চট্টগ্রাম মঙ্গলবার, ১৯ মার্চ, ২০২৪

সর্বশেষ:

স্বাস্থ্যবিধি মানার প্রবণতা কমছে

মোহাম্মদ আলী

৩ জুন, ২০২০ | ৭:২৬ অপরাহ্ণ

চট্টগ্রামে করোনায় মৃত্যু ও শনাক্তের সংখ্যা প্রতিদিনই লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ছে। তাতে মানুষের ঝুঁকি বাড়লেও স্বাস্থ্যবিধি না মানার প্রবণতা ক্রমশঃ বৃদ্ধি পাচ্ছে। মাস্ক ব্যবহার করছে না অর্ধেকেরও বেশি মানুষ। সামাজিক দূরত্ব মানছে না অনেকে। নগরীর ইপিজেড এলাকা, রেয়াজ উদ্দিন বাজারসহ বিভিন্ন মার্কেট, বাস স্টেশন, কাঁচাবাজার, গণপরিবহন, সরকারি-বেসরকারি অফিসসহ বিভিন্ন এলাকায় এ চিত্র দেখা গেছে।

দীর্ঘ দুই মাসের বেশি সময় ধরে বন্ধ থাকার পর গত সোমবার থেকে শুরু হয়েছে গণপরিবহন চলাচল। সরকারের পক্ষ থেকে স্বাস্থ্যবিধি মেনে এসব পরিবহন পরিচালনার নির্দেশনা থাকলেও তা পুরোপুরি পালন করতে দেখা যায়নি। নগরীর রেয়াজ উদ্দিন বাজারসহ কয়েকটি মার্কেট খুললেও সেখানে সামাজিক দূরত্ব মানা হচ্ছে না। স্বাস্থ্যবিধির তোয়াক্কা করতে দেখা যায়নি নগরীর ইপিজেড এলাকায়। সকালে কর্মরত শ্রমিক-কর্মচারীরা ইপিজেডে প্রবেশের সময় জটলাবদ্ধ হয়ে প্রবেশ করছে। একই চিত্র দেখা গেছে বিকেলে বের হওয়ার সময়েও। সেখানে স্বাস্থ্যবিধি পালন হচ্ছে কি না সেটি দেখার জন্য সরকারের সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানগুলোর কোনো মনিটরিং চোখে পড়েনি।
মুন্নী আকতার নামে পোশাক কারখানার এক কর্মচারি আক্ষেপ করে বলেন, ‘মানুষের চলাফেরা দেখলে মনে হবে যেন কিছুই হয়নি। করোনার কোন সমস্যা এখানে নেই। কেন জানি বেশিভাগ মানুষ স্বাস্থ্যবিধি তোয়াক্কা করছে না। এটি হিতে বিপরীতও হতে পারে। নিজের অসাবধানতার জন্য পরিবারের অন্যান্য সদস্যরাও হুমকির মধ্যে পড়তে পারে। তাছাড়া সরকারি কোন প্রতিষ্ঠানও এখানে স্বাস্থ্যবিধি পালনে বাধ্য করছে না।’
নগরীর রেয়াজ উদ্দিন বাজারের অলিগলিতে বিপুল সংখ্যক ক্রেতা দেখা গেছে। সংকীর্ণ গলির কারণে ক্রেতা সাধারণের মধ্যে কোন ধরনের সামাজিক দূরত্ব দেখা যায়নি। এতে করোনার ঝুঁকি বাড়ার শঙ্কা দেখা দিয়েছে।
নগরীর বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, গুরুত্বপূর্ণ প্রতিটি মোড়ে জটলা পাকিয়ে দাঁড়িয়ে আছে গণপরিবহন। যাত্রীরা গাড়িতে দাঁড়িয়েছে গাদাগাদি করে। বিশেষ করে নিউম্যান হলার ও টেম্পুগুলো কোন ধরনের নিয়ম কানুন তোয়াক্কা করছে না। এসব যানবাহনে অতিরিক্ত যাত্রী পরিবহন করা হচ্ছে। যাত্রীদের মধ্যে অনেকের মাস্কও ছিল না। এতে ঝুঁকির মধ্যে পড়ছে অন্যান্য যাত্রীরা।
সরেজমিনে দেখা গেছে, বাসে হেলপাররা আগের মতো জোর করে টেনে টেনে যাত্রী তুলছেন। এ সময় কোনো পরিবহনে জীবাণুনাশক ছিটাতে দেখা যায়নি। তবে পরিবহনগুলো বের হওয়ার আগেই জীবাণুমুক্ত করে রাখা হয়েছে বলে দাবি পরিবহন শ্রমিকদের। জানতে চাইলে সিটি বাসের চালকের সহযোগী মুজিবর রহমান বলেন, ‘গতকালই আমরা আমাদের সব বাস জীবাণুমুক্ত করেছি। এখনো হ্যান্ড স্যানিটাইজার পাইনি। তাই সেটা নিয়ে বের হতে পারিনি। তবে যাত্রীদের আমরা ধীরে বাসে উঠাচ্ছি এবং নামাচ্ছি।’
ষোলশহর ২নং গেট এলাকায় বাসের যাত্রী আবদুল সাত্তার বলেন, ‘দেওয়ানহাট থেকে বহদ্দারহাট যেতে বাসে উঠেছি। আসলে বাসে যেসব স্বাস্থ্যবিধির কথা বলা হয়েছে সেগুলো পুরোপুরি পালন করা হচ্ছে না। যেখানে ঘন ঘন আসনগুলো জীবাণুনাশক দিয়ে স্প্রে করার দরকার সেখানে দিনে একবারও করা হচ্ছে কিনা সন্দেহ রয়েছে।’
নগরীর মেট্রো প্রভাতীর বাসের এক চালক জানান, সাধারণ মানুষও খুব বেশি পরিবহনে উঠছে না। যাদের একান্ত প্রয়োজন তারাই গণপরিবহন ব্যবহার করছেন। অবশ্য স্বাস্থ্যবিধি মানতে দেখা গেছে মেট্রো প্রভাতীসহ বেশ কয়েকটি গণপরিবহনে। মুরাদপুর এলাকায় একটি বাসের চালকের সহযোগীর হাতে জীবাণুনাশক স্প্রে দেখা গেছে। যাত্রীরা বাসে ওঠার সময় সবার হাতে প্রয়োজন মতো স্প্রে করে দেওয়া হচ্ছে। বাসটির ভিতরেও যাত্রীদের আসন ফাঁকা রেখে বসতে দেখা গেছে।
নগরীর কাঁচাবাজারগুলোর অবস্থা আরো ভয়াবহ। বেশিরভাগ ক্রেতা-বিক্রেতার মধ্যে সামাজিক দূরত্ব না মানার প্রবণতা দেখা গেছে।
এ প্রসঙ্গে বহদ্দারহাট এলাকার বাসিন্দা শফিউল আজম বলেন, ‘ক্রেতা-বিক্রেতার মধ্যে সামাজিক দূরত্ব দূরে থাক করোনা আক্রান্ত হওয়া থেকে নিজেদের রক্ষা করতে কোনো বিধিই মানতে দেখা যাচ্ছে না। অনেকের মাস্ক থাকলেও সেটি সঠিকভাবে ব্যবহার করছে না।

পূর্বকোণ/আরআর

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট