চট্টগ্রাম শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল, ২০২৪

চকরিয়ায় রাতের অন্ধকারে জ্বালিয়ে দিল ২৫ ঘর, অগ্নিদগ্ধে নারী নিহত

চকরিয়া-পেকুয়া সংবাদদাতা

১৪ মে, ২০২০ | ৩:৩৩ অপরাহ্ণ

কক্সবাজারের চকরিয়ার কৈয়ারবিল ইউনিয়নের খিলছাদক গ্রামের ২৫টি ঘর আগুন লাগিয়ে পুড়িয়ে দিয়েছে চর দখলবাজ চক্র। তারা আগুন লাগানোর পর কেউ যাতে আগুন নেভাতে না পারে সেই উদ্দেশ্যে এলোপাতাড়ি গুলিও করে। আগুনে পুড়ে নিহত হয়েছেন মনোয়ারা বেগম (৫০)। গুলিবিদ্ধ ও অগ্নিদগ্ধ হয়ে আহত হয়েছেন ২০ জন শিশুসহ নারী পুরুষ।

বৃহস্পতিবার (১৩ মে) ভোররাতে সেহেরী খেয়ে ঘুমানোর প্রস্তুতির সময় নারকীয় এ ঘটনা ঘটানো হয়।

মাতামুহুরী নদী ভরাট হয়ে জেগে উঠা চর দখল করতে এ তান্ডব চালানো হয় বলে এলাবাসীর উদ্ধৃত দিয়ে থানার ওসি হাবিবুর রহমান নিশ্চিত করেন। তিনি বলেন, ‘অন্তত একযুগ আগে থেকে নদীর ভরাটচর দখল নিয়ে বিরোধ চলে আসছিল। ইতিপূর্বে ৭-৮ বছর আগেও এ ধরনের একটি ঘটনা ঘটেছিল।’

এবার সেহেরীর শেষ সময়ে  ২৫ পরিবারের বসতবাড়িতে আগুন দিয়ে সবকিছু পুড়িয়ে দেয়া হয়েছে। লুট করে নেওয়া হয়েছে নগদ টাকা, গবাদি পশু, মালামালসহ অন্তত কোটি টাকার সম্পদ। এ সময় আগুনে পুড়ে মারা গেছেন মনোয়ারা । অগ্নিদগ্ধ ছাড়াও  গুলিবিদ্ধ ও ধারালো অস্ত্রের এলোপাতাড়ি কোপে আহত হয়েছেন নারী-পুরুষসহ অন্তত ২০ জন। তাদের উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়েছে। কয়েকজনকে উন্নত চিকিৎসার জন্য চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে।

প্রত্যক্ষদর্শী গ্রামবাসী জানান, ভীতিকর পরিস্থিতি সৃষ্টি করতে সশস্ত্র সন্ত্রাসীরা অন্তত অর্ধশত রাউন্ড ফাঁকা গুলি ছুঁড়ে।

আগুনে পুড়ে মারা গেছেন  মনোয়ারা বেগম (৫০)। তিনি ওই গ্রামের মোজাহের আহমদের স্ত্রী। আহতরা হলেন নিহতের স্বামী মোজাহের আহমদ (৬৫), ইউনিয়ন ছাত্রলীগের যুগ্ন আহবায়ক সাজ্জাদ হোসেন (২৫), মো. মুরাদ (২৩), আবু ছালেক (৪২), নবীর হোছাইন (৫০), মো. বাবলু (২২) ও মো. আলম (৪৫)। অন্যদের নাম পাওয়া যায়নি।

ক্ষতিগ্রস্তদের অভিযোগ, দীর্ঘ কয়েকযুগ ধরে তাদের গ্রামের বিশাল অংশ মাতামুহুরী নদীর ভাঙনের কবলে পড়ে নদীতে বিলীন হয়ে যায়।  নদীতে তলিয়ে যাওয়া সেই জায়গা ১০-১২ বছর ধরে  জেগে উঠতে থাকে। যাদের জায়গা জেগে উঠে তারা সেই জায়গায় বসতি গড়ে তোলেন। কিন্তু নদীর ওপারে পাশ্ববর্তী ইউনিয়ন বরইতলীর গোবিন্দপুর গ্রামের সশস্ত্র লোকজন এপারে এসে বার বার জেগে উঠা জায়গা দখলের চেষ্টা চালান।

এদিকে এই নারকীয় তাণ্ডবের খবর পেয়ে কক্সবাজার-১ আসনের সংসদ সদস্য জাফর আলম, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) সৈয়দ শামসুল তাবরীজ, থানার ওসি মো. হাবিবুর রহমান, উপজেলা ফায়ার সার্ভিস কর্মকর্তা মো. সাইফুল হাছান, হারবাং পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ ইন্সপেক্টর আমিনুল ইসলাম, এসআই অপু বড়ূয়া, বরইতলীর চেয়ারম্যান জালাল আহমদ সিকদার ও কৈয়ারবিল ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান  মক্কী ইকবাল হোসেন ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন।

থানার ওসি মো. হাবিবুর রহমান ঘটনাস্থল থেকে ফিরে জানান, যারা এই তাণ্ডবে জড়িত তাদের শনাক্তের চেষ্টা চলছে। ঘটনার সময় এক নারী আগুনে পুড়ে মারা যাওয়াসহ অসংখ্য নারী-পুরুষ আহত হওয়ার সত্যতা নিশ্চিত করে ওসি বলেন, পুলিশ ও ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা লাশ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য কক্সবাজার সদর হাসপাতাল মর্গে প্রেরণ করা হয়েছে। আগুনে বিপুল ক্ষতি হয়েছে। 

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সৈয়দ শামসুল তাবরীজ বলেন, মধ্যযুগীয় এই বর্বরতায় ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলোর তালিকা তৈরি করে জমা দিতে ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যানকে নির্দেশ দেয়া হয়েছে। যাতে এসব পরিবারকে সরকারিভাবে সার্বিক সহায়তা দিয়ে পুনর্বাসন করা যায়। এছাড়াও প্রাথমিকভাবে উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে পরিবারগুলোকে সহায়তা দেওয়া হবে। পাশাপাশি ঘটনায় জড়িতদের খুঁজে করে কঠোর শাস্তিও নিশ্চিত করা হবে।

কক্সবাজার-১ আসনের সংসদ সদস্য ও চকরিয়া উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি জাফর আলম বলেন, ক্ষতিগ্রস্ত ২৬ পরিবারকে প্রাথমিকভাবে ব্যক্তিগত পক্ষ থেকে এক বস্তা করে চাল, দুই বান্ডিল ঢেউটিন ও সরকারিভাবে আরো দুই বান্ডিল করে ঢেউটিন প্রদান করা হয়েছে। যাতে তাদের খাদ্য ও বাসস্থান নিশ্চিত হয়। তাছাড়া সরকারিভাবেও তাদের সার্বিক সহায়তা দেওয়া হবে। আর যারাই এই নারকীয় তাণ্ডবে জড়িত তাদের খুঁজে বের করে আইনগতভাবে কঠোর ব্যবস্থা নেয়ার নির্দেশ দেয়া হয়েছে পুলিশকে।

পূর্বকোণ/পিআর

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট