চট্টগ্রাম শনিবার, ২০ এপ্রিল, ২০২৪

সর্বশেষ:

মেজবানির মাংসেও করোনার প্রভাব

মরিয়ম জাহান মুন্নী

১৬ মে, ২০২০ | ৬:১৫ অপরাহ্ণ

চলছে রমজান মাস। এ মাসে রোজাদাররা ইফতারিতে নানারকম মুখরোচক খাবার খেতে পছন্দ করেন। সেই খাবারগুলোর মধ্যে নানারকম ভাজা পোড়া ও মিষ্টি জাতীয় খাবার উল্লেখ্যযোগ্য। কিন্তু খাবারের বিষয়ে চট্টগ্রামবাসী একটু বেশি এগিয়ে রয়েছে। চট্টগ্রামবাসীকে এক প্রকার খাদ্য রশিকও বলা হয়। খাবার নিয়ে চট্টগ্রামের রয়েছে নিজস্ব কিছু ঐতিহ্যও। সেই ঐতিহ্যের মধ্যে মেজবানির মাংস উল্লেখ্যযোগ্য।
প্রতিবছর নানারকম ইফতারির সাথে মেজবানির মাংস থাকে অনেকের ঘরে। হরেক রকম মসলা দিয়ে বিশেষ কায়দায় রান্না করা গরুর মাংসের এই পদের চাহিদা থাকে সারা বছরই। আবার রমজান এলে এর কদর আরো বেড়ে যায়। চট্টগ্রামের মেজবানির মাংস পছন্দ করে না এমন মানুষ খুঁজে পাওয়া মুশকিল। চট্টগ্রামের এ মাংসের কদর শুধু চট্টগ্রামেই নয় রয়েছে সারা দেশেই। আবার অনেক ক্ষেত্রে এটি দেশ ছাড়িয়ে প্রশংসা কুড়িয়েছে বিদেশের মাটিতেও। প্রতিবছর রমজান উপলক্ষে চট্টগ্রামের প্রায় হোটেল-রেস্টুরেন্টে স্পেশাল মেজবানির মাংস রান্না করে। শুধু হোটেল-রেস্টুরেন্টই নয়, রমজান উপলক্ষে এ স্পেশাল মেজবানির মাংস রান্না করে কিছু সিজনাল ব্যবসায়ী। আর সেগুলো বিক্রি করে বিভিন্ন সড়ক ও অলিগলির মুখে। কিন্তু এবারের চিত্র একেবারে ভিন্ন। কারণ এবারে বৈশি^ক মহামারী করোনাভাইরাসের কারণে সারা দেশে দীর্ঘদিন ধরে চলছে অঘোষিত লকডাউন। এছাড়া জনসমাগম হয় এমন কিছু করা থেকে বিরত থাকতে আদেশও রয়েছে। তাই দেখতে দেখতে রমজানের একেবারে শেষের দিকে চলে আসলেও চট্টগ্রামের সেই অতি পরিচিত সিজনাল মেজবানির মাংস বিক্রির দৃশ্য কোথাও দেখা যায়নি। অথচ প্রতিবছর রমজানের এসময় নগরীর চৌমুহনী, আগ্রাবাদ, বহদ্দারহাট, দেওয়ানহাটের ধনিয়ালাপাড়ায়, তিনপুলের মাথা, ছোট পোল, চকবাজার, ফিরিঙ্গী বাজার, পাঠানটুলী, শেখ মুজিব রোড, বাদামতলী, ফিশারি ঘাটসহ বিভিন্নস্থানে মেজবানির মাংসের সিজনাল ব্যবসায়ীদের দেখা যেত। এটি করা হতো কিছু ব্যবসায়ী মিলে। নগরীর চৌমুহনী পীরবাড়ির সামনে হাজিপাড়া পর্যন্ত প্রথম রমজান থেকে শেষ রমজান অবদি চলতো এক অন্য রকম আমেজ। এখানে প্রতিদিন মেজবানির মাংস কিনতে দুপুর থেকে ইফতারির আগ মুহূর্ত পর্যন্ত বিক্রির হিড়িক চলতো। কিন্তু বর্তমানে করোনাভাইরাসের ভয়াবহতার কারণে সেই জায়গাগুলো পড়ে আছে ক্রেতা শূন্য অবস্থায়।
চৌমুহনী পীরবাড়ির সিজনাল ব্যবসায়ী আবু তোরাবের সাথে তিনি জানায়, আমরা প্রতিবছর রমজানে এখানে মেজবানির মাংস বিক্রি করি। প্রতিদিন দুপুর ১২টা থেকে ১টার মধ্যে মেজবানি মাংস রান্নার কাজ শেষ করা হলেই সেই মাংস কিনতে মানুষের ভিড় শুরু হয়। এখানে এক কেজি রান্না করা মেজবানির মাংস সাড়ে ৪শ টাকা থেকে ৫শ টাকায় বিক্রি হত। কিন্তু এবছর আমরা এটি করছি না। কারণ শহরে মানুষ নেই। যদি গরু জবাই করি তবে লোকসান হতে পারে। সেই ভয়ে আর আমরা এব্যবসা শুরু করিনি।
এছাড়া এসব মাংস পাওয়া যেত চট্টগ্রামের পাঁচ তারকা হোটেল রেডিসন ব্লু, হোটেল পেনিনসুলা, হোটেল আগ্রাবাদ, হোটেল অ্যাম্ব্রুশিয়া, কুটুমবাড়ি, রোদেলা বিকেল ও রেড চিলিতে। এখনো এসব রেস্টুরেন্টে স্বল্প পরিসরে বিক্রি করছে স্পেশাল মেজবানির মাংস। এখন এসব রেস্টুরেন্টগুলোতে এক কেজি মাংস বিক্রি হচ্ছে ৫শ’ থেকে সাড়ে ৫শ’ টাকায়।
গতকাল নগরীর আগ্রাবাদ কুটুমবাড়ি রেস্টুরেন্ট এক কেজি মেজবানির মাংস বিক্রি করছে ৫শ’ টাকায়। তবে রেস্টুরেন্টের ম্যানেজার বলেন, অন্যান্য বছরের মত ক্রেতা নেই। তাই আমরা খুব অল্প পরিমাণে মাংস রান্না করছি। এরপরও অনেক সময় থেকে যায়। এবছর আমরা ব্যবসায় অনেক লোকসান গুনছি। তাই কিছু করার আগে ভাবতে হচ্ছে। অন্যান্য বছর প্রতিদিন ৫০ থেকে ৬০ কেজির মত মেজবানির মাংস বিক্রি হত। আর এটি এখন মাত্র ১০ থেকে ১২ কেজিতে সীমাবদ্ধ।

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট