চট্টগ্রাম বৃহষ্পতিবার, ১৮ এপ্রিল, ২০২৪

সর্বশেষ:

হালদায় মা মাছের ডিম সংগ্রহ শুরু
হালদায় মা মাছের ডিম সংগ্রহ শুরু

হালদায় মা মাছের ডিম সংগ্রহ শুরু

রাউজান প্রতিনিধি

২২ মে, ২০২০ | ৪:৪৩ অপরাহ্ণ

দীর্ঘ প্রতীক্ষার পর দক্ষিণ এশিয়ার একমাত্র প্রাকৃতিক মৎস্য প্রজনন ক্ষেত্র হালদা নদীতে রুই, কাতলা, মৃগেল, কালিবাইশ (কার্প) জাতীয় মা মাছ ডিম দিয়েছে। এবার স্মরণকালের সর্বাধিক সময় ধরে মা মাছ ডিম দেয় বলে জানিয়েছেন সংগ্রহকারীরা। ডিম পাওয়ার পরিমাণও এ যাবৎকালের মধ্যে বড় ঘটনা। গত বছরের তুলনায় এবার ডিম সংগ্রহের পরিমাণ দুইগুণের বেশি বৃদ্ধি পেয়েছে। এ নিয়ে ডিম সংগ্রহকারী, নদী পাড়ের বাসিন্দা ও হালদা নদী নিয়ে কাজ করা বিভিন্ন টিমের সদস্যদের মাঝে আনন্দের শেষ নেই।
স্থানীয় ডিম সংগ্রহকারীসহ সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, আজ শুক্রবার (২২ মে) সকাল সাড়ে ৭টা থেকে নদীতে ডিম ছাড়তে থাকে মা মাছ। বিকেল সাড়ে ৩টা পর্যন্তও নদীর বিভিন্নস্থানে ডিম পাওয়া যায়। এর আগে বৃহস্পতিবার রাতে নমুনা ডিম দেয় মাছ। রাতে ঝড়ো বৃষ্টি ও জোয়ার সৃষ্টি হওয়ার পর শুক্রবার সকালে ব্যাপকভাবে ডিম ছাড়তে মা মাছ। এরপর ডিম সংগ্রহের উৎসবে মেতে উঠেন নদীর দুই পাড়ের (রাউজান-হাটহাজারী)’র কয়েকশ মৎস্যজীবি। তারা বৃহস্পতিবার থেকে ডিম সংগ্রহের প্রত্যাশায় নদীতে ডিম ধরার নৌকা, বালতি, জাল নিয়ে নদীতেই অবস্থান নিয়েছিল। অবশেষে যেন তাদের মুখে হাসি ফুটে শুক্রবার সকালে। তবে বেশি পরিমাণ ডিম সংগ্রহের পরও অনেক ডিম সংগ্রহকারীর মুখে হাসি নেই লকডাউনের কারণে। ডিম থেকে ফুটানো রেণুর ব্যাপক চাহিদা থাকলেও তা এবার ক্রেতা সংকটে আশঙ্কা করছেন সংগ্রহকারীরা। ফলে দাম হ্রাস পাওয়ার আশঙ্কা করছেন তারা।

একাধিক ডিম সংগ্রহকারীর সাথে কথা বলে জানা যায়, এবার নদীর যেসব এলাকায় বেশি ডিম পাওয়া গেছে তা হলো, নদীর রাউজান অংশের কাগতিয়ার আজিমের ঘাট, খলিফার ঘোনা, পশ্চিম গহিরা অংকুরী ঘোনা, বিনাজুরী, সোনাইর মুখ, আবুরখীল, খলিফার ঘোনা, সত্তারঘাট, দক্ষিণ গহিরা, মোবারকখীল, মগদাই, মদুনাঘাট, উরকিচর ও হাটহাজারী উপজেলা অংশের গড়দুয়ারা, নাপিতের ঘাট, সিপাহির ঘাট, আমতুয়া, মার্দাশাসহ বিভিন্ন এলাকায়।

রাউজান উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা পীযুষ প্রভাকর বলেন ‘সাড়ে ৭টা থেকে দুপুর তিনটার পর পর্যন্ত কমপক্ষে রাউজান-হাটহাজারীর ৬শ ১৫জন ডিম সংগ্রহকারী নদী থেকে মা মাছের নিষিক্ত ডিম সংগ্রহ করেছেন। একেকজন ডিম সংগ্রহকারী কয়েক কেজি করে ডিম পেয়েছে।’

তিনি জানান, এবার নদীতে ডিম পাওয়ার পরিমাণ গতবছরের চাইতে দ্বিগুণেরও বেশি বৃদ্ধি পেয়েছে। তিনটি বিভাগ অর্থাৎ মৎস্য অধিদপ্তর, আইডিএফ, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের হালদা রিচার্জ লেবটরীর প্রাথমিক হিসেবে অনুযায়ী, এবার ডিম সংগ্রহের পরিমাণ ২৫ হাজার ৫শ ৩৬ কেজি। যা গতবছর ছিল ৮ হাজার কেজি।’

তিনি আরো জানান, ডিম থেকে রেণু ফোটানোর জন্য রাউজানের মোবারেক খীলে ১টি, হাটহাজারী উপজেলায় ৩টি হ্যাচারী এবং রাউজানের বিভিন্ন এলাকায় ৬৮ ও হাটহাজারীতে অর্ধশতাধিকের বেশি কুয়া প্রস্তুত রাখা হয়।’
রাউজান অংশের নদী পাড়ের ডিম সংগ্রহকারী মো. হালিম বলেন ‘আমি সকাল থেকে তিন বালতিতে প্রায় দুই-তিন কেজি ডিম সংগ্রহ করতে পেরেছি।’ হালদা পাড়ের বাসিন্দা ও হাটহাজারী মদুনাঘাট এলাকার মো. শফি বলেন ‘নদীতে শত শত ডিমসংগ্রহকারীকে উৎসবমুখর পরিবেশে ডিম ধরতে দেখে খুব ভালো লেগেছে। সংগ্রহকারীদের মুখে হাসি ছিল।’

তবে নদী পাড়ের রাউজান পৌরসভা অংশের ডিম সংগ্রহকারী সুজন বড়ুয়া বলেন ‘ডিম সংগ্রহ হলেও তার রেণু ফুটিয়ে বিক্রি করা এবার সহজ হবেনা। কেননা হালদা নদীর রেণুর চাহিদা সারাদেশে থাকলেও এবার করোনাভাইরাসের লকডাউনের কারণে দূর-দূরান্তের ক্রেতারা রাউজান-হাটহাজারীর মৎস্যজীবিদের কাছে পৌঁছতে পারবেনা। দাম হয়তো আগের তুলনায় কমে যাবে। কাজেই ডিম থেকে রেণু ফুটিয়ে অনেকদিন সংরক্ষণ রাখতে হবে।’

হালদা নদীতে অবস্থান করা হালদা বিশেষজ্ঞ ও চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণীবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক ড. মনজুরুল কিবরিয়া দুপুর আড়াইটার দিকে বলেন ‘আমার দেখা এ যাবৎকালের সর্বাধিক সময় পর্যন্ত ডিম ছেড়েছে হালদার মা-মাছ। এখনো (শুক্রবার দুপুর তিনটা পর্যন্ত) ডিম সংগ্রহ করছেন নদীর রাউজান ও হাটহাজারীর দুই অংশের সংগ্রহকারীরা। ডিম সংগ্রহের পরিমাণ নিয়ে এনালাইসিস করছি।’

প্রসঙ্গত, হালদা নদীতে প্রতিবছর চৈত্র, বৈশাখ, জ্যৈষ্ঠ মাসের কোন একসময় প্রাকৃতিক বৈরী পরিস্থিতি যেমন ঝড়ো-বজ্র বৃষ্টি, পাহাড়ী ঢল সৃষ্টি হলে মা মাছ ডিম দেয়। নদীর দুই পাড়ের শত শত ডিম সংগ্রহকারী এ ডিম সংগ্রহ করে হ্যাচারী এবং নিজস্ব কুয়ায় (মাটির গর্ত) বিশেষ পদ্ধতিতে রেণু ফুটিয়ে মৎস্যজীবিদের কাছে চড়া দামে বিক্রি করে। প্রাকৃতিক পরিবেশে ডিম থেকে পাওয়া বলে হালদার রেণুর চাহিদা রয়েছে সারাদেশে। একারণে প্রতিবছর হাজার হাজার মৎস্যজীবি এ রেণু পেতে উন্মুখ থাকে। প্রতিবছর বিভিন্ন জেলা থেকে মৎস্যজীবিরা এসে এ রেণু সংগ্রহ করেন রাউজান-হাটহাজারীর সংগ্রহারীদের কাছ থেকে। উল্লেখ্য যে, এ ডিম সংগ্রহের উপরই হালদা পাড়ের অনেক পরিবারের সারা বছরের আয় রোজগার নির্ভর করে।

পূর্বকোণ/ এএ

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট