চট্টগ্রাম শনিবার, ২০ এপ্রিল, ২০২৪

সর্বশেষ:

করোনায় বিপর্যস্ত সবজি চাষিরা

ক্ষেতের সবজি ক্ষেতেই পচছে

পরিবহন চলাচল বন্ধ থাকায় পাইকারি ক্রেতা সংকট

মুহাম্মদ নাজিম উদ্দিন

১২ মে, ২০২০ | ১০:২১ পূর্বাহ্ণ

করোনা সংকটে বিপর্যস্ত সবজি চাষিরা। সবজির ভালো উৎপাদন হলেও লকডাউনের পর বিক্রি করতে না পেরে ক্ষেতের সবজি ক্ষেতেই পচে নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। এতে বড় ক্ষতির মুখে পড়েছেন চাষিরা।
দেখা যায়, চট্টগ্রামের সবজি ভা-ারখ্যাত সীতাকু-, দোহাজারীসহ বিভিন্ন স্থানে ক্ষেতে অবিক্রিত রয়ে গেছে প্রচুর সবজি। লকডাউনের পর পরিবহন চলাচল বন্ধ থাকায় পাইকারি ক্রেতা সংকট সৃষ্টি হয়েছে। ক্রেতা না থাকায় কৃষকেরা সবজি বিক্রি করতে পারছে না। এতে ক্ষেতের সবজি ক্ষেতেই পচে নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। যা বিক্রি করা হচ্ছে তা বিক্রি করতে হচ্ছে পানির দরে।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, সীতাকু-, চন্দনাইশের দোহাজারী রেলওয়ে বাজার, বাঁশখালী, রাঙ্গুনীয়া, আনোয়ারা ও শহরতলী উপজেলা থেকে চট্টগ্রামের সবজির চাহিদা মেটানো হয়। তবে সীতাকু-ের সবজি চট্টগ্রামের চাহিদা অনেকটা পূরণ করে আশপাশের জেলাও সরবরাহ করা হয়। সবজি উৎপাদনকারী প্রতিটি উপজেলায় এখন পাইকারি ব্যবসায়ী কমে গেছে। অস্বাভাবিকভাবে কমে গেছে সবজির দাম। দক্ষিণ চট্টগ্রামের সবজি ভা-ার হিসেবে পরিচিত চন্দনাইশের দোহাজারী শঙ্খ নদী তীরের উৎপাদিত সবজি চাষিদেরও একই অবস্থা। সবজি উৎপাদন ভালো হলেও করোনাভাইরাস সংকটে লকডাউনের পর থেকে অনেকটা ক্রেতার শূন্যতা বিরাজ করছে। এতে পানির দরে বিক্রি করতে হচ্ছে উৎপাদিত সবজি। অন্যান্য উপজেলায় একই অবস্থা বিরাজ করছে। ক্রেতা না থাকায় ক্ষেতের সবজি ক্ষেতেই পচছে। তাই উৎপাদিত সবজি বাজারে তোলার বদলে ক্ষেতেই নষ্ট হয়ে যাচ্ছে।
সীতাকু-ের ছলিমপুর ইউনিয়নের ৭নং ওয়ার্ডের আবুল কালাম আবু বলেন, ৮ কানি জমিতে ফুলকপি ও টমেটোর চাষ করেছি। ক্রেতা না থাকায় এখন ক্ষেতের সবজি ক্ষেতেই পচে নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। লকডাউনের পর সীতাকু- সবজি বাজারে ক্রেতা শূন্যতা বিরাজ করছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, সীতাকু-ে উৎপাদিত সবজি চট্টগ্রামের রিয়াজউদ্দিন বাজার, পাহাড়তলী বাজার ছাড়াও ঢাকা, ফেনীসহ বিভিন্ন জেলা যায়। কিন্তু লকডাউনের পর থেকে যানবাহন চলাচল বন্ধ থাকায় বাজারে ক্রেতা নেই বললেই চলে। ক্রেতা না থাকায় সবজি ক্ষেতে পচে রয়েছে।
তিনি বলেন, প্রায় ১৫ হাজার ফুলকপির চারা রোপণ করেছেন। লকডাউনের আগে অর্ধেক বিক্রি করেছেন। একশ ফুলকপি দুই হাজার টাকা দরে বিক্রি করেছেন। বাকি ফুলকপি এখন ক্রেতা না থাকায় ক্ষেতে পচে নষ্ট হয়ে গেছে। এতে বড় ধরনের ক্ষতি গুনতে হবে। তিনি আরও বলেন, ফুলকপি ছাড়াও প্রায় ১০০টন টমেটো পচে নষ্ট হয়ে গেছে। সবমিলে এখন বিপর্যস্ত অবস্থা।
সীতাকু- ও দোহাজারী বাজারসহ বিভিন্ন সবজি বাজারে কৃষকেরা সবজি বিক্রি করতে পারছে না।
সীতাকু-ে লকডাউন ঘোষণার পর থেকে সবজি ভা-ার খ্যাত সীতাকু-ে সবজির দাম অস্বাভাবিকভাবে কমে গেছে। ক্রেতা না থাকায় চাষিদের মাথায় হাত পড়েছে।
সীতাকু- মোহন্তেরহাট হচ্ছে সবজি সবজির বড় বাজার। স্বাভাবিক সময়ে পাইকারি ক্রেতা ও বিক্রেতাদের পদচারণে মুখরিত থাকত। এখন ক্রেতা নেই বললেই চলে। লকডাউনের কারণে বিভিন্ন স্থান থেকে আসা পাইকারি ব্যবসায়ীরা না আসায় সবজি বেচাকেনা হচ্ছে না।
উপজেলার নুনাছরার কৃষক মো. ইয়াছিন জানান, ৫ কানি জমিতে টমেটো চাষ করেছি। দুই কানি মতো বিক্রি করেছি। আর তিন কানি জমির টমেটো পচে নষ্ট হয়ে গেছে। ক্রেতা না থাকায় জমি থেকে আর তোলা হয়নি।
তিনি বলেন, মাঝখানে কয়েকবার বাজারে টমেটো বিক্রি করতে নিয়েছিলাম। কিন্তু ক্রেতা না থাকায় ফেলে দিতে হয়েছে। গরুকে খাওয়াতে হয়েছে।
তাদের মতো শত শত কৃষক সবজি বিক্রি করতে না পেরে বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে। ক্ষেত থেকে না তুলে নষ্ট করে ফেলছেন।
সবজি চাষিরা বলেন, প্রতি বছর রোজায় বেগুন, টমেটো, শসার ভালো দাম পাওয়া যায়। এবার আশায় বুক বেঁধেছিলেন চাষিরা। কিন্তু করোনাভাইরাসের কারণে সেই আশা মাটি হয়ে গেছে।
সীতাকু-ের বড় পাইকারী আড়ৎ সীতাকু- সবজি ভান্ডারের মালিক সুনীল দাশ জানান, লকডাউন ঘোষণার পর থেকেই সবজি বিক্রি নেই বললেই চলে। এবার কৃষকেরা বড় ধরনের ক্ষতির মুখে পড়বে।
দক্ষিণ চট্টগ্রামের সবজি ভা-ার নামে খ্যাত দোহাজারী শঙ্খ তীরবর্তী এলাকায় প্রচুর সবজির চাষ হয়েছে। ফলন ভালো হওয়ায় কৃষকেরা খুশি। কিন্তু করোনাভাইরাসের কারণে ক্রেতা না থাকায় এখন বেকায়দায় পড়েছে কৃষকেরা।
উপজেলার শঙ্খ তীরবর্তী দোহাজারী, লালুটিয়া, রায়জোয়ারা, ধোপাছড়ি, বরমা, চরবরমা, বৈলতলী, পাহাড়ী এলাকা লর্ড এলাহাবাদ, সৈয়দাবাদ, কাঞ্চননগরসহ বিভিন্ন এলাকায় ব্যাপক সবজির চাষ হয়েছে। কিন্তু করোনাভাইরাস সংকটের কারণে চট্টগ্রাম মহানগরসহ বিভিন্ন এলাকার পাইকারি ব্যবসায়ীরা না আসায় সবজি বিক্রি করতে পাচ্ছেন না কৃষকেরা।
দোহাজারী শঙ্খ তীরবর্তী এলাকার কৃষক এমএ ফয়েজ বলেছেন, তিনি ২০ হাজার টাকা করে ৬০ হাজার টাকায় ৩ কানি জমি সবজি চাষের জন্য নিয়েছেন। ইতিমধ্যে বেগুন, টমেটো, বরবটি রোপণ করে ফলন পেতে শুরু করেছেন। এখন উৎপাদিত সবজি বিক্রি করতে পারছেন না। একইভাবে করিম ও আলিম এক কানি করে খাজনা দিয়ে সবজি চাষের জন্য জমি নিয়ে বেগুন, মিষ্টি কুমড়া চাষ করে ফলন পেলেও দাম কম হওয়ায় কীটনাশক, সার, শ্রমিক মজুরি, জমির খাজনা পুষিয়ে লাভবান না হয়ে লোকসানে পড়েছেন বলে জানালেন।

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট