চট্টগ্রাম শুক্রবার, ২৯ মার্চ, ২০২৪

হটস্পটে পরিণত চট্টগ্রাম: করোনার চিকিৎসা সরঞ্জামের সংকট

ইফতেখারুল ইসলাম

৩১ মে, ২০২০ | ৭:১৭ অপরাহ্ণ

ঢাকার পর বন্দর নগরী চট্টগ্রামে করোনাভাইরাসের হটস্পট হিসেবে আবির্ভূত হলেও এখানে চিকিৎসা সেবার পর্যাপ্ত সুযোগ এখনো গড়ে উঠেনি। সরকারিভাবে এখনো আসেনি করোনা রোগের ইনজেকশন রেমডেসিভির। করোনা হাসপাতালে নেই হাই ফ্লো ন্যাসাল ক্যানোলা এবং সেন্ট্রাল অক্সিজেন সাপ্লাই ব্যবস্থা। সারা চট্টগ্রামের জন্য আছে মাত্র ১০টি আইসিইউ বেড। অথচ চট্টগ্রামে আক্রান্তের সংখ্যা দুই হাজার অতিক্রম করেছে।
সচেতন মহলের অভিমত, জাতীয় রাজস্ব আয়ের প্রধান কেন্দ্র চট্টগ্রাম হলেও করোনা চিকিৎসা সেবায় সুযোগ প্রদানের ক্ষেত্রে বিমাতাসুলভ আচরণ করছে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়।
চট্টগ্রাম(আন্দরকিল্লা) জেনারেলহাসপাতালে ১০টি আইসিইউ বেডসহ মোট ১৪০ টি বেড রয়েছে। ফৌজদারহাট বিআইটিআইডি’তে ৩০ টি এবং চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ১০০ টি বেড থাকলেও রোগী ভর্তির জন্য সিট খালি নেই। পুরো চট্টগ্রামের জন্য আছে মাত্র ১০টি আইসিইউ বেড। কোন রোগীর জরুরিভাবে আইসিইউ সেবা প্রয়োজন হলে তা পাবার সুযোগ নেই বললেই চলে। যেকারণে অকালে ঝড়ে যাচ্ছে অনেক তাজা প্রাণ। চালুর অপেক্ষায় থাকা হলি ক্রিসেন্ট হাসপাতালে বেড হবে ৮০ টি। বেসরকারি ফিল্ড হাসপাতালে ৪০ টি বেড রয়েছে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে বিএমএ চট্টগ্রামের সাধারণ সম্পাদক ডা. ফয়সাল ইকবাল চৌধুরী পূর্বকোণকে জানান, চট্টগ্রামের জন্য মাত্র ১০টি আইসিইউ বেড আছে যা দিয়ে কোনভাবেই রোগীদের চাহিদা পূরণ করা সম্ভব নয়। তিনি বলেন, নেই পর্যাপ্ত সাধারণ বেডও। অবশেষে চট্টগ্রামের দুইটি বেসরকারি হাসপাতালে করোনা রোগীদের চিকিৎসা প্রদানের জন্য সরকার প্রজ্ঞাপণ জারি করলেও সেখানে কতটুকু স্বাস্থ্য সেবা মিলবে তা নিয়ে সন্দিহান একথা উল্লেখ করে বলেন, সরকারি চিকিৎসক আক্রান্ত হলে কিংবা এই রোগে মৃত্যুবরণ করলে সরকার যেসব আর্থিক প্রণোদনা এবং চিকিৎসা সেবা প্রদানের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছে তা বেসরকারি চিকিৎসকরা পাবেন না। কোন বেসরকারি হাসপাতালে সামান্য বেতন দিয়ে বেসরকারি হাসপাতালের চিকিৎসকরা ঝুঁকি নিতে আগ্রহ দেখাবেন না। কারণ একই ধরনের ঝুঁকি নিয়ে সরকারি চিকিৎসকরা যেখানে আর্থিক প্রণোদনা পাচ্ছেন সেখানে বেসরকারি চিকিৎসকরা বৈষম্যের শিকার হচ্ছেন। একইভাবে বৈষম্যের শিকার হচ্ছেন সরকারি হাসপাতালে এমডি, উচ্চতর ডিগ্রিতে অধ্যায়নরত চিকিৎসকরা। একইভাবে ইন্টার্নি চিকিৎসকরাও সরকারের আর্থিক প্রণোদনা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। করোনা চিকিৎসায় যারা নিয়োজিত হবেন সবাইকে একই ধরনের প্রণোদনা এবং সুযোগ-সুবিধা প্রদান না করলে বৈষম্যের কারণে অসন্তোষ তৈরি হবে। যার শিকার হবেন রোগীরা।
রেমডিসিভির,বিএমএ’র এই নেতা বলেন, চট্টগ্রাম শহরের জেনারেল হাসপাতাল, চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ এবং বিআইটিআইডি’তে নমুনা সংগ্রহ করা হচ্ছে। পতেঙ্গা থেকে ফতেয়াবাদ সব এলাকার মানুষকে লাইন দিয়ে এসব হাসপাতালে নমুনা প্রদান করার জন্য যেতে হচ্ছে। এর মধ্যে যারা পজিটিভ রোগী তারা বিভিন্ন গাড়িতে করে যাওয়ার সময় রোগটি ছড়াচ্ছেন। অপরদিকে, সন্দেহজনক যেসব রোগী আলোচ্য তিনটি হাসপাতপালে নমুনা দিতে যাচ্ছেন তাদের অনেকেই নেগেটিভ। কিন্তু লাইন ধরে নমুনা দিতে গিয়ে তাদের অনেকেই সেখান থেকে আক্রান্ত হয়ে আসছেন।
এই সমস্যার সমাধান করতে হলে চট্টগ্রাম শহরের অন্তত ১৪টি পয়েন্ট নমুনা সংগ্রহের কাউন্টার চালু করার পরামর্শ দিয়ে বলেন, তিনটি ওয়ার্ডের বাসিন্দাদের জন্যএকটি কাউন্টার খোলার সুযোগ আছে। সিটি কর্পোরেশনের স্বাস্থ্য বিভাগে ৪২ জন টেকনেশিয়ান আছে,আছে চিকিৎসক। তারা ওয়ার্ডভিত্তিক নমুনা সংগ্রহের কাউন্টার এবং চিকিৎসা সেবা দিলে ডেডিকেটেড করোনা হাসপাতালের উপর চাপ কিছুটা কমে যাবে।
এছাড়া সিটি কর্পোরেশন জেনারেল হাসপাতালকেও করোনা রোগীদের জন্য নির্ধারিত হাসপাতাল হিসেবে চালু করার সুযোগ আছে উল্লেখ করে বলেন, এজন্য সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় এবং সংস্থাসমূহকে আন্তরিক হতে হবে। হলি ক্রিসেন্ট হাসপাতালে সবকিছু চালু থাকলেও শুধুমাত্র চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারির অভাবে চালু করা যায়নি।
তিনি জানান, রেমডেসিভির ইনজেকশন, হাই ফ্লো ন্যাসাল ক্যানোলা এবং সেন্ট্রাল অক্সিজেন সাপ্লাই ব্যবস্থা খুবই জরুরি। বাণিজ্যিক রাজধানী চট্টগ্রামে এসব সুবিধা নেই।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে চট্টগ্রাম জেলা সিভিল সার্জন ডা. ফজলে রাব্বি পূর্বকোণকে বলেন, যেসব ঘাটতি আছে তা উর্দ্ধতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে। হলি ক্রিসেন্ট হাসপাতালে চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারির অভাবে চালু করতে না পারার বিষয়টি স্বীকার করে বলেন, সিটি কর্পোরেশন থেকে কর্মচারি সরবরাহের আশ্বাস দিয়েছে। আগামি সপ্তাহে ছয়টি নমুনা সংগ্রহের বুথ স্থাপনের আশ্বাসও দিয়েছে।
পূর্বকোণ/ এএ 

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট