চট্টগ্রাম শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল, ২০২৪

কারাগারে কড়াকড়ি : ঈদে বন্দীর কাছে খাবার পাঠাতে পারবে না স্বজনরা

নাজিম মুহাম্মদ

২২ মে, ২০২০ | ৬:১১ অপরাহ্ণ

এবারের ঈদে কারাবন্দীর কাছে পৌঁছাবেনা স্বজনদের রান্না করা খাবার। তবে বন্দীদের জন্য কারা কর্তৃপক্ষ বিশেষ খাবারের ব্যবস্থা করবেন। কারা অভ্যন্তরে করোনা বিস্তাররোধে এমন ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। ঈদ উল ফিতর উপলক্ষে প্রতিবছর স্বজনরা চাইলে বন্দীদের জন্য বাসায় রান্না করা খাবার দিতে পারতো ঈদের দিন।
দিন যতই গড়াচ্ছে করোনাভাইরাসে আক্রান্তের তালিকা ততই বড় হচ্ছে। নতুন করে আক্রান্ত হচ্ছে প্রতিদিন। সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখতে খোলা মাঠে সরিয়ে নেয়া হয়েছে বাজার, চালানো হচ্ছে সচেতনতামূলক প্রচারণা, ঈদের ভরা মৌসুমেও ব্যবসায়ীরা স্বেচ্ছায় বন্ধ রেখেছে বিপণী বিতান। বলা হচ্ছে করোনা বিস্তার রোধে বেশ কিছু নিয়মের মধ্যে সামাজিক কিংবা শারীরিক দূরত্ব বজায় রাখা জরুরি। কিন্তু দেশের কারাগারগুলোতে সুরক্ষার কিছু নিয়ম পালন সম্ভব হলেও শারীরিক দূরত্বের বিষয়টি ইচ্ছে করলেও সম্ভব নয়। কারণ কারাগারগুলোতে সবসময় ধারণ ক্ষমতার চার/পাঁচগুণ বেশি বন্দী অবস্থান করে। সারাদেশের কারাগারগুলোর মতো চট্টগ্রাম কেন্দ্রীয় কারাগারও ব্যতিক্রম নয়। ১৮শ বন্দীর ধারণক্ষমতা সম্পন্ন এ কারাগারে গতকাল বৃহস্পতিবার বন্দীর সংখ্যা ছিলো সাত হাজারেরও বেশি। দেশের কয়েকটি বড় কারাগারে বন্দীদের মাঝে করোনা ধরা পড়লেও চট্টগ্রাম কেন্দ্রীয় কারাগার এখনো করোনামুক্ত রয়েছে।
চট্টগ্রাম কেন্দ্রীয় কারাগারের সিনিয়র জেল সুপার কামাল হোসেন বলেন, এটা প্রাথমিকভাবে শুনতে বন্দীদের জন্য কিছুটা বেদনাদায়ক মনে হতে পারে। তবে সবার সামগ্রিক উপকারের কথা চিন্তা করে আমরা ভিন্নভাবে ঈদ উদযাপনের চেষ্টা করছি। তবে অন্য বছরের চেয়ে এবার বন্দীদের জন্য উন্নতমানের ভোজের ব্যবস্থা করা হবে। অন্যান্য সুযোগ সুবিধাও থাকবে।
জেল সুপার বলেন, কারাভ্যন্তরে করোনারোধে আমার সর্বাত্মক চেষ্টা করছি। জীবাণু প্রতিরোধে সব ধরনের সুরক্ষা ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। কারাগারের ভেতরে তৈরি করা হয়েছে কোয়ারেন্টিন ও আইসোলেশন ওয়ার্ড।
নিয়ম অনুযায়ী বাইরে থেকে কিছু এনে বন্দীদের খাওয়ানো নিষেধ। তবে প্রতিবছর ঈদের দিন স্বজনরা বাসা থেকে রান্না করা খাবার এনে বন্দীদের খাওয়াতে পারতেন। সেই সুুযোগ এবার আর থাকছে না। করোনা সংক্রণের শঙ্কা থেকে ইতোমধ্যে বন্দীদের সঙ্গে স্বজনদের দেখা করার সুযোগও বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। তার পরিবর্তে বন্দীরা প্রতি সপ্তাহে মোবাইলে কারাগারের ভেতর থেকে স্বজনদের সঙ্গে কথা বলতে পারছেন। কারাগারে বন্দীদের পিসির (ব্যক্তিগত হিসাব) টাকা পাঠানোর পদ্ধতিতেও এসেছে পরিবর্তন। আগে কারাগারে গিয়ে টাকা দিয়ে রসিদ সংগ্রহ করতে হতো। করোনা সংক্রমণ শুরুর পর তাতেও পরিবর্তন আনা হয়েছে। নির্দিষ্ট নগদ অ্যাপসের নম্বরের মাধ্যমে টাকা পাঠানো যাচ্ছে।
চট্টগ্রাম কারাগারে কর্মকর্তা-কর্মচারী ও কারারক্ষীর সংখ্যা ৪৬০ জন। অনেকে সপরিবারে থাকেন। সবমিলিয়ে এ সংখ্যা প্রায় ৫শ। করোনা সংক্রমণের শুরু থেকে তারা সবাই এক প্রকার লকডাউনের অবস্থায় আছেন। কর্মরতদের বাজার ও নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্র সংগ্রহ করতে একজন ডেপুটি জেলারের নেতৃত্বে দুই কারারক্ষীর একটি কমিটি রয়েছে। তারা চাহিদা অনুযায়ী নিত্য প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র বাজার থেকে সংগ্রহ করে নিয়ে আসেন।
জানা যায়, প্রতিবছর ঈদের সময় শাস্তি বিবেচনা করে কিছু বন্দীকে মুক্তি দেওয়া হয়। কারা কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, এবার তা করা হচ্ছে না। এর কারণ হিসেবে কর্মকর্তারা বলেছেন, করোনা সংক্রমণ শুরু হলে এমনিতেই শাস্তি ও অন্যান্য বিষয় বিবেচনায় কিছু বন্দিকে মুক্তি দেওয়া হয়েছে। ফলে নতুন করে মুক্তি দেয়ার মতো তালিকায় কোন বন্দী নেই এবারের ঈদে। জেল সুপার বলেন, চট্টগ্রাম কারাগারে ধারণ ক্ষমতার চারগুণ বন্দী। ফলে এখানে কিছুতেই শতভাগ স্বাস্থ্যবিধি কিংবা সামাজিক দূরত্ব মেনে চলা সম্ভব নয়। এ অবস্থায় কারো মাঝে করোনা সংক্রমণ হলে তা দ্রুত অন্য বন্দীদের মাঝেও ছড়াতে পারে। তাই বাইরে থেকে যাতে কোনোভাবে করোনা সংক্রমিত ব্যক্তি কারা অভ্যন্তরে যেতে না পারেন, সে চেষ্টাই করছি।

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট