চট্টগ্রাম মঙ্গলবার, ১৬ এপ্রিল, ২০২৪

সর্বশেষ:

দু’একদিনের মধ্যেই বাজার সরগরম হয়ে ওঠার আশা ব্যবসায়ীদের

ঈদের আমেজ কাটেনি খাতুনগঞ্জে

মুহাম্মদ নাজিম উদ্দিন

৩১ মে, ২০২০ | ১:১৮ অপরাহ্ণ

দেশের ভোগ্যপণ্যের সবচেয়ে বড় পাইকারি বাজার খাতুনগঞ্জে এখনো ঈদের আমেজ কাটেনি। দোকানপাট খোলা হলেও নেই বেচাকেনা। ব্যবসায়ীরা জানান, ক্রেতারা এখনো বাজারমুখী হয়নি। দু-একদিনের মধ্যেই বাজার সরগরম হয়ে ওঠবে বলে আশা করছেন তারা।

চাক্তাই-খাতুনগঞ্জ আড়তদার ও সাধারণ ব্যবসায়ী সমিতির সাধারণ সম্পাদক মো. মহিউদ্দিন বলেন, গত বৃহস্পতিবার থেকে সীমিত আকারে দোকানপাট খুলেছিল। আজকালের মধ্যে বাজারের সব দোকানপাট খুলেছে। তবে বেচাকেনা নেই। এখনো ঈদের আমেজ কাটেনি। ক্রেতারা বাজারমুখী হয়নি।

তিনি বলেন, ঈদের আগে করোনা সংক্রমণে ত্রাণ বিতরণ ও রমজান মাসকে ঘিরে ভোগ্যপণ্যের বাজারে ক্রেতার চাপ ছিল। ঈদের পর বেচাকেনার চাপ নেই। আশা করছি, আজ-কাল থেকে বেচাকেনা শুরু হবে।

ব্যবসায়ীরা জানান, লকডাউনের মধ্যে বন্দরে পণ্য খালাস স্বাভাবিক থাকায় ভোগ্যপণ্যের জোগান অনেকটা স্বাভাবিক ছিল। এখন গণপরিবহন চালু হওয়ার পর পণ্য সরবরাহ আগের তুলনায় স্বাভাবিক হয়ে ওঠবে। এছাড়াও ঈদের পর থেকে ক্রেতার চাপ না থাকায় পণ্য সরবরাহ বৃদ্ধি পেয়েছে। এতে সব ধরনের পণ্যের দাম এখন কমতির দিকে রয়েছে। বাজারে চাপ কমে আসায় পণ্যের দাম আরও কিছুটা কমার সম্ভাবনা রয়েছে বলে জানান তিনি।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ঈদের এক সপ্তাহ আগের তুলনায় ভোগ্যপণ্যের দাম কমতি রয়েছে। ডাল, তেল, চিনি থেকে শুরু পেঁয়াজ, আদা, রসুনের দাম কমে এসেছে। তবে পামওয়েলের দাম কিছুটা বেড়েছে। পণ্য সরবরাহ বৃদ্ধি ও বাজারে ক্রেতার চাপ কমে আসায় ভোগ্যপণ্যের দাম কমে এসেছে বলে জানায় ব্যবসায়ী-আমদানিকারকেরা।

করোনাভাইরাস ও রমজানকে ঘিরে ভোগ্যপণ্যের মধ্যে হু হু করে বেড়েছিল ডালের দাম। দুই মাস ধরে ডালের দাম বাড়তি ছিল। কিন্তু ঈদের কয়েকদিন আগ থেকে সব ধরনের ডালের দাম কমতি রয়েছে। ঈদের পর আরেক দফা কমেছে ডালের দাম।

পাইকারি বাজারে ছোলা-ডালের মতো চিনি ও চিড়ার দাম বাড়তি ছিল। করোনাভাইরাস সংক্রমণে ত্রাণ ও রোজায় উপলক্ষে চিড়ার দাম দ্বিগুনেরও বেশি বেড়েছিল। প্রতিবস্তা (৫০ কেজি) চিড়া মানভেদে ১৪-১৫’শ টাকা থেকে বেড়ে ২৭‘শ টাকা পর্যন্ত বিক্রি হয়েছিল। আজ (রবিবার) তা বিক্রি হচ্ছে ১৭‘শ টাকা দরে। ঈদের আগে তা বিক্রি করা হয়েছিল বস্তাপ্রতি ১৯‘শ টাকা থেকে দুই হাজার টাকা দরে। পাইকারি বাজারে চিনি বিক্রি হচ্ছে বস্তাপ্রতি ১৯৮০ টাকা থেকে ২০৫০ টাকা। ঈদের আগে তা ২১১৫ টাকা (কেজিতে ৫৭ দশমিক ১০ টাকা) দরে বিক্রি হয়েছিল।

ডাল ব্যবসায়ী অজয় দত্ত বলেন, বেচাকেনা একেবারেই কম। মানুষের ঘরে ঘরে এখনো ত্রাণের পর্যাপ্ত ডাল মজুত রয়েছে। 

করোনা সংক্রমনের পর ভোগ্যপণ্যের অন্যান্য পণ্যের সঙ্গে বেড়েছিল ভোজ্যতেলের দামও। ঈদের আগে পাম অয়েল বিক্রি হয়েছিল মণপ্রতি ২২৫০ টাকা দরে। তা বেড়ে আজ বিক্রি হয়েছে ২১৯০-২২৮০ টাকা দরে। খোলা সয়াবিনের দাম অপরিবর্তিত রয়েছে। মণপ্রতি বিক্রি হচ্ছে ৩২‘শ টাকা দরে।

পাইকারি বাজারে মসলা জাতীয় পণ্য আদা, রসুন ও পেঁয়াজের তেজিভাব ছিল দুই মাস ধরে। ঈদের আগ থেকে দাম কমতির দিকে রয়েছে। বাজারে এখন ভারতীয় পেঁয়াজের একচ্ছত্র প্রভাব। ভারতীয় আমদানি করা পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে কেজিপ্রতি ২৫-২৬ টাকা। ঈদের আগে তা ৩০-৩২ টাকায় বিক্রি হয়েছিল।

করোনো সংক্রমণের পর থেকে ভারত ও মিয়ানমার থেকে পেঁয়াজ আমদানি কমে যাওয়ায় পেঁয়াজের দাম দ্বিগুন বেড়ে যায়। গত সপ্তাহে ভারতীয় আমদানি করা ভালোমানের পেঁয়াজ বিক্রি হয়েছিল কেজিতে ৬০-৬৫ টাকায়। মিয়ানমারের পেঁয়াজ বিক্রি হয়েছিল ৫০-৫৫ টাকায়।

একইভাবে কমেছে আদা ও রসুনের দামও। পাইকারি বাজারে চীন থেকে আমদানি করা প্রতিকেজি রসুন বিক্রি হচ্ছে ৮০ টাকা দরে। ঈদের আগে তা বিক্রি হয়েছিল ১২০-১২৫ টাকায়। মধ্য রোজায় বিক্রি হয়েছিল ১৬০ টাকা। আদা বিক্রি হচ্ছে ১৪৫ টাকা দরে। ঈদের আগে ১৬০ টাকায় বিক্রি হয়েছিল। রোজায় শুরুতেই বিক্রি হয়েছিল আড়াইশ টাকা পর্যন্ত।  

পেঁয়াজের আড়তদার মো. জাবেদ ইকবাল বলেন, বাজারে এখন বেচাকেনা কম। ভারতীয় পেঁয়াজের আমদানি বেড়ে যাওয়ায় অন্যান্য দেশ থেকে আমদানি করা পেঁয়াজের কদর কমে গেছে। পর্যাপ্ত পরিমাণে ভারতীয় পেঁয়াজের আমদানি থাকায় পেঁয়াজের দাম আরও কমবে বলে আশা করছেন তিনি।

চাক্তাই-খাতুনগঞ্জ আড়তদার ও সাধারণ ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি মো. জাহাঙ্গীর আলম বলেন, প্রতি ঈদুল ফিতর ও কোরবানির ঈদের পর অন্তত এক সপ্তাহ বেচাকেনা স্থিমিত থাকে। দোকানপাট খুললেও বেচাকেনা খুবই কম। ক্রেতারা এখনো বাজারমুখী হয়নি। আশা করছি, দু-একদিনের মধ্যেই বাজারে প্রাণ ফিরে পারে।

পূর্বকোণ/পিআর

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট