চট্টগ্রাম শুক্রবার, ২৯ মার্চ, ২০২৪

বাঁচার ‘আকুতি’ হালদা-কর্ণফুলীর

মোহাম্মদ আলী

৫ জুন, ২০২০ | ৫:৫৪ অপরাহ্ণ

চট্টগ্রাম মহানগরীর ৬০ লাখ মানুষের সুপেয় পানির প্রধান উৎস হালদা ও কর্ণফুলী নদী। এ দুইটি নদী থেকে দৈনিক ৩২ কোটি লিটার পানি উত্তোলন করে চট্টগ্রাম ওয়াসা। ভবিষ্যতে অপর তিনটি প্রকল্পের মাধ্যমে দৈনিক আরো ২৯ কোটি লিটার পানি উত্তোলনের জন্য প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে সেবা সংস্থাটি। কিন্তু নগরীর সুপেয় পানির প্রধান উৎস এ দুইটি নদী ক্রমাগত দূষণের শিকার হচ্ছে। এতে হুমকির মুখে পড়ার শঙ্কা দেখা দিয়েছে ওয়াসার সুপেয় পানির। শিল্প কারখানা ও নগরীর গৃহস্থালীর তরল বর্জ্য পড়ে ভয়াবহ দূষণের শিকার হচ্ছে হালদা ও কর্ণফুলী নদী। দূষণের মধ্যে আজ ৫ জুন পালিত হচ্ছে বিশ্ব পরিবেশ দিবস। এবার দিবসের প্রতিপাদ্য বিষয়- ‘প্রকৃতির জন্য সময়’।

চট্টগ্রামের লাইফলাইন খ্যাত কর্ণফুলী নদী। যেটির পাড়ে গড়ে ওঠেছে দেশের অর্থনীতির প্রাণকেন্দ্র ‘চট্টগ্রাম বন্দর’। অপরদিকে রুই জাতীয় (রুই, কাতলা. মৃগেল ও কালিবাউশ) মাছের প্রাকৃতি মৎস্য প্রজনন কেন্দ্র হালদা। দুইটি নদী এসব বিশেষত্বে খ্যাতি অর্জন করলেও নগরীর সুপেয় পানির জন্য হয়ে ওঠেছে একমাত্র নির্ভরতার প্রতীক। এ দুইটি নদীর পানি ছাড়া নগরীতে সুপেয় পানি সরবরাহ কল্পনাও করতে পারে না চট্টগ্রাম ওয়াসা। তাই নদী দুটিকে রক্ষায় প্রতিনিয়ত দাবি উঠছে সুশীল সমাজের পক্ষ থেকে। এরপর বন্ধ হচ্ছে না নদী দূষণ। প্রতিদিনই কোটি কোটি লিটার তরল ও হাজার হাজার মেট্রিক টন কঠিন বর্জ্য পড়ছে এ দুইটি নদীতে। অধিকাংশ শিল্পকারখানায় ইটিপির ব্যবস্থা না থাকায় এ সমস্যা চলে আসছে।
নগরীর তরল বর্জ্য পরিশোধনের জন্য প্রতিষ্ঠার ৫৬ বছর পর স্যুয়ারেজ প্রকল্প হাতে নিয়েছে চট্টগ্রাম ওয়াসা। প্রতিষ্ঠানটি এজন্য একটি মাস্টার প্ল্যানও তৈরি করে। এ প্রকল্প পরিচালক ও ওয়াসার তত্ত¡াবধায়ক প্রকৌশলী মোহাম্মদ আরিফুল ইসলাম দৈনিক পূর্বকোণকে বলেন, ‘হালদা ও কর্ণফুলী নদীতে বিভিন্ন নালা ও খাল হয়ে নগরীর দৈনিক ৩৩ কোটি ১০ লাখ লিটার তরল বর্জ্য পড়ছে। ওয়াসার স্যুয়ারেজ প্রকল্প না থাকায় সব তরল বর্জ্য সরাসরি নালা ও খাল হয়ে হালদা ও কর্ণফুলী নদীতে পড়ছে। এতে এ দুটি নদী ভয়াবহ দূষণের শিকার হচ্ছে। হুমকির মুখে পড়েছে সুপেয় পানি, মাছসহ নদীর জীববৈচিত্র্য। অথচ এ দুটি নদী ওয়াসার সুপেয় পানির প্রধান উৎস। নদীর দূষণ রক্ষা চট্টগ্রাম ওয়াসা তিন হাজার ৮০৮ কোটি ৫৮ লাখ ৭৭ হাজার টাকা ব্যয়ে একটি স্যুয়ারেজ প্রকল্প গ্রহণ করে। প্রকল্পটি বাস্তবায়ন শেষ হলে নগরীতে এটিই হবে স্যুয়ারেজের ওপর ওয়াসার প্রথম প্রকল্প।
তিনি বলেন, ‘ওয়াসার স্যুয়ারেজ ব্যবস্থা না থাকায় নগরীর সব রকমের বর্জ্য সরাসরি নালা ও খাল হয়ে হালদা ও কর্ণফুলী নদীতে পড়ছে। এতে দূষিত হচ্ছে নদীর পানি। অথচ এ দুটি নদী ওয়াসার সুপেয় পানির প্রধান উৎস। বর্তমানে কর্ণফুলী ও হালদা নদী থেকে দৈনিক ৩২ কোটি লিটার পানি উত্তোলন করা হচ্ছে। উত্তোলনকৃত পানির মধ্যে হালদা থেকে মদুনাঘাট প্রকল্পের আওতায় ৯ কোটি লিটার ও মোহরা পানি শোধনাগারের জন্য ৯ কোটি লিটার এবং কর্ণফুলী পানি সরবরাহ প্রকল্প-১ এর ১৪ কোটি লিটার। আগামীতে কর্ণফুলী পানি সরবরাহ প্রকল্প-২ এর অধীনে দৈনিক আরো ১৪ কোটি লিটার, বোয়ালখালী ভান্ডালজুরি প্রকল্পের অধীনে ৬ কোটি লিটার পানি উত্তোলন করা হবে। এছাড়া মোহরা প্রকল্প দ্বিগুণ করা হলে সেখান থেকেও আরো ৯ কোটি লিটার পানি উত্তোলন করা হবে। সবমিলে ওয়াসা পানি উত্তোলন করবে দৈনিক ৬১ কোটি লিটার। তাই বিষয়টির গুরুত্ব অনুধাবন করে স্যুয়ারেজ প্রকল্পটি গ্রহণ করা হয়েছে। প্রকল্পটি বাস্তবায়ন নদী দুইটি দূষণ কিছুটা কমবে।’
হালদা বিশেষজ্ঞ ও চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় প্রাণিবিদ্যা বিভাগের প্রফেসর ড. মো. মনজুরুল কিবরীয়া দৈনিক পূর্বকোণকে বলেন, ‘বৈশ্বিক মহামারি করোনার কারণে বেশিভাগ শিল্প কারখানা বন্ধ থাকায় নদী দুইটি দূষণ কিছুটা কমেছে। কিন্তু এটি স্থায়ী সমাধান নয়। করোনা পরবর্তী সময়ে এ দুইটি নদী দূষণমুক্ত নিয়ে নতুন পরিকল্পনা করতে হবে। একই সাথে চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের বর্জ্য ব্যবস্থাপনার পরিবর্তন আনতে হবে। সুইপার বেইজ বর্জ্য ব্যবস্থাপনা বাদ দিয়ে প্রযুক্তি নির্ভর করতে হবে।’

পূর্বকোণ/আরআর

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট