চট্টগ্রাম শনিবার, ২০ এপ্রিল, ২০২৪

সর্বশেষ:

করোনা নেগেটিভ ফেসবুকে প্রচার, আক্রান্ত রোগী ফেলে উড়াল এয়ার এম্বুলেন্সের

ইমাম হোসাইন রাজু

১৮ মে, ২০২০ | ৫:৪৭ অপরাহ্ণ

ডা. সৈয়দ জাফর হোসাইন রুমি। সপ্তাহখানেক আগে চট্টগ্রাম মা ও শিশু হাসপাতালে কর্মরত তরুণ এ চিকিৎসকের শ্বাসকষ্টসহ শারীরিক অসুস্থতা দেখা দেয়। যদিও উপসর্গগুলো করোনার, তবে নমুনা পরীক্ষার ফলাফলে তার শরীরে পাওয়া যায়নি কোন সংক্রমণের উপস্থিতি। দিনগড়াতেই এ চিকিৎসকের শারীরিক অবস্থার অবনতি হওয়ায় উন্নত চিকিৎসার জন্য ঢাকায় নিয়ে চায় কর্তৃপক্ষ। যার জন্য ব্যবস্থা করা হয় এয়ার এম্বুলেন্সও। কিন্তু এম্বুলেন্সটি চট্টগ্রামে আসার পরও এ চিকিৎসককে না নিয়ে ফিরে যায় ঢাকায়। কারণ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে অসুস্থ এ তরুণ চিকিৎসক করোনায় আক্রান্ত।

এমন অপপ্রচারের কারণে শেষ পর্যন্ত উন্নত চিকিৎসা থেকে বঞ্চিত এ তরুণ চিকিৎসক। এখন প্রায় মৃত্যুর সাথে পাঞ্জা লড়ছেন মা ও শিশু হাসপাতালের নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রতে (আইসিইউতে)। যদিও গতকাল রবিবার রাতে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ জানায়, বিকল্প ব্যবস্থা হিসেবে সড়ক পথেই নিয়ে যাওয়ার ব্যবস্থা করছেন তারা। তবে সংশ্লিষ্টরা বলছে, শুধুমাত্র ফেসবুকে অপপ্রচারের কারণে সেবা থেকে বঞ্চিত হলেন এ চিকিৎসক।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, বেশ কিছুদিন থেকেই অসুস্থতাবোধ করেন হাসপাতালের শিশু বিভাগের মেডিকেল অফিসার রুমি। এরমধ্যে গত ৭ মে সন্দেহ থাকায় করোনারভাইরাস পরীক্ষার জন্য নমুনাও সংগ্রহ করা হয় তার। উপসর্গ থাকলেও চারদিন পর ১১ মে নমুনা পরীক্ষার ফলাফল নেগেটিভ পাওয়া যায়। এরমধ্যে স্বাভাবিক চিকিৎসাও চলমান ছিল এ তরুণ চিকিৎসকের। কিন্তু গত শনিবার শ্বাসকষ্ট বেড়ে যাওয়ায় ফের মা ও শিশু হাসপাতালে ভর্তি করানো হয় তাকে। অবস্থা সংকটাপন্ন হওয়ায় সাথে সাথেই নেওয়া হয় হাসপাতালের আইসিইউতে। তবে অক্সিজেন স্যাচুরেশন ৯০/৯২ এর উপরে না উঠায় মা ও শিশু হাসপাতালে চিকিৎসাও দেয়া যাচ্ছে না।

হাসপাতাল সূত্রে জানা যায়, ওই চিকিৎসকের উন্নত চিকিৎসার জন্য তাকে ঢাকার বিশেষায়িত কোন হাসপাতালে পাঠানোর সিদ্ধান্ত নেন কর্তৃপক্ষ। এরজন্য চিকিৎসকদের পরামর্শে একটি এয়ার এম্বুলেন্সেরও ব্যবস্থা করা হয়। ইম্প্রেস এভিয়েশন নামে ওই এয়ার এম্বুলেন্সটি এ চিকিৎসককে নেওয়ার জন্য গতকাল রবিবার বিকেলে চট্টগ্রামে আসেন। কিন্তু সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে কিছুই না জানিয়ে মিনিট দশেক অস্থানের পর উড়াল দেয় সেটি।
সংশ্লিষ্টরা জানায়, এম্বুলেন্স কর্তৃপক্ষ সোমবার সকাল ৯টায় নিয়ে যাবে বলে প্রথমে জানায়। কিন্তু রাতে তারা তথ্য লুকানো হয়েছে, তাই রোগীকে নিয়ে যাওয়া সম্ভব নয় বলে উল্লেখ করে। বিষয়টি জানতে যোগাযোগ করা হলে অসুস্থ চিকিৎসক করোনায় আক্রান্ত। তাই এয়ার এম্বুলেন্সে করে নেওয়া সম্ভব নয় বলে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে অবহিত করা হয় বলেও জানা যায়।
জানতে চাইলে রবিবার রাতে মুঠোফোনে মা ও শিশু হাসপাতালের ট্রেজারার রেজাউল করিম আজাদ পূর্বকোণকে বলেন, ‘ওই চিকিৎসকের উন্নত চিকিৎসার জন্য বিকল্প ব্যবস্থা হিসেবে সড়ক পথেই আইসিইউ সম্বলিত এম্বুলেন্সে করে নেওয়া হবে। এমনটি আলোচনা চলছে। এছাড়া প্রয়োজন হলে অন্য এয়ার এম্বুলেন্স দিয়ে হলেও আমরা তার চিকিৎসা নিশ্চিত করতে চাই। হয়তো রাতেও রওনা দিতে পারে। প্রয়োজন হলে ব্যক্তিগত উদ্যোগে হলেও রুমির চিকিৎসার বিষয়টি নিশ্চিত করা হবে বলেও উল্লেখ করেন তিনি।’
এদিকে এ চিকিৎসক অসুস্থ হওয়ার পর চট্টগ্রামে একাধিক চিকিৎসক-স্বাস্থ্যকর্মী ও চিকিৎসক নেতারা তাদের ফেসবুকে স্ট্যাটাস দিয়ে দোয়া চেয়েছেন। কিন্তু অনেকেই তাকে ‘করোনায় আক্রান্ত’ বলে উল্লেখ করেন। যদিও এমন পোস্টগুলো মিনিটের কয়েক পরেই তা সরিয়ে নেওয়া হয়। তবে সংশ্লিষ্টরা বলছেন, এমন ভুল তথ্য প্রচারের কারণেই এ চিকিৎসক উন্নত চিকিৎসা সেবা থেকে বঞ্চিত হয়েছেন। তাই এমন অপপ্রচারের বিরুদ্ধে যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়ার তাগিদ তাদের।

এ প্রসঙ্গে স্বাধীনতা চিকিৎসক পরিষদ (স্বাচিপ) কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক ডা. আ ম ম মিনহাজুর রহমান পূর্বকোণকে বলেন, ‘করোনার প্রাদুর্ভাব শুরু হওয়ার পর চিকিৎসা সেবা নিয়েই সময় দিয়েছে ডা. রুমি। একদিনে জন্যেও সে ছুটিতে যায়নি। প্রতিদিনেই রোগীদের সেবা দিয়েগেছে সে। তার এ পরিস্থিতিতে উন্নত চিকিৎসার জন্য ঢাকা যাওয়াটা প্রয়োজন। কিন্তু কেউ এটাকে পুঁজি করে কেউ ক্রেডিট নিতে গিয়ে ফেসবুকে ভুল তথ্য প্রচার করাটা সম্পূর্ণ অনৈতিক। তবে এ মুহূর্তে এ বিতর্কে না গিয়ে যেভাবেই হোক এ চিকিৎসকের চিকিৎসা সেবা নিশ্চিত করাটাই আমাদের নৈতিক দায়িত্ব। এ বিষয়ে স্বাচিপের পক্ষ থেকে যা করার প্রয়োজন তা করা হবে বলেও জানান তিনি।’

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট