চট্টগ্রাম শনিবার, ২০ এপ্রিল, ২০২৪

সর্বশেষ:

‘আমি কাউকে মুহতামিমের দায়িত্ব দিইনি’, ভিডিও বার্তায় আল্লামা শফী

হাটহাজারী সংবাদদাতা

১৭ মে, ২০২০ | ১:০০ পূর্বাহ্ণ

দক্ষিন পূর্ব এশিয়া মহাদেশের প্রাচীন দ্বীনি বিদ্যাপীঠ আল জামেয়া ইসলামিয়া দারুল উলুম মুঈনুল ইসলাম হাটহাজারী মাদ্রাসার মহাপরিচালক আল্লামা শাহ আহমদ শফী বলেছেন তিনি কাউকে মুহতামিমের (মহাপরিচালক) দায়িত্ব বুঝিয়ে দেননি।

হাটহাজারী মাদ্রাসার বর্তমান নায়েবে মুহতামিম আল্লামা জুনায়েদ বাবুনগরীকে সরিয়ে অপর একজনকে নায়েবে মুহতামিমের পদ দেয়া হবে এমন একটি খবর শুক্রবার রাত থেকে মুখে মুখে প্রচার হয়ে পড়লে গতকাল শনিবার সকাল থেকে মাদ্রাসার অনুসারি স্থানীয় দুই পক্ষের শত শত সাধারন মুসল্লি মাদ্রাসায় জড়ো হলে দিনভর উত্তেজনা বিরাজ করে। অবশেষে রাতে আল্লামা শফি মুমুর্ষ অবস্থায় ভিডিও বার্তায় উপরের বক্তব্য প্রচার করলে উত্তেজনার সাময়িক অবসান ঘটে।
নাকে খবারের নল লাগানো অবস্থায় মুমুর্ষ আল্লামা শফি মুসল্লিদের উদ্দেশ্যে ২ মিনিট ৫ সেকেন্ডের এই ভিডিও বার্তায় দুঃখের সাথে বলেছেন, হাটহাজারী মাদ্রাসায় মুহতামিম (মহাপরিচালকের) দায়িত্ব পেয়ে আমি কি না করেছি , এমন কিছু কথা , কিছু অপবাদ দিচ্ছে, আমার মুহতামিমের সময়ের মধ্যে কি লাভ হল। আপনারা সবাই জানেন, পুরা দুনিয়া জানে। সারা জিন্দেগী মাদরাসার জন্য কুরবান দিয়েছি। মাদরাসার জিম্মাদারি (দায়িত্বে) আমি এখনো আছি। আমার অবর্তমানে কে জিম্মাদারির দায়িত্ব নেবে সেটা মাদ্রাসার শুরা ( পরিচালনা) কমিটি করবে। আমি কাউকে জিম্মাদারি (দায়িত্বে) দেয়নি। কাউকে নায়েবে মুহতামিম করিনি, কাউকে ভারপ্রাপ্ত মুহতামিমের দায়িত্বও দেয়নি। যেগুলো শুনতেছেন সবগুলো গুজব। আমি সবাইকে শান্ত থাকার জন্য অনুরোধ করছি। আমার জন্য দোয়া করবেন, মাদরাসার জন্য দোয়া করবেন বলে ভিডিও বার্তায় রাতে তিনি উদাত্ত আহবান জানান।
এর আগে সকাল ১০টা থেকে হাটহাজারী মাদরাসার আশ-পাশ ছিল থমথমে । সাধারন জনগন সহ কয়েকশত স্থানীয় আলেম উলামা মাদরাসায় উপস্থিত হয়েছে। সকাল ১০টার দিকে আল্লামা আহমদ শফীর অবর্তমানে জামেয়ার সিনিয়র শিক্ষক আহমদ দিদার কাসেমীকে ভারপ্রাপ্ত মুহতামিম ও মাও. আনাছ মাদানিকে নায়েবে মুহতামিত করবে বলে স্যোশাল মিডিয়ায় গুজব ছড়ায়। এতে ক্ষিপ্ত হয়ে হাটহাজারীর স্থানিয় জনসাধারন মাদরাসায় অবস্থান করে। এমনাবস্থায় মাদরাসার কয়েকজন সিনিয়র শিক্ষকের একটি প্রতিনিধি আল্লামা শাহ আহমদ শফীর কামরায় গিয়ে পরিস্থিতির কথাগুলো জানিয়ে দেয়। জোহরেররের নামাজের পর মাদরাসার মসজিদে উপস্থিত মুসল্লীদের উদ্যেশ্যে হাটহাজারী ওলামা পরিষদের সভাপতি মাও জাফর আহমদ, মাও মীর ইদরিস ও হাটহাজারী মাদরাসার সাবেক মুহতামিমের পুত্র হাফেজ সাইফুল ইসলাম বলেন, মাদরাসার শুরার সিদ্ধান্ত ছাড়া কাউকে পরিচালক ও সহকারী পরিচালক মানবেনা হাটহাজারীর জনগন। বর্তমানে যে ষড়যন্ত্র করে হুজুরের নাম ভাঙ্গিয়ে কোন এক স্বার্থনেশী মহলকে খুশি করতে দেওবন্দীর ১২৫ বছরের ঐতিহ্য নসাৎ করতে দেবনা। যদি শুরা কমিটি একজন পাগলকেউ দায়িত্ব বন্টন করে পরিচালকের আসনে বসায় আমরা মেনে নেব। কোন একক ব্যক্তির সিদ্ধান্তকে কখনো মেনে নেবনা। আমরা হাটহাজারী যে কোন বিষয়ের প্রতিনিধিত্বকারী সর্বোচ্চ সংগঠন ওলামা পরিষদের পক্ষ থেকে যে কোন বিভাজন নসাৎ করে দেব, আমরা কাউকে ছাড়ব না। প্রয়োজন হলে জনগনকে নিয়ে মাঠে নেমে এর প্রতিরোধ করব। এরই প্রেক্ষিতে বর্তমান পরিস্থিতি নিয়ে শনিবার রাতে মুমুর্ষ অবস্থায় আল্লামা শাহ আহমদ শফী ভিডিও বার্তাটি দেন। এ ভিডিও বার্তা প্রচারের পর এলাকার পরিস্থিতি আপাতত শান্ত হলেও ভেতরে ভেতরে দুই পক্ষের উত্তেজনা বিরাজ করছে বলে সুত্রে প্রকাশ।

পূর্বকোণ/ আরআর/ জাহাঙ্গীর

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট