চট্টগ্রাম শনিবার, ২০ এপ্রিল, ২০২৪

সর্বশেষ:

করোনায় কেমন কাটবে ঘরবন্দী মানুষের ঈদ

মরিয়ম জাহান মুন্নী

২১ মে, ২০২০ | ৬:০৫ অপরাহ্ণ

আর কয়েক দিন পরেই শেষ হতে চলেছে পবিত্র মাহে রমজান। রমজানের শেষেই আসছে মুসলিম সম্প্রদায়ের সব চেয়ে বড় ধর্মীয় অনুষ্ঠান ঈদুল ফিতর। কিন্তু কেমন কাটবে এবারের নিম্ন, নিম্নমধ্যবিত্ত ও মধ্যবিত্ত শ্রেণির মানুষের ঈদ! কারণ বৈশ্বিক মহামারী করোনাভাইরাসের কারণে যেন স্তব্ধ আজ গোটা বিশ্ব। বেকারত্ব আর টানা লকডাউনে বন্দী লাখ লাখ মানুষের জীবন। তাই কারো মনে নেই কোনো আনন্দ। যে ঈদ নিয়ে সাধারণ মানুষের মনে থাকতো নানা স্বপ্ন আর আনন্দ। প্রিয় মানুষদের সাথে দেখা আর তাদের হাতে পছন্দের পোশাক তুলে দেয়ার আনন্দ এর তুলনা যেন হয় না কোনো কিছুর সাথে। কিন্তু এমন হাজারও স্বপ্ন ভেঙে গেছে বৈশ্বিক মহামারী করোনাভাইরাসের কারণে। কারো মধ্যে নেই কোনো প্রস্তুতি। তাই এবারের ঈদকে সামনে রেখে কথা হয় কিছু নিম্ন, নিম্নমধ্যবিত্ত ও মধ্যবিত্ত শ্রেণির  মানুষের সাথে। এবিষয়ে তাদের সাথে কথা বলে জানা যায় কিছু কষ্টের কথা।

মুসলিম সম্প্রদায়ের প্রতিটি মানুষের কাছে ঈদ একটি বিশেষ দিন। ঈদ মানে খুশি, ঈদ মানেই আনন্দ। ঈদ মানেই আপন মানুষদের কাছে পাওয়া। কারণ এ ঈদের ছুটিতে শহরমুখী মানুষ আনন্দের সাথে নতুন পোশাক কিনে ছুটে যায় প্রিয় মানুষদের কাছে। তাই এবারে কেমন প্রস্তুতি তাদের। জানতে কথা হয় নগরীর কয়েকজন পোশাক শ্রমিক, রিকশা চালক, বেসরকারি স্কুল শিক্ষক ও এক গৃহকর্মীর সাথে। পক্ষান্তরে বিলকিস আক্তার, জাহানারা বেগম, মোবারক আলি, রুবেল ও শাহানাজ বেগম সবাই একি কথা বললেন এবারের ঈদ নিয়ে।
চকবাজার এলাকার একটি প্রাইভেট স্কুল এন্ড কলেজের শিক্ষক মোবারক আলি (ছদ্মনাম) বলেন, দুই মেয়ে, মা-বাবা, এক ভাই ও স্ত্রীকে নিয়ে আমার সংসার। তিন মাসের বেশি সময় আমাদের স্কুল বন্ধ। নেই কোনো টিউশনিও। পরিবার নিয়ে কীভাবে যে দিন কাটাচ্ছি বলতে পারবো না। এখন শুধু বাঁচার তাগিদে দুইটা ভাত খেয়ে বেঁচে আছি আমরা। এই যে একটা রমজান মাস শেষ হতে চলছে লজ্জার কথা ভালো করে ইফতারিও করাতে পারিনি বয়স্ক মা-বাবা ও সন্তানদেরকে। এবারের রমজানে আমরা শুধু পান্তা ভাত দিয়ে অনেক দিন ইফতারি করেছি। আর সেই ভাতের সাথে কি ছিল তা আর বললাম না। নিজের জন্য একটুও খারাপ লাগছে না। কিন্তু বয়স্ক বাবা-মা ও ছোট দুইটা মেয়ের জন্য খারাপ লাগছে। বাবা-মায়ের বয়স হয়েছে। আগামী বছর যদি তাদের আর না পাই! মাথায় এসব চিন্তা নিয়েই হয়তো কাটবে এবারের ঈদ।
তেমনি গৃহকর্মী জাহানারা বেগম বলেন, ঘরে খাবার নেই, নেই কোনো টাকা পয়সা। কেউ ত্রাণ দিচ্ছে শুনলে সেখানে ছুটে যাই। অনেকে দূর দূর করে তাড়িয়ে দেয়। আবার যেটুকু ত্রাণ পাই তা দিয়েই চলে কয়েক দিন। এভাবে খেয়ে না খেয়ে দিন কাটাচ্ছি দুই মেয়ে ও দুই ছেলেকে নিয়ে। স্বামী মারা গেছে আরো সাত বছর আগে। আমি ও এক মেয়ে মানুষের বাসায় কাজ করি। এক ছেলে রিকশার গ্যারেজে কাজ করে। এখন তারও কাজ বন্ধ। আমাদেরও কাজ নেই। কেমনে দিন কাটাচ্ছি বলে বুঝাতে পারবো না। এমন পরিবেশে আমাদের আবার ঈদ। আগে খেয়ে বাঁচতে চাই।
জাহানার বেগম ও রুবেল একই কথা বলেন। আমাদের ছোট ছোট বাচ্চা আছে। তারা নতুন জামার জন্য এর মধ্যেই কান্নাকাটি করছে। কিন্তু এখন খেয়ে বাঁচাই দায় হয়েছে। আমার স্বামীর কাছে সামান্য সেমাই কেনার টাকাও নেই। সেখানে ঈদ কীভাবে পালন করবো। এখন ধার করে চলছি। আমরা এখন দুটো ভাত খেয়ে পরিবার নিয়ে শুধু বাঁচতে চাই আর কিছু চাই না। আমাদের জন্য এবারে কোনো ঈদ নেই।

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট