চট্টগ্রাম বৃহষ্পতিবার, ২৫ এপ্রিল, ২০২৪

অভিযানের পরও বিক্রি হচ্ছে নকল স্বাস্থ্য সুরক্ষা সামগ্রী

মুহাম্মদ নাজিম উদ্দিন

২৫ জুন, ২০২০ | ৬:০৬ অপরাহ্ণ

করোনাভাইরাসের জীবাণু থেকে রক্ষার জন্য বেশি ব্যবহৃত হচ্ছে হ্যান্ড স্যানিটাইজার ও জীবাণুনাশক নানা সামগ্রী। ব্যবহার বিধি বাড়ানোর সঙ্গে সঙ্গে বাড়ছে নকল ও ভেজাল সামগ্রী। প্রশাসনের অভিযানের পরও থামছে না নকল-ভেজাল জীবাণুনাশক সামগ্রী। নগরীর বড় কারখানায় অভিযানের পরও কয়েকদিনের ব্যবধানে ব্যাপক নকল জীবাণুনাশক সামগ্রী বিক্রির প্রমাণ পেয়েছে প্রশাসন, র‌্যাব ও পুলিশ।
জেলা প্রশাসন সূত্র জানায়, গত সপ্তাহে নগরীর পাথরঘাটা রোড এলাকায় অভিযান চালিয়ে ড্রামে ড্রামে নকল জীবাণুনাশক হেক্সিসল ও স্যাভলন উদ্ধার করা হয়। পারফিউমের এসব দোকানে ড্রাম ও জার ভর্তি করে দেদারছে বিক্রি করা হচ্ছে নকল জীবাণুনাশক সামগ্রী। ড্রাম ও জার ছাড়াও পেপসি, ফানটা ও পানির বোতল ভর্তি করে বিক্রি করা হচ্ছে নিম্ন মানের নকল সুরক্ষা সামগ্রী।
গত ১৫ জুন ২টা ঘণ্টা অভিযান চালিয়ে বিপুল পরিমাণ নকল সুরক্ষাসামগ্রী ধ্বংস করেন জেলা প্রশাসনের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট শিরিন আক্তার ও গালিব চৌধুরী। অভিযানে কয়েক লাখ টাকার নকল হেক্সিসল ও স্যাভলন ধ্বংস করা হয়। তারপরও নগরীতে নকল হেক্সিসল ও স্যাভলন বিক্রি থেকে নেই।
গত সোমবার অভিযান চালিয়ে নগরীর বিবিরহাট এলাকা থেকে বিপুল পরিমাণ নকল সুরক্ষাসামগ্রী উদ্ধার ও একজনকে গ্রেপ্তার করেছে র‌্যাব। রাস্তার ধারে নকল হেক্সিসল, মাস্ক ও স্যাভলন বিক্রি করা হচ্ছে।
নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট শিরিন আক্তার বলেন, ‘অভিযোগ ছিল আছাদগঞ্জ এলাকার পাথরঘাটা রোডে অনুমোদনহীন নকল ও খোলা হেক্সিসল এবং স্যাভলন বিক্রি করা হচ্ছে। অভিযানে গিয়ে এর সত্যতা পাওয়া যায়। অভিযানের খবরে কয়েকটি দোকান ছাড়া অন্য দোকান বন্ধ করে পালিয়ে যায়। অনেকে মালামাল সরিয়ে ফেলে’।
ভ্রাম্যমাণ অভিযানে শাহ আমানত পারফিউম ও কেমিক্যালকে ১০ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়। লক্ষাধিক টাকার নকল হেক্সিসল ও স্যাভলন ধ্বংস করা হয়। একইভাবে আল্লাহর দান কেমিক্যালেও লক্ষাধিক টাকার নকল সুরক্ষা সামগ্রী ধ্বংস করা হয়।
প্রশাসন সূত্র জানায়, নিম্ন মানের সুরক্ষা সামগ্রী ও স্যানিটাইজার নকল করে বাজারজাত করছে অসাধু ব্যবসায়ীরা। বিভিন্ন কোম্পানির লেভেল লাগিয়ে বাজারজাত করা হচ্ছে। আর এসব নকল হ্যান্ড স্যানিটাইজার বিক্রি হচ্ছে নগরীর ফুটপাত ও বিভিন্ন দোকানে। এসব নকল পণ্য ব্যবহারের কারণে করোনাভাইরাস প্রতিরোধ তো দূরের কথা, উল্টো সংক্রমণ আরও বেশি হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে বলে জানান চিকিৎসকেরা।
নগরীর বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা যায়, প্রতি মোড়ে মোড়েই হ্যান্ড স্যানিটাইজার, মাস্ক, স্যাভলন, ডেটলসহ নানা ধরনের সুরক্ষা সামগ্রীর পসরা সাজিয়ে বসে আছেন বিক্রেতারা। এসব সামগ্রী আসল না নকল পার্থক্য করে বোঝার উপায় নেই। বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের নাম, ব্যবহৃত উপাদান সবই উল্লেখ রয়েছে এসব সামগ্রীতে। বোতল ও তরলের রঙ দেখেও এগুলোকে পার্থক্য করে নকল বলে শনাক্ত করা যায় না। তাই বিক্রি হচ্ছে উচ্চ দামে।
মো. কামরুল হাবিব নামে এক বেসরকারি কর্মচারী বলেন, সাধারণ ছুটি ঘোষণার সময় অফিস বন্ধ ছিল। এখন অফিস চালু হয়েছে। প্রতিদিন অফিসে যেতে হচ্ছে। আতঙ্কের মধ্যেও বিভিন্ন যানবাহনে চড়ে অফিসে যেতে হচ্ছে। জিইসি’র মোড় থেকে তিন-চার গুণ দামে এক বোতল স্যাভলন ও হ্যান্ড স্যানিটাইজার কিনেছি। এখন দেখছি, স্যানিটাইজার ব্যবহার করলে হাত জ¦ালাপোড়া করে। বোতল খোলার পর স্যাভলনের নাম গন্ধ নেই। বেশি দামে নকল সুরক্ষা সামগ্রী কিনে প্রতারিত হয়েছি।’
২নং গেট ফুটপাতে টেবিল পেতে বিক্রি করা হচ্ছে স্বাস্থ্য সুরক্ষাসামগ্রী। বিক্রি করছেন মো. আলম। তিনি আগে ভবন নির্মাণের কাজ করতেন। লকডাউনের পর কাজ পাচ্ছেন না। এখন হ্যান্ড স্যানিটাইজার, মাস্ক, গ্লাভস, লিকুইড এন্টিসেপটিক সামগ্রী বিক্রি করছেন। বিকি বাট্টাও মোটামুটি হচ্ছে বলে জানান তিনি। আসল না নকল জানতে চাইলে তিনি হলফ বলে বলেন, ‘সবই আসল। হাজারী গলি ওষুধের পাইকারি দোকান থেকে কিনেছেন।’
প্রশাসন সূত্র জানায়, নগরীর বিভিন্ন স্থানে প্রস্তুতকৃত নকল সুরক্ষা সামগ্রী বেশির ভাগ বিক্রি হচ্ছে হাজারী গলির ওষুধের দোকানের মাধ্যমে। এসব ওষুধের দোকানে প্রতিদিন লক্ষ লক্ষ টাকার ওষুধপত্র ও নকল সামগ্রী বিক্রি করা হচ্ছে। আর বিক্রি করা হচ্ছে উচ্চ দামে। সম্প্রতি প্রশাসন, পুলিশ ও র‌্যাব যৌথ সাঁড়াশি অভিযানে তা প্রমাণিত হয়েছে।
নগরীর বিভিন্ন স্থানে দেখা যায়, ৫০ মিলিগ্রাম হ্যান্ড স্যানিটাইজার সর্বনিম্ন দাম ৭০ টাকা থেকে ৮০ টাকা। স্থানভেদে একেক দরে বিক্রি হচ্ছে। স্যাভলন ও ডেটল সোনার হরিণ হলেও পাওয়া যাচ্ছে রাস্তার ধারে। ১১২ মিলিগ্রাম বিক্রি স্যাভলন বা ডেটল বিক্রি হচ্ছে একশ টাকার উপরে। ৫০০ মিলিগ্রাম বিক্রি হচ্ছে ৫শ থেকে সাড়ে ৫শ টাকা।
কামরুল হাবিব বলেন, স্যাভলন বা ডেটল কোনো ওষুধের দোকান বা প্রসাধনী সামগ্রী বিক্রির দোকানে পাওয়া যাচ্ছে না। তবে রাস্তার ধারে অতি সহজেই পাওয়া যাচ্ছে। নকল সামগ্রী বলে রাস্তার ধারে বিক্রি হচ্ছে। প্রশাসনের আরও কঠোর নজরদারি বাড়ানো প্রয়োজন।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে জেলা প্রশাসনের এক ম্যাজিস্ট্রেট বলেন, কেউ জেনে-বুঝে নকল পণ্য ব্যবহার করতে চায় না। যখন কেউ নকল পণ্য কিনে তা ব্যবহার করবেন, তখন তিনি ভাববেন যে তিনি আসল পণ্য ব্যবহার করছেন। সুরক্ষিত আছেন, তার হাত জীবাণুমুক্ত আছেন। এখন দেখা যাচ্ছে উল্টো চিত্র। এসব সামগ্রী ব্যবহার অত্যন্ত ক্ষতিকর। ঝুঁকি এড়ানোর জন্য ফুটপাত বা যেকোন জায়গা থেকে সুরক্ষাসামগ্রী না কিনে ফার্মেসি বা প্রতিষ্ঠিত দোকান থেকে কেনার পরামর্শ দিয়েছেন তিনি।

পূর্বকোণ / আর আর

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট