চট্টগ্রাম বুধবার, ২৪ এপ্রিল, ২০২৪

সর্বশেষ:

নির্দেশনা উপেক্ষিত : পরিবহন শ্রমিকদের লাগাম না টানলে সর্বনাশ

২ জুন, ২০২০ | ৭:০৩ অপরাহ্ণ

আল-আমিন সিকদার : সাধারণ ছুটি তুলে নেওয়ার পর গতকাল সোমবার ( ১ জুন) আনুষ্ঠানিকভাবে ঘোষণা দিয়ে নগরীর সড়কে নেমেছে গণপরিবহন। ৩১ মে থেকে সড়কে নামার অনুমতি পেলেও নগর ট্রাফিককে যাত্রীদের স্বাস্থ্য সুরক্ষা নিশ্চিত করার প্রতিশ্রুতি দিয়ে গতকাল দীর্ঘ দুই মাসেরও বেশি সময় পর সড়কে চাকা ঘুরালো গণপরিবহন মালিকরা। তবে চালক- হেলপারের বাধ্যতামূলক মাস্ক পরিধান, যাত্রীদের হাতে ও পরিবহনে জীবানুনাশক স্প্রে করার পাশাপাশি প্রতি দুই সিটে একজন করে যাত্রী উঠানোর নির্দেশনা থাকলেও তা মানেনি পরিবহন শ্রমিকরা। এমনকি ৬০ শতাংশ ভাড়া বৃদ্ধির অনুমতি পেয়ে যাত্রীদের কাছ থেকে ডাবল ভাড়া আদায় করেছে তারা। গতকাল (সোমবার) গণপরিবহনের এমন বিশৃঙ্খলার চিত্র উঠে আসে পূর্বকোণের ক্যামেরায়। তবে এর ঠিক ভিন্ন চিত্র ছিল দূরপাল্লার বাসগুলোতে। অর্ধেক যাত্রী নিয়ে নগর ছাড়তে দেখা গেছে দূরপাল্লার এসব বাসগুলোকে। যদিও দূরপাল্লার বেশকিছু লোকাল বাস মানেনি সরকারি নির্দেশনা। এতে করোনা সংক্রমণের ঝুঁকি আরও বাড়ছে বলে মন্তব্য করেছেন স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা।
নগরীর ইপিজেড মোড়ে সরেজমিনে দেখা যায়, যাত্রীদের স্বাস্থ্য সুরক্ষায় চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশের (সিএমপি) দেওয়া নির্দেশনাকে বুড়ো আঙুল দেখিয়ে সড়কে দাপিয়ে বেড়াচ্ছে গণপরিবহনগুলো। শুধু কি তাই, অতিরিক্ত ভাড়া নেওয়ার পাশাপাশি অতিরিক্ত যাত্রীও তুলতে দেখা গেছে তাদের। যাত্রীদের স্বাস্থ্য সুরক্ষা নিশ্চিত করতে বাসে প্রতি দুই সিটে একজন যাত্রী বসানোর নির্দেশনা থাকলেও উল্টো ঝুলিয়ে যাত্রী নিতে দেখা গেছে গণপরিবহণগুলোকে। চালক-হেলপারের মুখে মাস্ক পরিধান বাধ্যতামূলক হলেও বহু চালক-হেলপারের মুখই ছিল খালি। হেলপারের হাতে জীবানুনাশক স্প্রে থাকার কথা থাকলেও অধিকাংশই মানেননি এ নির্দেশনা। এমনকি ৬০ শতাংশ ভাড়া বাড়ানোর সরকারি নির্দেশনা উপেক্ষা করে দ্বিগুণ ভাড়া আদায় করতে দেখা গেছে তাদের। এ নিয়ে যাত্রীদের অভিযোগেরও কোন কমতি ছিলনা।
মামুন নামে এক যাত্রী পূর্বকোণকে বলেন, ‘আমি অক্সিজেন থেকে নিউ মার্কেট যেতে ৩ নং বাসে উঠলাম। উঠে দেখি সরকার যে নির্দেশ দিয়েছে তা অমান্য করে যাত্রী নেওয়া শুরু করছে তারা। বাড়া বাড়তি নিলেও যাত্রী আগের মত নিচ্ছে। প্রতি সিটে মানুষ বসাচ্ছে, প্রতিবাদ করলেও কোন কাজ হচ্ছে না। প্রশাসনের কাছে অনুরোধ নগরীর বাসগুলোকে নিয়ন্ত্রণে আনতে যেন নিয়মিত মনিটরিং করা হয়। অন্যথায় স্বাস্থ্য সুরক্ষার নামে যাত্রীদের পকেট কেটে করোনা উপহার দেওয়ার মত ভয়াবহ অবস্থা হবে’।
অতিরিক্ত যাত্রী তুলতে থাকা ১০ নম্বর রুটের এক বাসের হেলপারের কাছে নির্দেশনা অমান্য করার কারণ জানতে চাইলে তিনি পূর্বকোণকে বলেন, ‘সারাদিন কম যাত্রী নিয়ে গাড়ি টানছি। এখন গার্মেন্টস ছুটির সময় যাত্রী তোলতে না পারলে আর পারবো না। তাই সিটের অধিকও যাত্রী তুলতে হচ্ছে’। ভাড়া দ্বিগুণ করার বিষয়ে জানতে চাইলে এ হেলপার বলেন, ‘সরকারতো ভাড়া বাড়াইছে। তাই আমরা বাড়াইছি’। সরকার ৬০ শতাংশ বাড়ানোর অনুমতি দিলেও কেন দ্বিগুণ ভাড়া নিচ্ছেন জানতে চাইলে প্রতিবেদককে এড়িয়ে যায় এ হেলপার।
এ সময়ে গণপরিবহনের এ বিশৃঙ্খলা দেশকে আরও কঠিন বাস্তবতার মুখে ঠেলে দিবে বলে মন্তব্য করেছেন স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা। বিশেষজ্ঞরা বলেন, ‘গণজমায়েত হচ্ছে এ ভাইরাস ছড়িয়ে যাওয়ার সবচেয়ে বড় মাধ্যম। গণপরিবহন যেহেতু গণজামায়েত হওয়ার একটি মাধ্যম তাই লকডাউনের শুরুতেই বন্ধ করে দেয়া হয় দেশে গণপরিবহন চলাচল। জীবন-জীবাকার কথা ভেবে সরকার পুনরায় চালু করে দেয় বাস, ট্রেন ও লঞ্চ। তবে নির্দেশনা দেয়া হয় যাত্রীদের স্বাস্থ্য সুরক্ষা নিশ্চিত করার। প্রতি দুই সিটে একজন যাত্রী তোলার সরকারের যে নির্দেশনা তা অমান্য করে দেশকে ঝুঁকিতে ফেলে দিচ্ছে গণপরিবহন। এতে করে দ্রæত আক্রান্ত হওয়ার আশংকা রয়েছে। এটা নিয়ন্ত্রণে আনা না গেলে বাংলাদেশের জন্য ভয়াবহ পরিস্থিতি অপেক্ষা করছে বলে মন্তব্য করেন বিশেষজ্ঞরা।
চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন ট্রাফিক পুলিশের উপ-কমিশনার (বন্দর) মো. তারেক আহম্মেদ পূর্বকোণকে বলেন, ‘আজ প্রথমদিনই আমরা সড়কে ব্যাপক নজরদারি রেখেছি। এরমধ্যে নির্দেশনা অমান্যকারী বেশকিছু গণপরিবহনকে জরিমানাও করেছি। তবে বেশিরভাগ গণপরিবহন নিয়ম মেনেই যাত্রী আন-নেয়া করেছে’। দ্বিগুণ ভাড়া নেয়ার বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘সরকারের নির্দেশনা অনুযায়ী ৬০ শতাংশ বাড়তি ভাড়া নিতে পারবে। এর বেশি নিলে তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে’। যদি কেউ নির্ধারিত ভাড়ার বেশি চায় তাহলে কর্মরত ট্রাফিক সদস্যদের কাছে যাত্রীদের অভিযোগ করার অনুরোধ করেন এই কর্মকর্তা।

পূর্বকোণ/ আরআর

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট