চট্টগ্রাম বৃহষ্পতিবার, ২৫ এপ্রিল, ২০২৪

সর্বশেষ:

ধর্মীয় রীতি অমান্যের অভিযোগে ৭৪ জনকে বেত্রাঘাত, আহত একজনের মামলা

চকরিয়া সংবাদদাতা

২৭ মে, ২০২০ | ১০:৩৬ অপরাহ্ণ

কক্সবাজারের পেকুয়া উপজেলার বারবাকিয়া ইউপি চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে বিভিন্ন বয়সী ৭৪ জনকে বেত্রাঘাতের অভিযোগ ওঠেছে। পবিত্র রমজানে ধর্মীয় রীতিনীতি পালন না করার অভিযোগ তুলে তাদের বেত্রাঘাত করা হয় বলে জানা গেছে। রমজান মাসে এই জামায়াত নেতার বেত্রাঘাতের শিকার হওয়া ব্যক্তিদের মধ্যে এ পর্যন্ত একজন আইনের আশ্রয় নেয়ায় ঘটনাটি জানাজানি হয়।

এ বিষয়ে কক্সবাজারের পুলিশ সুপার এবিএম মাসুদ হোসেন সাংবাদিকদের জানান, বাংলাদেশে সংবিধান রয়েছে, প্রচলিত আইন ও বিচার ব্যবস্থা রয়েছে। ধর্মীয় অনুশাসন পালনেরও ব্যক্তি স্বাধীনতা রয়েছে। তাই ইউপি চেয়ারম্যানের ব্যক্তিগত ইচ্ছাপূরণের কোন সুযোগ নেই।

তিনি বলেন, আহত ব্যক্তি আইনের আশ্রয় চেয়েছেন। তাই আইনগতভাবেই মামলা নেয়ার জন্য তিনি নির্দেশনা দিয়েছেন।

পেকুয়া-চকরিয়া আসনের এমপি জাফর আলম বলেছেন, করোনাকালের এমন সময়ে রাজনৈতিক উদ্দেশ্য চরিতার্থ করার কাজ মোটেই ভালো নয়।

পেকুয়া থানার পরিদর্শক (তদন্ত) মো. মিজানুর রহমান জানান, ঈদের আগের দিন চাঁদরাতে মসজিদে নামাজ পড়তে আসলে নুরুল ইসলামকে দেখেই ক্ষিপ্ত হয়ে উঠেন চেয়ারম্যান। একপর্যায়ে নিয়মিত এবাদত না করার অজুহাত তুলে মারধর ও একটি স্ট্যাম্পে স্বাক্ষর নেয় বলে দাবি করে প্রহৃত নুরুল ইসলাম থানায় এজাহার করেন। আজ বুধবার (২৭ মে) রাত সোয়া ৮টায় ফোনে ওসি মিজান বলেন এজাহারটি মামলা হিসেবে এন্ট্রি করা হয়েছে।

ওসি মিজান বিভিন্ন ব্যক্তি ও চেয়ারম্যানের কথার উদ্ধৃতি দিয়ে বলেন, রোজা-নামাজ আদায় না করাসহ পথে ঘাটে কেউ সিগারেট খেলেও তাদের পিটিয়ে শান্তি দেয় অভিযুক্ত চেয়ারম্যান।

এজাহার সূত্রে জানা যায়, ইউপি চেয়ারম্যান জামায়াতের রাজনীতি করেন তাই তার সাথে দীর্ঘদিনের রাজনৈতিক শত্রুতা রয়েছে। শত্রুতার কারণে নুরুল ইসলামকে মসজিদের নামাজের কাতারে দেখেই চেয়ারম্যান তেলেবেগুনে জ্বলে উঠে হুংকার ছেড়ে বলেন, ‘আওয়ামী লীগ যারা করে তারা নাফরমান ও ইহদী-নাসারা’। এরপরই চেয়ারম্যানের হুকুমে দুর্ধর্ষ শিবির ক্যাডার সেলিম ও আমানুল্লাহ আওয়ামী লীগ নেতা নুরুল ইসলামকে নামাজের কাতার থেকে টানা-হ্যাঁচড়া করে মসজিদের বারান্দায় নিয়ে আসে। মসজিদের বারান্দায় তাকে ফেলে চেয়ারম্যানসহ অন্যান্যরা তাকে বেদম মারধর করেন।

প্রহৃত আওয়ামী লীগ নেতা নুরুল ইসলাম বলেন, আমি যদি নামাজ না পড়ে থাকি তাহলে আমাকে মসজিদের ভিতর এশার নামাজের কাতারে এভাবে মারধর কেন করা হল? আমাকে রাজনৈতিক শত্রুতা হাসিলের উদ্দেশ্যেই মারা হয়েছে।

তিনি বলেন, চেয়ারম্যান বাহিনী নুরুল ইসলামের সপ্তম শ্রেণীতে পড়ুয়া দুই শিশুপুত্র বাচ্চু মিয়া এবং আব্বাছ মিয়াকেও মারধর করেছেন।

জানা গেছে, পেকুয়ার বারবাকিয়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মওলানা বদিউল আলম জিহাদী কট্টর জামায়াত রাজনীতির সাথে সম্পৃক্ত। উক্ত চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠেছে যে, তিনি দেশের প্রচলিত আইন-কানুনের তোয়াক্কাই করেন না। যখন তখন লোকজনদের ধরে এনে নিজের হাতেই শায়েস্তা করেন। চেয়ারম্যানের প্রকাশ্যে মারধর করার বিষয়টি এলাকায় সবারই জানা।

বুধবার বেলা আড়াইটার দিকে কক্সবাজারের এক সিনিয়র সাংবাদিককে মোবাইলে ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান মওলানা বদিউল আলম জিহাদী বলেন, আমার কাছে একটি ছোট তার আছে (প্লাস্টিক কভারের বৈদ্যুতিক তার)। সেটি দিয়ে আমি মারধর করে থাকি। এটা আমার দীর্ঘদিনের অভ্যাস। আমি এ পর্যন্ত দুইবারের নির্বাচিত চেয়ারম্যান।

কট্টর জামায়াতপন্থী ইউপি চেয়ারম্যান জিহাদী তার উপর আনা অভিযোগ অকপটে স্বীকার করে বলেন, ইউনিয়নটির ৫ নম্বর ওয়ার্ডে তিনি বসবাস করেন। এখানকার ফাঁসিয়াখালী নামের একটি বড় গ্রামে ৩টি সমাজ রয়েছে। এসব সমাজে যারা নামাজ পড়েন না, যারা রোজা রাখেন না এবং মুখে দাঁড়ি রাখেন না তিনি তাদের তালিকা করেছেন। এমন তালিকাভুক্ত ৭৪ জনকে তার কাছে থাকা তারটি দিয়ে একে একে সবাইকে মারধর করেছেন। চেয়ারম্যান জিহাদী মারধরের বিষয়টি জায়েজ বলে জানান।

পেকুয়া উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আবুল কাশেম বলেন, পেকুয়ার বারবাকিয়া জামায়াত-শিবিরের ঘাঁটি হিসেবে পরিচিত। জামায়াতপন্থী ইউপি চেয়ারম্যান করোনাকালের এমন পরিস্থিতিতে ধর্মীয় উন্মাদনা সৃষ্টির মাধ্যমে অস্থিতিশীল পরিস্থিতি সৃষ্টির চেষ্টা করলে প্রতিহত করা হবে।

কক্সবাজার জেলা প্রশাসক মো. কামাল হোসেন এ ব্যাপারে বলেন, ঘটনাটি তদন্তপূর্বক প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে নির্দেশ দিয়েছি।

 

 

 

পূর্বকোণ/জাহেদ-আরপি

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট