চট্টগ্রাম মঙ্গলবার, ২৩ এপ্রিল, ২০২৪

সর্বশেষ:

স্বাস্থ্যবিধি মেনে গণপরিবহন চলাচলে সংশয়

স্বাস্থ্যবিধি মেনে গণপরিবহন চলাচল ‘অসম্ভব’ : অভিমত সংশ্লিষ্টদের

ইমরান বিন ছবুর

৩০ মে, ২০২০ | ৯:৩০ অপরাহ্ণ

আগামী সোমবার (১ জুন) থেকে সীমিত পরিসরে স্বল্প সংখ্যক যাত্রী নিয়ে গণপরিবহন চলাচল শুরু করার সিদ্ধান্ত হলেও স্বাস্থ্যবিধি মেনে এটা  কতোটা সম্ভব তা নিয়ে সংশয় প্রকাশ করেছেন পরিবহন সংশ্লিষ্টরা।

আবার  সীমিত আকারে পরিবহন চলাচলের বিষয়টিও রক্ষা করা ‘অসম্ভব’ বলে মন্তব্য করছেন কেউ কেউ। যদি কোনোভাবে সীমিত রাখার চেষ্টা করা হয়ও, সেক্ষেত্রে যাত্রীদের চরম দুর্ভোগ পোহাতে হবে বলে মনে করছে বাংলাদেশ যাত্রী কল্যাণ সমিতি।

অন্যদিকে, স্বাস্থ্যবিধি মানা না হলে পরিবহন শ্রমিকরা সবচেয়ে বেশি ঝুঁকিতে পড়বেন বলে আশঙ্কা করছেন পরিবহন শ্রমিকের নেতারা। তবে সীমিত পরিসরে চলাচল এবং স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার জন্য পরিবহন শ্রমিকদের সর্বাত্মক মোটিভেট করা হচ্ছে বলে জানান সিএমপি’র অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার (ট্রাফিক)।

বাংলাদেশ যাত্রী কল্যাণ সমিতির মহাসচিব মো. মোজাম্মেল হক চৌধুরী বলেন, বাংলাদেশের প্রেক্ষিতে আসলে পরিবহন সেক্টরে কোন ভাবেই সীমিত রাখা সম্ভব না। যদিও সরকার গণপরিবহন সীমিত আকারে চালুর কথা বলেছে। এটা আপনা-আপনি সীমিত থেকে অসীম হয়ে যাবে। চট্টগ্রামে এমনিতেই গণপরিবহন সংকট রয়েছে। তার মধ্যে যদি সীমিতভাবে গণপরিবহন চালু করা হয়, তাহলে যাত্রীদের ভোগান্তি চূড়ান্ত পর্যায়ে পৌঁছাবে।

তিনি আরো বলেন, করোনাভাইরাসের এই সংকটকালীন সময়ে স্বাস্থ্যবিধি অনুসরণের অজুহাতে একলাফে ভাড়া ৮০ শতাংশ বৃদ্ধির প্রস্তাব করেছে পরিবহন মালিকপক্ষ। সড়কে চাঁদাবাজি বন্ধের পদক্ষেপ না নিয়ে, জ্বালানি তেলের মূল্য না কমিয়ে, পরিবহন শ্রমিকের স্বাস্থ্যবিধির কোন প্রশিক্ষণ ছাড়া গণপরিবহন চালু হলে জনগণ চরম ঝুঁকির মধ্যে পড়বে।

নগরীর আগ্রাবাদের একটি শিপিং কোম্পানিতে চাকরিজীবী মো. শাকিল আহমেদ জানান, ঢাকা-চট্টগ্রাম বা জেলার বাসগুলোতে কিছুটা স্বাস্থ্যবিধি মেনে চললেও নগরীর বিভিন্ন রুটে চলাচল করা টেম্পো, হিউম্যান হলার, মিনি বাস, বাস কিভাবে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলবে? পরিবহন শ্রমিকরা স্বাস্থ্যবিধি সম্পর্কে কোন ধারণা আছে কিনা তাও ভাবার বিষয়। দেশে করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাব দেখা যাওয়ার আগে গণপরিহনে করেই অফিস যেতাম, যেখানে একজনের গায়ে অন্যজন পড়ার অবস্থা। সেখানে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলা প্রায় অসম্ভব ব্যাপার।

সীমিত পরিসরে পরিবহন চলাচল করলে যানবাহন সংকট দেখা দিবে কিনা জানতে চাইলে বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন শ্রমিক ফেডারেশন চট্টগ্রাম আঞ্চলিক কমিটির সভাপতি মো. মুসা বলেন, এখনো আদালত এবং শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খোলার সিদ্ধান্ত হয়নি। এছাড়া খুব বেশি প্রয়োজন ছাড়া মানুষ গণপরিবহন ব্যবহার করবে না। তাই স্বাস্থ্যবিধি মেনে এবং সীমিত পরিসরে গণপরিবহন চালানো সম্ভব হবে বলে মন্তব্য করেন এই শ্রমিক নেতা।

মো. মুসা আরো বলেন, বর্তমানে করোনাভাইরাস নামের যে অদৃশ্য মৃত্যু আমাদের পিছু নিয়েছে তা আমরা অনেকে বুঝতে চাই না। বিশেষ করে শ্রমিক শ্রেণির যারা আছে, তাদের চিন্তা হচ্ছে, কখন লকডাউন খুলে দিবে এবং তারা কাজে যাবে। তাদের কাছে জীবিকার মূল্য বেশি। তারা করোনাভাইরাসের চেয়েও কর্ম নিয়ে বেশি চিন্তিত।

পরিবহন শ্রমিকদের ঝুঁকির কথা উল্লেখ করে মো. মুসা বলেন, যদি পরিবহন শ্রমিকরা স্বাস্থ্যবিধি না মেনে গাড়ি চালায়, তাহলে যাত্রীদের তুলনায় চালক-হেলপাররা সবচেয়ে বেশি আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। কারণ একটি গণপরিবহনে সব ধরনের মানুষ উঠে। সুস্থ-অসুস্থ সবাই। তাছাড়া, গণপরিবহনে যাত্রী তোলার সময় জ্বর বা কাশি আছে কিনা তাও পরীক্ষা করে তোলা সম্ভব না। তাই এক্ষেত্রে, পরিবহন শ্রমিকদের ঝুঁকি সবচেয়ে বেশি। সিএমপি থেকে যে নির্দেশনা দেয়া হয়েছে, তার মধ্যে অন্যতম হচ্ছে- গাড়ি পরিচ্ছন্ন রাখা এবং গাড়িতে জীবাণুনাশক ছিটানো। ড্রাইভার, হেলপার এবং সুপারভাইজারকে অবশ্যই মাস্ক পরতে হবে। আর যাত্রীদের এক সিট বাদ দিয়ে অন্যসিটে বসতে হবে। সিএমপির সব নির্দেশনা মেনে গাড়ি চালানোর জন্য পরিবহন চালকদের নির্দেশনা দেয়া হয়েছে।

জানতে চাইলে সিএমপি’র অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার (ট্রাফিক) এস এম মোস্তাক আহমেদ খান জানান, সরকারের নির্দেশনা অনুযায়ী আগামী ১ জুন থেকে সীমিত পরিসরে এবং স্বাস্থ্যবিধি মেনে গণপরিবহন চলাচলের নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। সরকারের নির্দেশনা মানা এটা সবার সার্বিক দায়িত্ব। আমরা পরিবহন শ্রমিকদের সর্বাত্মক মোটিভেট করছি। তারা আগামীকাল ৩১ মে প্রেস ব্রিফিং করবে এবং ১ জুন থেকে সড়কে পরিবহন নামাবে।

তিনি আরো বলেন, সরকারের সেই নির্দেশনা গণপরিবহন শ্রমিকরা মানছে কিনা আমরা তা মনিটরিং করবো। যদি না মানার প্রমাণ পাওয়া যায় তাহলে আইন অনুযায়ী আমরা ব্যবস্থা নেব। মামলার প্রয়োজন হলে মামলা কিংবা গাড়ি আটক করতে হলে গাড়ি আটক করা হবে।

 

 

 

 

 

পূর্বকোণ/আরপি- ইমরান

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট