতিটি কেবিনের সব রোগীর একসাথে অক্সিজেন লাগে না। একটি খালি হলে তা পূর্ণ করিয়ে আনার যথেষ্ট সময় পাওয়া যায়। অক্সিজেন সিলিন্ডার এমন দামি কোন জিনিস নয় যে, হাসপাতাল মালিকদের তা কেনার সামর্থ নেই। তাই বেসরকারি হাসপাতাল অন্তত অক্সিজেন সরবরাহের দিক দিয়ে স্বয়ংসম্পূর্ণ হওয়া উচিত। এই সংকটময় মুহূর্তে মানুষ অক্সিজেন সেবা পাওয়ার আশা করতেই পারে। নগরীর বড় বড় বেসরকারি হাসপাতালসমূহে মেনিফোল্ড অক্সিজেন ডেলিভারি সিস্টেম আছে। তাদের কেন সংকট হবে ? এমন প্রশ্ন তুলে তিনি বলেন, তারা সিলিন্ডারের মাধ্যমে এই সেবা দিয়ে থাকে। আর বড় সিলিন্ডারের সংকট চট্টগ্রাম শহরে নেই। তারা যদি বলেন, অক্সিজেন সংকট আছে, তাহলে আমি বলব তাদের আন্তরিকতার অভাব আছে।
সিভিল সার্জন অফিস সূত্র জানায়, চট্টগ্রাম শহরে ৯০টি বেসরকারি হাসপাতালে অনুমোদিত বেড রয়েছে ৪১৪৭টি। ১৪টি উপজেলার ৬৫টি বেসরকারি হাসপাতালে মোট অনুমোদিত বেড আছে ১৪৪৫টি। শহর এবং জেলায় মিলে ১৫৫ টি বেসরকারি হাসপাতালে মোট অনুমোদিত বেড রয়েছে ৫৫৯২টি। এর মধ্যে আনোয়ারা উপজেলায় বেসরকারি হাসপাতালে অনুমোদিত বেড রয়েছে ২০টি। বাঁশখালীতে ৪০ টি, বোয়ালখালীতে ১৫টি, চন্দনাইশে ৫৩০টি। সেখানে বিজিসি ট্রাস্টের ইব্রাহিম ইকবাল মেমোরিয়াল হাসপাতালেই অনুমোদন আছে ৫০০ বেড। ফটিকছড়িতে ৮০ বেড, হাটহাজারীতে ১৩০ বেড, লোহাগাড়া উপজেলায় ৯৫ বেড, মিরসাইয়ে ১১০ বেড, পটিয়ায় ৩০ বেড, রাঙ্গুনিয়ায় ৯৩ বেড, রাউজানে ১২০ বেড, সাতকানিয়ায় ৮২ বেড এবং সন্দ্বীপে ৩০ টি বেড অনুমোদন আছে।

পূর্বকোণ / আর আর

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট