চট্টগ্রাম শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল, ২০২৪

সর্বশেষ:

ঘূর্ণিঝড় প্রস্তুতি : সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখতে আশ্রয়কেন্দ্র বাড়ছে তিনগুণ

নাজিম মুহাম্মদ

১৮ মে, ২০২০ | ৫:১৯ অপরাহ্ণ

বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট নিম্নচাপটি ঘূর্ণিঝড়ে রূপান্তরের সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে। এ অবস্থায় উপকূলীয় নাগরিকদের আশ্রয় দেওয়ার লক্ষ্যে এবার আশ্রয়কেন্দ্রের সংখ্যা পূর্বের চেয়ে তিনগুণ বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে প্রশাসন। দুর্যোগেও করোনার কারণে সামাজিক দূরত্ব মানার বাধ্যবাধকতা মেনে আশ্রয়কেন্দ্রে অবস্থান করতে হবে। এসব কথা বলেছেন প্রশাসনের কর্মকর্তারা।
নিম্নচাপের প্রভাবে গতকাল চট্টগ্রাম অঞ্চলে স্বাভাবিক তাপমাত্রা বেড়ে দাঁড়ায় ৩৪ডিগ্রি সেলসিয়াস। আকাশ মেঘাচ্ছন্ন, সারাদিন এক গুমোট পরিবেশ। ঘুর্ণিঝড়ে রূপান্তর হলে ‘আম্ফান’ উপকূলীয় এলাকায় দুই একদিনের মধ্যে আঘাত হানবে বলে ইতিমধ্যে আবহাওয়া অধিদপ্তর সতর্কতা জারি করেছে। তাই দুর্যোগের সময় লোকজনকে কীভাবে আশ্রয় দেওয়া যায় এবং সে সঙ্গে করোনা পরিস্থিতি মোকাবেলা করা যায় তা নিয়ে গতকাল রবিবার চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসক সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠকে বসেন। আজ (সোমবার) দুপরে চট্টগ্রাম সার্কিট হাউজে বিভাগীয় কমিশনারের নেতৃত্বে করোনা মোকাবেলা কমিটিরও সভা রয়েছে।

গতকালের দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কমিটির সভায় বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। সেসব সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নে আজ সোমবার থেকে কাজ শুরু করছে জেলা জেলা ও উপজেলা প্রশাসন। ওই সিদ্ধান্ত অনুযায়ী চট্টগ্রাম শহরের পাহাড়গুলোতে অবৈধভাবে বসবাসকারীদের সরিয়ে আনতে ছয়জন সহকারী কমিশনার (ভূমি) কাজ করবেন। ঘূর্ণিঝড়ের পাশাপাশি প্রবল বৃষ্টিপাতেরও আশঙ্কা করা হয়েছে আবহাওয়া অধিদপ্তর থেকে। ফলে প্রবল বর্ষণে পাহাড়ধসের শঙ্কার কথাও আলোচনা হয় বৈঠকে।
উপজেলা পর্যায়ের সিদ্ধান্তগুলোর মধ্যে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাদের (ইউএনও) সংশ্লিষ্ট আশ্রয় কেন্দ্রের চাবি সংগ্রহ করে রাখতে বলা হয়েছে। বিদ্যালয় যদি আশ্রয়কেন্দ্র হয়, তবে সেগুলোর প্রধান শিক্ষকদের বিদ্যালয়ের আশেপাশে অবস্থানের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে যাতে দ্রুত তালা খুলে দেওয়া যায়। এতে লোকজনের আশ্রয় নিতে সুবিধা হবে। প্রতিটি আশ্রয়কেন্দ্রের ব্যবস্থাপনা কমিটিকে একাধিক ইলেকট্রিক করাতকল সংগ্রহ করে রাখতে বলা হয়েছে। ঘূর্ণিঝড়ে গাছপালা ভেঙে সড়কে পড়লে যাতে তা দ্রুত কেটে মানুষের চলাচলের জন্য রাস্তা ও সড়ক উম্মুক্ত করা যায়।
পাশাপাশি স্থানীয় বাজার থেকে ইউএনওদের শুকনো খাবার সংগ্রহ, স্বেচ্ছাসেবকদের প্রস্তুত রাখা এবং মাইকিং করারও নির্দেশ দেওয়া হয়। বৈঠকে বলা হয়, সরকারের কাছে পর্যাপ্ত শুকনো খাবার মজুত আছে। কিন্তু এ মুহূর্তে এসব খাদ্য আশ্রয়কেন্দ্রে নেওয়া এক বাড়তি ঝামেলা। ফলে স্থানীয়ভাবে বাজার থেকেই এসব শুকনো খাবার সংগ্রহ করে রাখতে বলা হয়েছে। প্রয়োজন হলে পরবর্তীতে সরকারি গুদাম থেকে খাবার সরবরাহ করা হবে।
গতকালের বৈঠকের পর ইতিমধ্যে আশ্রয়কেন্দ্রগুলো ধোয়া মোছার কাজ শুরু হয়েছে বলে জানা গেছে। উপজেলা ও উপকূলীয় এলাকায় গতকাল থেকে ঘূর্ণিঝড়ের ব্যাপারে মাইকিং শুরু হয়েছে। তাতে লোকজনকে ঘূর্ণিঝড় আশ্রয়কেন্দ্রে আশ্রয় নেওয়ার জন্য প্রস্তুত থাকতে অনুরোধ করা হয়।
জেলা প্রশাসক মো. ইলিয়াস হোসেন গতকালের সভা প্রসঙ্গে বলেন, ঘূর্ণিঝড় মোকাবেলায় কিছু দ্রুত বাস্তবায়নযোগ্য সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। সেগুলো বাস্তবায়নও শুরু হয়েছে। এরমধ্যে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত হলো আশ্রয়কেন্দ্রের সংখ্যা বাড়ানো। করোনা ভাইরাসের সংক্রমণ রোধে আমাদের সবসময়ই সতর্ক থাকতে হবে। বৈঠকেও বিষয়টি গুরুত্ব পেয়েছে।
চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসন সূত্র জানায়, ২০১৯ সালে সর্বশেষ ঘূর্ণিঝড় বুলবুল’র সময় চট্টগ্রাম অঞ্চলে আশ্রয়কেন্দ্রের সংখ্যা ছিল ৩ হাজার ৯৯৮টি। এরমধ্যে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা মন্ত্রণালয়ের অধীন লোকজন আশ্রয় নিতে পারে এমন আশ্রয়কেন্দ্রের সংখ্যা ৮৭৯টি। তার বাইরে ২ হাজার ২৬৯টি প্রাথমিক বিদ্যালয় এবং ১ হাজার ২৫০টি মাধ্যমিক বিদ্যালয়কে আশ্রয়কেন্দ্রে পরিণত করা হয়। এবারে বঙ্গোপসাগরে নিম্নচাপ শুরুর পর থেকেই সম্ভাব্য আশ্রয়কেন্দ্রের ব্যাপারে প্রশাসনের কর্তাব্যক্তিদের মাথায় আসে নাগরিকের সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখার বিষয়টি। ফলে আগের তালিকার পাশাপাশি নতুন করে কিছু ভবনকে আশয়কেন্দ্র হিসেবে তৈরি করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট