চট্টগ্রাম বৃহষ্পতিবার, ১৮ এপ্রিল, ২০২৪

সর্বশেষ:

রনির ‘লাশ ফেলার হুমকি’: বিএমএ নেতার গ্রেপ্তার দাবি

রনির ‘লাশ ফেলার হুমকি’: বিএমএ নেতার গ্রেপ্তার দাবি

নিজস্ব প্রতিবেদক

২৩ জুন, ২০২০ | ১১:১৩ অপরাহ্ণ

মোবাইল কথোপকথনে চট্টগ্রামের সাবেক ছাত্রলীগ নেতা নুরুল আজিম রনির ‘লাশ ফেলার’ কথা বলার অভিযোগে নগর আওয়ামী লীগের স্বাস্থ্য বিষয়ক সম্পাদক ডা. ফয়সাল ইকবাল চৌধুরীর গ্রেপ্তার দাবিতে প্রতিবাদমুখর হয়ে উঠেছে বন্দরনগরী।

করোনাভাইরাস সংকটের মধ্যে চট্টগ্রামের বেসরকারি হাসপাতাল-ক্লিনিকগুলোতে রোগীদের চিকিৎসা না দেয়ার ঘটনায় বিভিন্ন প্রতিবাদ কর্মসূচিতে বিএমএ চট্টগ্রামের সাধারণ সম্পাদক ফয়সাল ইকবালের গ্রেপ্তার দাবি করেছিলেন রনি।

কোভিড-১৯ রোগীদের চিকিৎসা সহায়তায় নুরুল আজিম রনিসহ কয়েকজন মিলে নগরীর হালিশহরে একটি আইসোলেশন সেন্টারও গড়ে তুলেছেন। ওই সেন্টারের প্রধান উদ্যোক্তা মো. সাজ্জাত হোসেনের সঙ্গে মোবাইলে কথোপকথনের সময় ফয়সাল ইকবাল রনিকে ‘চোর-ডাকাত’ আখ্যায়িত করে দেশ স্বাভাবিক হলে তার ‘লাশ দেখা যাবে’ বলে হুমকি দেন বলে অভিযোগ।

সোমবার (২২ জুন) সকালে টেলিফোনে ওই কথোপকথনের পর বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমে এ বিষয়ে খবর প্রকাশ হয়। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমেও এ নিয়ে চলছে তুমুল আলোচনা।

কথোপকথনটির অডিও ছড়িয়ে পড়লে চট্টগ্রাম মহানগর ছাত্রলীগ এ ঘটনায় নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়ে ‘ছাত্রলীগ পরিবারের বর্তমান ও সাবেক নেতাকর্মীদের উপর আঘাত আসলে সমুচিত জবাব’ দেয়া হবে বলে হুঁশিয়ারি দিয়েছে।

মঙ্গলবার (২৩ জুন) বিকেলে চট্টগ্রাম কলেজ ও মহসিন কলেজ ছাত্রলীগ মানববন্ধন ও প্রতিবাদ সমাবেশ করে ‘হুমকিদাতা ফয়সাল ইকবালের গ্রেপ্তার’ দাবি করেছে।

ফোনালাপে যা আছে

টেলিফোন আলাপের বিষয়ে মো. সাজ্জাত হোসেন বলেন, “আমার মোবাইলে উনার (ফয়সাল ইকবাল) একটি কল দেখতে পেয়ে সকাল ৯টা ৫৫মিনিটে। পরে উনাকে কলব্যাক করি। উনাকে বলি, সবাই দেখতে আসতেছে, আপনিও আমাদের আইসোলেশন সেন্টার দেখতে আসুন। জবাবে উনি বলেন, কীভাবে যাব? তোমরা মিনহাজ (ডা. আ ন ম মিনহাজুর রহমান) ডাকাতকে রেখেছ।”

সাজ্জাত হোসেন বলেন, এভাবে মন্তব্য করার পর তিনি ফোনের কল রেকর্ডার অন করেন।

এক মিনিট আট সেকেন্ডের ওই কথোপকথনে ফয়সাল ইকবালকে বলতে শোনা যায়, “আইসোলেশন সেন্টারের ভাত আছে? নাই ডাক্তার, কিছু নাই, ওখানে ভংচং করার দরকারটা কী?”

জবাবে সাজ্জাত হোসেন বলেন, “ডাক্তার নাই আপনাকে কে বলল? আচ্ছা ঠিক আছে ভাই।”

এরপর ফয়সাল ইকবাল বলেন, “রোগীর যেটার অভাব হাই ফ্লো ন্যাজল ক্যানুলা, ওখানে কী আছে? ওখানে সেন্ট্রাল অক্সিজেন লাইন আছে না, কি আছে? ওখানে এমনে মানুষ শোয়াই রাখার জন্য। মানুষ শোয়াই রাখার জন্য একটাই, মেয়রেরটাই (সিটি করপোরেশন পরিচালিত আইসোলেশন সেন্টার) যথেষ্ট, ওখানে ডাক্তার আছে।

“আর ওখানে দুনিয়ার চোর ডাকাইত সবগুলারে নিছ, ওখানে আমরা যাব, না? ওখানে আবার তোমরা পিকনিক পার্টি করো মাইনষের টাকা চাঁদা তুলি?”

এর জবাবে সাজ্জাত হোসেন বলেন, “পিকনিক পার্টি করি মানে?”।

তবে এরপর জবাব না দিয়ে ফয়সাল ইকবাল বলেন, “ওখানে ভালো ভালো মানুষ সব বেরিয়ে যাচ্ছে। … আচ্ছা যাই হোক, এগুলি বলে লাভ নাই। রইন্যার (রনি) মতো চোর-ডাকাইতের সাথে কী? দেশ একটু সুস্থ হোক। ওর লাশ দেখা যাবে। ওর লাশ যদি না ফেলি আমার নাম ফয়সাল ইকবাল না।”

এ বিষয়ে সোমবার বেলা দেড়টার দিকে ফয়সাল ইকবাল চৌধুরীর কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, “আমি রাঙ্গুনিয়া, এখানে আমাদের প্রপার্টি নিয়ে একটু সমস্যা। আমার সাথে কোনো কথাই হয়নি, আমাকেও একজন বলেছে।

“তার (রনি) আর আমার একই আদর্শ হতে পারে, ভিন্নমত থাকতে পারে। আমি পেশাজীবী রাজনীতি করি।”

তাহলে এমন অভিযোগ কেন প্রশ্নের জবাবে ডা. ফয়সাল ইকবাল বলেন, “এখন তো তথ্যপ্রযুক্তির যুগ, অনেকে অনেক কিছু করতে পারে। এগুলো বানানো যায়, আমার সাথে কোনো ইয়েই হয়নি।

“আর আমি কেন রনিকে নিয়ে কথা বলতে যাব? আজ পর্যন্ত সে অনেক কিছু বলেছে, প্রেসক্লাবে… আমি তার সম্পর্কে কোনো কমেন্টও করিনি, কোনো লেখাও লিখিনি। সে আলোচনায় আসার জন্য আমাকে নিয়ে কথা বলতে পারে। আমি কেন তাকে নিয়ে বলতে যাব?”

তিনি বলেন, “আমি তিন দিন ধরে গ্রামে। ঘুম থেকে উঠেছি একটু আগে। কে আমাকে ফোন করল…?”

এ বিষয়ে বক্তব্য জানতে চাইলে নূরুল আজিম রনি বলেন, “চট্টগ্রামের বেসরকারি হাসপাতাল-ক্লিনিকে চিকিৎসার অভাবে মানুষ মারা যাচ্ছিল। সেটার প্রতিবাদ করে ক্লিনিকে চিকিৎসা সেবা দেওয়ার দাবি জানিয়েছি। এর নেপথ্যে থাকা ডা. ফয়সাল ইকবাল ও ডা. লিয়াকত আলী খানের গ্রেপ্তার দাবি করেছি।

“তাই ডা. ফয়সাল ইকবাল চৌধুরী আমার লাশ ফেলার ঘোষণা দিয়েছেন। এ বিষয়ে আমি আর কী বলব? আপনারা নগর আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক আ জ ম নাছির উদ্দীন সাহেবের বক্তব্য গ্রহণ করুন।”

এ ঘটনায় আইনগত পদক্ষেপ বিষয়ে জানতে চাইলে রনি মঙ্গলবার বলেন, “গত রাতে পাঁচলাইশ থানায় অভিযোগ নিয়ে গেলে তারা কিছু কারেকশন করতে বলে। আজ আবার অভিযোগ নিয়ে যাব।”

প্রতিবাদ ও গ্রেপ্তার দাবি

রনিকে প্রাণনাশের হুমকির নিন্দা জানিয়ে সোমবারই বিবৃতি দেয় নগর ছাত্রলীগের সভাপতি ইমরান আহমেদ ইমু ও ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক জাকারিয়া দস্তগীর।

বিবৃতিতে তারা ‘লাশ ফেলার হুমকি দেয়ায়’ গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর দৃষ্টি আকর্ষণ করেন।

এদিকে মঙ্গলবার বিকেলে চট্টগ্রাম প্রেসক্লাব চত্বরে চট্টগ্রাম কলেজ ও মহসিন কলেজ ছাত্রলীগ আয়োজিত প্রতিবাদ সমাবেশ থেকে ডা. ফয়সাল ইকবালসহ ‘হত্যা ষড়যন্ত্রের’ সব পরিকল্পনাকারীর গ্রেপ্তার দাবি করা হয়।

ওই কর্মসূচিতে অংশ নেওয়া চিকিৎসা সহায়তা আন্দোলন চট্টগ্রামের মুখপাত্র কোতোয়ালি থানা আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক হাসান মনসুর বলেন, “আমরা বলেছিলাম, বেসরকারি ক্লিনিক মালিকদের নৈরাজ্য ও চট্টগ্রামের মানুষের চিকিৎসা সেবা নিয়ে টালবাহানা চলবে না। সবাই যখন করোনা দুর্যোগে অসহায় তখন এ ধরনের হত্যার হুমকি অনভিপ্রেত।”

ফয়সাল ইকবালের বিরুদ্ধে মামলা নিতে গড়িমসি করা হচ্ছে বলেও সমাবেশ থেকে অভিযোগ করা হয়।

এতে বক্তব্য রাখেন যুবলীগ নেতা গাজী জাফর উল্লাহ, নুরুল আনোয়ার, শিবু প্রসাদ চৌধুরী, ছাত্রলীগ নেতা মাহমুদুল করিম, নাদিম উদ্দিন, রিয়াজ আমিনুল করিম, আনোয়ার হোসেন পলাশ, নাইমুল উদ্দিন মামুন।

চট্টগ্রামে করোনাভাইরাস সংক্রমণের শুরু থেকেই বেসরকারি হাসপাতাল ও ক্লিনিকগুলোতে কোভিড-১৯ শনাক্তকরণ পরীক্ষার ফল ছাড়া বিভিন্ন হাসপাতাল ঘুরেও রোগীদের সেবা না পাওয়া ও মৃত্যুর অভিযোগ ওঠে। এমনকি স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনার পরও চট্টগ্রামের বেসরকারি হাসাপাতাল ও ক্লিনিকে চিকিৎসা না পেয়ে রোগীর মৃত্যুর অভিযোগ আসতে থাকে।

এরপর ৩০ মে বেসরকারি হাসপাতাল ও ক্লিনিক মনিটরিংয়ে স্থানীয় প্রশাসন গঠিত সার্ভেইল্যান্স টিমের সদস্য করা হয়েছিল ফয়সাল ইকবাল চৌধুরীকে। তিনদিন পরেই নানা ঘটনায় আলোচিত ফয়সাল ইকবালকে ওই কমিটি থেকে বাদ দেওয়া হয়।

ওই দিন চট্টগ্রাম প্রেসক্লাব প্রাঙ্গণে এক কর্মসূচি থেকে চট্টগ্রামের মানুষকে স্বাস্থ্য সেবা না দিয়ে ‘জিম্মি’ করার অভিযোগ তুলে ডা. ফয়সাল ইকবাল ও ডা. লিয়াকত আলী খানের গ্রেপ্তারের দাবি জানান রনি।

চট্টগ্রামের রাজনীতিতে ফয়সাল ইকবাল মেয়র আ জ ম নাছিরের অনুসারী এবং রনি প্রয়াত নেতা এ বি এম মহিউদ্দিন চৌধুরীর অনুসারী হিসেবে পরিচিত। সূত্র : বিডিনিউজ ২৪

 

 

 

পূর্বকোণ/আরপি

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট