চট্টগ্রাম শুক্রবার, ২৯ মার্চ, ২০২৪

চমেকে ডেথ সার্টিফিকেটের দাম হাজার টাকা!

আল-আমিন সিকদার

৮ জুন, ২০২০ | ৫:২৩ অপরাহ্ণ

করোনায় আক্রান্ত হওয়া রোগীদের প্রথমে আইসোলেশনে, চিকিৎসা দেওয়া হত চট্টগ্রামের বাংলাদেশ ইনিস্টিটিউট অব ট্রফিক্যাল ইনফেকশন ডিজিজেস (বিআইটিআইডি) ও জেনারেল হাসপাতালে। নমুনাও পরীক্ষা করত হাসপাতাল দুটি। কিন্তু সংক্রমণের হার বেড়ে যাওয়ায় চিকিৎসা সেবার পরিধি বাড়াতে যোগ করা হয় চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতাল।
প্রতিদিন করোনা উপসর্গ নিয়ে আসা রোগীদের প্রাথমিক পর্যায়ে ভর্তি করা হয় চমেকের ফ্লু-কর্নার অথবা এক নম্বর ওয়ার্ডে। এখানে রোগীদের চাপ এতটাই বেশি যে শয্যা না পাওয়া রোগীদের রাখা হয়েছে ফ্লোরে মাদুর বিছিয়ে। অনেকটা গাদগাদি করে শুয়ে থাকা এসব রোগীর বেশিরভাগেরই প্রয়োজন অক্সিজেন সাপোর্ট । যার সংকুলান দিতে হিমশিম খাচ্ছে খোদ হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। যার দরুন শ্বাসকষ্ট নিয়ে আসা বেশিরভাগ রোগীই মারা যাচ্ছেন অক্সিজেন কিংবা আইসিইউ সাপোর্টের অভাবে। সরকারি এই হাসপাতালে এসে বিনা চিকিৎসায় মৃত্যুবরণ করা এসব রোগীর স্বজনদের কষ্ট যেন পিছু ছাড়ে না। স্বজনের লাশের ডেথ সার্টিফিকেট পেতে পোহাতে হয় ভোগান্তি। নানা ভয়ভীতি ও করোনার নানান ভয় দেখিয়ে লাশ বুঝিয়ে দিতে স্বজনদের কাছ থেকে ৫০০-১০০০ টাকা চেয়ে বসে ওয়ার্ড বয়রা। আর না দিলে লাশ দিতে ৭-৮ ঘণ্টা দেরি হবে বলে জানায় ওয়ার্ড বয়রা। চমেক হাসপাতালে বাবাকে হারাবার পর এমনই তিক্ত অভিজ্ঞতার কথা পূর্বকোণকে জানালেন সন্তান শাকিল।
শাকিল বলেন, ‘গত বুধবার রাত ২ টার দিকে বাবার শ্বাসকষ্ট শুরু হয়। প্রথমেই আগ্রাবাদ মা ও শিশু হাসপাতালে নিয়ে যাই বাবাকে। সেখানে কর্তব্যরত চিকিৎসক বাবাকে আইসিইউতে ভর্তি করার পরামর্শ দেন। কিন্তু চট্টগ্রামের কোথাও কোন হাসপাতালে আইসিউ খালি নেই। নিরুপায় হয়ে নিয়ে গেলাম জেনারেল হাসপাতালে। সেখানেও করোনা পরীক্ষা করাইনি বলে এবং সিট স্বল্পতার কথা বলে ভর্তি নেয়নি বাবাকে। সর্বশেষ চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যাই। জরুরি বিভাগের কর্তব্যরত চিকিৎসক বাবাকে না দেখেই বললেন এক্সরে করে রিপোর্ট নিয়ে এক নম্বর ওয়ার্ডে ভর্তি হতে। রিপোর্ট নিয়ে এক নম্বর ওয়ার্ডে কর্তব্যরত ডাক্তারদের দেখাতেই কিছু ওষুধ লিখে দেন তারা। আমার বাবাকে একবারও দেখেননি ওখানে কর্তব্যরত ডাক্তাররা। অক্সিজেন সার্পোট নিতে বললেও অক্সিজেন নেই বলে জানায় ওয়ার্ড বয়। শেষ পর্যন্ত অক্সিজেন কিনে বাবাকে সাপোর্ট দিই। একপর্যায়ে বাবার অবস্থা বেশি খারাপ হলে আইসিইউ’র প্রয়োজন হয়। কিন্তু সেই সুযোগ কপালে জোটেনি। বৃহস্পতিবার রাত আড়াইটায় মারা যায় বাবা। এরপর তার ডেথ সার্টিফিকেট নিতে আমার বন্ধু তুষারের কাছে এক হাজার টাকা দাবি করে ওই ওয়ার্ডের কর্তব্যরত এক ওয়ার্ড বয়’।
এ বিষয়ে শাকিলের বন্ধু তুষার পূর্বকোণকে বলেন, ‘চাচা মারা যাওয়ার পর ডাক্তার ডেথ সার্টিফিকেট লিখে দেন এবং সনদটি নার্সদের কাছে নিয়ে যেতে বলেন। এছাড়া পুরো পরিবারকে ১৪দিনের আইসোলেশনে থাকার পরামর্শ দেন। কারণ চাচার মৃত্যু হয়েছে করোনা উপসর্গ নিয়ে। ডেথ সার্টিফিকেট নিয়ে নার্সদের কাছে গেলে নার্স সেই সার্টিফিকেট ওয়ার্ড বয় কাইয়ুমের কাছে দেন এবং ওনার সাথে কাজ সম্পন্ন করে লাশ নিয়ে দাফন করতে বলেন। এই কাগজ হাতে নেওয়ার পর থেকেই চেঞ্জ হয়ে যায় কাইয়ুমের কথাবার্তা। কথায় কথায় রাগান্বিত হয়ে পড়ে সে। শেষপর্যায়ে বলে ফেলে টাকা না দিলে লাশ নিতে ৭-৮ ঘণ্টা সময় লাগবে। হাজার খানেক টাকা দিলে দ্রুত কাজ হয়ে যাবে এবং লাশ নিয়ে যেতে পারবো। তাকে টাকা দেওয়ার কথা বলে কাজ সম্পন্ন করি। পরে ৩শ টাকা দিতে চাইলে সে রাগান্বিত হয়ে টাকা না নিয়ে চলে যায়। এই ওয়ার্ড বয় একই কাজ অন্য রোগীর স্বজনদের সাথেও করেছে’।
এদিকে অভিযোগকারী ব্যক্তির সাথে কথা বলে ওয়ার্ড বয় কাইয়ুমের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণের আশ্বাস দেন চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগ্রেডিয়ার জেনারেল এস এম হুমায়ন কবির।

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট