চট্টগ্রাম বৃহষ্পতিবার, ২৮ মার্চ, ২০২৪

সর্বশেষ:

করোনায় চট্টগ্রামে ৫ খাতে ক্ষতি দেড় হাজার কোটি টাকা

বেকার সাড়ে ৬ লাখ মানুষ

ট্রাভেল এজেন্সি, ফার্নিচার, পর্যটন শিল্প, হোটেল রেস্টুরেন্ট এবং ডেকোরেটার্স শিল্প।

মোহাম্মদ আলী

১৫ মে, ২০২০ | ১১:২২ পূর্বাহ্ণ

করোনায় চট্টগ্রামে ৫ খাতে গত দুই মাসে ক্ষতি হয়েছে দেড় হাজার কোটি টাকা। বেকার হয়েছে কমপক্ষে সাড়ে ৬ লাখ মানুষ। এতে আর্থিক সংকটে পড়ে তাদের অভাব-অনটনে দিন কাটছে। ক্ষতিগ্রস্থ ৫ খাত হচ্ছে ট্রাভেল এজেন্সি, ফার্নিচার শিল্প, পর্যটন, হোটেল-রেস্টুরেন্ট এবং ডেকোরেটার্স শিল্প। ক্ষতিগ্রস্থ মানুষের সাথে কথা বলে এসব তথ্য পাওয়া গেছে। করোনার কারণে চট্টগ্রামে ৩০০ ট্রাভেল এজেন্সির ক্ষতি হয়েছে প্রায় এক হাজার কোটি টাকা। গত দুই মাসে এ খাতে জড়িত প্রায় ৮ হাজার লোকবল বেকার হয়ে পড়েছে।
এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে এসোসিয়েশন অব ট্রাভেল এজেন্টস অব বাংলাদেশ (আটাব) এর চট্টগ্রাম অঞ্চলের চেয়ারম্যান মোহাম্মদ আবুল কাসেম দৈনিক পূর্বকোণকে বলেন, ‘চট্টগ্রামে ৩০০ ট্রাভেল এজেন্সি রয়েছে। এতে প্রতিটি এজেন্সিতে সর্বনি¤œ ১০ জন থেকে সর্বোচ্চ ৪৫ জন পর্যন্ত কর্মকর্তা-কর্মচারী রয়েছে। সব মিলে ৩০০ ট্রাভেল এজেন্সিতে মোট জনবল রয়েছে প্রায় ৮ হাজার। করোনার কারণে বর্তমানে সবাই বেকার হয়ে পড়েছে। আর্থিক কষ্টে তারা অত্যন্ত মানবেতর জীবনযাপন করছে। করোনায় সারাদেশে ট্রাভেল এজেন্সিগুলোর ক্ষতি হয়েছে প্রায় ৫ হাজার থেকে ৬ হাজার কোটি টাকা। এর মধ্যে চট্টগ্রামের ট্রাভেল এজেন্সিগুলোর ক্ষতি হয়েছে প্রায় এক হাজার কোটি টাকা। চলমান অবস্থা অব্যাহত থাকলে ট্রাভেল এজেন্সিগুলো আরো ব্যাপক ক্ষতির শিকার হবে’।
এদিকে করোনায় বেকার হয়ে পড়েছেন চট্টগ্রামে ডেকোরেটার্সের সাথে জড়িত বিভিন্ন পেশার অর্ধ লক্ষাধিক মানুষ। দীর্ঘদিন ধরে ব্যবহার না হওয়ায় ডেকোরেটার্সের মূল্যবান মালামাল নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। এতে প্রায় একশ’ কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে বলে দাবি করেছেন চট্টগ্রাম ডেকোরেটার্স মালিক সমিতির নেতৃবৃন্দ।
এ প্রসঙ্গে চট্টগ্রাম ডেকোরেটার্স মালিক সমিতির সভাপতি হাজী মোহাম্মদ সাহাবউদ্দিন দৈনিক পূর্বকোণকে বলেন, করোনার কারণে মার্চ মাস থেকে চট্টগ্রামে ডেকোরেশনের সকল দোকান বন্ধ হয়ে যায়। এরপর থেকে এ শিল্পের সাথে জড়িত মালিক থেকে শুরু করে শ্রমিক এবং সংশ্লিষ্ট অন্যান্য পেশার লোকজন বেকার হয়ে পড়ে। বর্তমানে সবাই আর্থিক সংকটের মধ্যে পড়েছে। ডেকোরেটার্স দোকান বন্ধ হয়ে যাওয়ায় এই শিল্পের প্রায় একশ’ কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে’।
করোনায় বেশি ক্ষতি শিকার হোটেল-রেস্টুরেন্টের মালিকরা। বন্ধ থাকায় এ খাতে বেকার হয়েছে প্রায় তিন লাখ মানুষ। ক্ষতির পরিমাণ আনুমানিক একশ’ কোটি টাকারও বেশি। একই অবস্থা পর্যটন শিল্পেরও। চট্টগ্রামের সবগুলো পর্যটন স্পট গত দুই মাস ধরে বন্ধ। এতে বেকার হয়ে পড়েছে এ খাতে জড়িত ১০ হাজার মানুষ। ক্ষতি হয়েছে প্রায় অর্ধশত কোটি টাকা।
চট্টগ্রামের ফার্নিচার শিল্পে বড় ধরনের ধাক্কা দিয়েছে করোনা। গত দুই মাসে এ খাতের ব্যবসায়ীরা প্রায় দুইশ’ কোটি টাকা আর্থিক ক্ষতির শিকার হয়েছে। বেকার হয়েছে উৎপাদন ও বিপণনে জড়িত তিন লক্ষাধিক মানুষ। বর্তমানে তারা অত্যন্ত মানবেতর জীবনযাপন করছে।
বাংলাদেশ ফার্নিচার শিল্প মালিক সমিতি চট্টগ্রাম বিভাগের সাধারণ সম্পাদক মো. মাকসুদুর রহমান বলেন, ‘চট্টগ্রামে ছোট-বড় প্রায় ৪ হাজার ফার্নিচার কারখানা ও শো-রুম রয়েছে। আন্তর্জাতিকভাবে বিকাশমান এ শিল্পের উৎপাদন ও বিপণনের সাথে তিন লক্ষাধিক মানুষ জড়িত। করোনার কারণে এ শিল্পের সর্বস্তরে স্থবিরতা নেমে এসেছে। ফার্নিচার নির্মাণ থেকে বিপণন সবকিছুই এখন বন্ধ রয়েছে। করোনার কারণে চট্টগ্রামে ফার্নিচার শিল্পে বর্তমানে ক্ষতি হয়েছে প্রায় দুইশ’ কোটি টাকা।
বাংলাদেশ ফার্নিচার শিল্প মালিক সমিতি চট্টগ্রাাম বিভাগের সভাপতি সৈয়দ এ এস এম নুরউদ্দীন বলেন, ‘বাংলাদেশের ফার্নিচার শিল্প দেশের গ-ি পেরিয়ে বহির্বিশ্বে তুলে ধরার মতো অবস্থানের দিকে যাওয়া একটি উদীয়মান শিল্প। এ জন্য আধুনিক কারখানা প্রতিষ্ঠায় এগিয়ে এসেছেন সাহসী বিনিয়োগকারী। সৃষ্টি হয়েছে দক্ষ ও মেধাবী কারিগর। কিন্তু করোনার কারণে গত ২৫ মার্চ থেকে অন্যদের মতো ফার্নিচার শিল্প ও সংশ্লিষ্ট শ্রমিকরাও অসহায় অবস্থায় পড়ে যায়। চট্টগ্রামের ফার্নিচার শিল্পে এখন চরম অনিশ্চয়তায় দেখা দিয়েছে’।

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট