চট্টগ্রাম শুক্রবার, ২৯ মার্চ, ২০২৪

বাজারে দাম বাড়তি

বোরো সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা পূরণে শঙ্কা

চাল সংগ্রহ কার্যক্রম শুরু হলেও ১৪১ মিলারের মধ্যে পে-অর্ডার জমা দিয়েছেন ২৫ জন। এখনো হয়নি চুক্তি।

মুহাম্মদ নাজিম উদ্দিন

৯ মে, ২০২০ | ৭:২৪ পূর্বাহ্ণ

চাল কেনা কার্যক্রম শুরু হলেও এখনো পর্যন্ত চুক্তি করেনি কোনো মিলার। তবে সরকারকে চাল দেওয়ার লক্ষ্যে চুক্তি করার জন্য পে-অর্ডার জমা দিয়েছেন ২৫ জন মিলার। বাজারে ধানের মূল্য বাড়তির কারণে চালের দাম বাড়ানোর জন্য গোঁ ধরেছেন মিলাররা। তাদের দাবি, লোকসান গুনে সরকারের কাছে চাল বিক্রি করতে আগ্রহী নয় মিলাররা।
চট্টগ্রাম রাইস মিল মালিক সমিতির সভাপতি শান্তু দাশগুপ্ত বলেন, ‘সরকার কৃষককের কাছ থেকে ধান কিনছে ২৬ টাকা দরে। সেই হিসাবে এক মণ (৪০ কেজি) ধানের ক্রয়মূল্য হচ্ছে ১০৪০ টাকা। সরকারের নীতিমালা অনুযায়ী এক মণ ধানে চাল হয় ২৬ কেজি। প্রতিকেজি চালের দাম পড়ে ৪০ টাকা। তার সঙ্গে রয়েছে শ্রমিক, পরিবহন ও অন্যান্য খরচ মিলে আরও অন্তত তিন টাকা। অর্থাৎ ৪৩ টাকা। সেই চাল ৩৫ টাকা দরে কীভাবে সরকারের কাছে বিক্রি করব’। তিনি বলেন, ‘সরকারকে আমরা চাল দিতে চাই। কিন্তু লোকসানের ভয়ে অধিকাংশ মিল মালিক সরকারের কাছে চাল বিক্রি করতে আগ্রহী নয়। চালের দর পুনর্বিবেচনার জন্য সরকারের কাছে দাবি করেছেন তিনি।
খাদ্য বিভাগ জানায়, ৭ মে থেকে মিলারদের কাছ থেকে চাল সংগ্রহ করার কথা ছিল সরকারের। গত ৩০ এপ্রিল ছিল মিল মালিকদের সঙ্গে সরকারের চাল কেনা চুক্তি করার শেষদিন। এখনো পর্যন্ত কোনো মিলার চুক্তি করেনি। তবে শেষদিন পর্যন্ত ২৫ জন মিলার সরকারের কাছে চাল বিক্রি করার লক্ষ্যে পে-অর্ডার জমা দিয়েছেন। ১৪১ জন মিল মালিকের মধ্যে অন্যরা চুক্তি করেনি। ফলে সরকারের চাল কেনার লক্ষ্যমাত্রা নিয়ে সন্দেহ দেখা দিয়েছে।
জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক আবু নঈম মো. শফিউল আজম বলেন, ‘করোনো পরিস্থিতির কারণে অনেক ব্যাংক বন্ধ ছিল। তাই অনেকেই পে-অর্ডার করতে পারেনি। বিষয়টি ব্যাপারে আমরা ঢাকায় অধিদপ্তরের কাছে চিঠি লিখেছি’।
মিল মালিকদের দাবি, বাজারে নতুন ধান ওঠতে শুরু করেছে। তবে ধানের দাম বাড়তি থাকায় বাজারে চালের দামও বৃদ্ধির দিকে রয়েছে। চালের দাম বাড়তি থাকায় সরকারের কাছে চাল বিক্রি করতে অনাগ্রহ প্রকাশ করেছেন অধিকাংশ মিল মালিক।
সরকারের কাছে চাল বিক্রির চুক্তি করার জন্য পে-অর্ডার জমা দিয়েছেন রাইস মিল মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল ইসলাম। তিনি বলেন, ‘লোকসান হলেও সংকটময় মুহূর্তে সরকারের কাছে চাল বিক্রি করতে চুক্তি করেছি। মহানগর ও জেলার অনেকেই চুক্তি করেছেন। যারা চুক্তি করেছেন তারা খাদ্য বিভাগের লক্ষ্যমাত্রা পূরণে সহায়ক হবে’।
খাদ্য বিভাগ জানায়, সরকার মিলারদের কাছ থেকে আতপ চাল সংগ্রহ করবে নয় হাজার ৬৭ টন। সিদ্ধ চাল সংগ্রহ করবে দুই হাজার ৮৪৩ টন। আতপ চাল প্রতিকেজি ৩৫ টাকা ও সিদ্ধ চাল ৩৬ টাকা দরে কিনবে সরকার। আর ধান কিনবে কৃষকদের কাছ থেকে। প্রতিকেজি ধানের দাম ২৬ টাকা।
চট্টগ্রাম রাইস মিল মালিক সমিতির সভাপতি শান্তু দাশগুপ্ত পূর্বকোণকে বলেন, ‘চট্টগ্রাম মহানগর ও জেলার ১৪১টি রাইস মিল রয়েছে। তবে সিদ্ধ চালের মিল রয়েছে মিরসরাই, সীতাকু-, ফটিকছড়ি ও নাজিরহাট এলাকায়। বাজারে ধান ও চালের দাম বাড়তি থাকায় অধিকাংশ মিলার সরকারের সঙ্গে চুক্তি করেনি। চালের দর বাড়ানোর জন্য সরকারের কাছে দাবি জানানো হয়েছে’।
খোলা বাজারে সরকারি সংগ্রহ নীতিমালা অনুযায়ী চাল বিক্রি হচ্ছে প্রায় ১৮শ টাকা। কেজিতে ৩৬ টাকা। সিদ্ধ চাল বিক্রি হচ্ছে ১৮৫০ থেকে ১৯ শ টাকা। কেজিতে ৩৭ থেকে ৩৮ টাকা। এর বাইরে পরিবহন ও গুদাম খরচ রয়েছে কেজিতে প্রায় তিন টাকা।
জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক কর্মকর্তা আবু নঈম মো. শফিউল আজম পূর্বকোণকে বলেন, ‘৩০ এপ্রিল ছিল চুক্তি করার শেষ সময়। এখনো পর্যন্ত কোনো মিলার চুক্তি করেনি। তবে পে-অর্ডার জমা নেওয়া হয়েছে। সময় বাড়ানোর জন্য অধিদপ্তরের চিঠি দেওয়া হয়েছে। অধিদপ্তরের সিদ্ধান্ত মতে পরবর্তী ব্যবস্থা নেওয়া হবে’।
সরকারি দর বাড়ানোর বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘নীতিমালা অনুযায়ী চাল কিনবে সরকার। দাম বাড়ানোর বিষয়টি মন্ত্রণালয়ের ব্যাপার। এবিষয়ে সরকারের নতুন কোনো সিদ্ধান্ত আসেনি।’
প্রসঙ্গত, ২০১৬ ও ২০১৭ সালেও একই অবস্থা হয়েছিল। বাজারে চালের দাম বাড়তি থাকায় সরকারকে চাল দিতে অনাগ্রহ দেখিয়েছিল মিল মালিকেরা। ফলে ওই দুই বছর সরকারি সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা পূরণ করতে পারেনি খাদ্য অধিদপ্তর।
খাদ্য বিভাগ জানায়, কৃষকের ধান উৎপাদন খরচ বেড়ে যাওয়ায় সরকার এই কর্মসূচি গ্রহণ করে। কৃৃষককে সরাসরি প্রণোদনা দিতে ও ফড়িয়াদের দৌরাত্ম্য কমাতে কৃষকের কাছ থেকে সরাসরি ধান সংগ্রহের উদ্যোগ নেয়া হয়। কৃষকদের কাছ থেকে সরাসরি ধান সংগ্রহ না করে দালাল চক্র ও ফড়িয়াদের কাছ থেকে ধান সংগ্রহের অভিযোগও দীর্ঘদিনের। এছাড়া ছিল নানা অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগ।

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট