চট্টগ্রাম শুক্রবার, ২৯ মার্চ, ২০২৪

হালদায় ছুরিকাঘাতে ডলফিন খুন

রাউজান সংবাদদাতা

৮ মে, ২০২০ | ১১:৫৫ অপরাহ্ণ

দক্ষিণ এশিয়ার একমাত্র মৎস্য প্রজননক্ষেত্র হালদা নদীতে প্রায়ই ডলফিনের (শুশুক) মৃত্যু হয়। কখনো নদীতে অবৈধভাবে চলাচলরত ইঞ্জিনচালিত বোট কিংবা অবৈধ বালু উত্তোলনকারীদের ইঞ্জিনচালিত বোটের পাখার আঘাতে ডলফিনের মৃত্যুর সংবাদ পাওয়া যায়। এবার নদীর বিলুপ্তপ্রায় ডলফিনের মৃত্যুর খবর মিলেছে সম্পূর্ণ অস্বাভাবিক।

তবে এবার কোন পাখার আঘাতে নয়, এবার ডলফিনকে ছুরিকাঘাত করে নৃশংসভাবে হত্যা করেছে কিছু মানুষরূপী হায়েনা। আজ শুক্রবার (৮ মে) সকালের দিকে রাউজানের উরকিরচর ইউনিয়নের জিয়া বাজার এলাকার ছায়ারচর নামক স্থানে ডলফিনটিকে হত্যা করা হয়। হালদায় এবারই প্রথম মানুষের হাতে খুনের শিকার হলো কোনো ডলফিন।

হালদা বিশেষজ্ঞ ও চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় প্রাণীবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক মনজুরুল কিবরীয়াসহ স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, ছুরিকাঘাতে নৃশংসভাবে খুন করা ডলফিনটি শুক্রবার সকালে নদী পাড়ের রাউজান উপজেলার উরকিরচর ইউনিয়নের জিয়া বাজার এলাকার ছায়ারচর নামক স্থানে পড়েছিল।

এ সংবাদ পাওয়ার সাথে সাথে আইডিএফ’র কর্মি মিমু দাস এবং স্বেচ্ছাসেবক রওশনগীর দ্রুত ঘটনাস্থলে পৌঁছে মৃত ডলফিনটি উদ্ধার করে গড়দুয়ারা এলাকায় আইডিএফ অফিসে নিয়ে আসে। প্রাথমিক পরীক্ষা-নিরীক্ষার পর ডলফিনটি মাটি চাপা দেয়া হয়। ডলফিনটির দৈর্ঘ্য ৫ ফুট ২ ইঞ্চি এবং ওজন ৫২ কেজি। ডলফিনটিকে মাথা আড়াআড়িভাবে এবং ঘাড় থেকে লেজ পর্যন্ত দৈর্ঘ্য কাটা হয়েছে। ধারণা করা হচ্ছে, কোন জেলের অবৈধ জালে আটকা পরেছিল ডলফিনটি। পরে সেটিকে ডাঙ্গায় তোলা হয় এবং কেটে চর্বি নেয়া হয়।

এ প্রসঙ্গে হালদা বিশেষজ্ঞ ও চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় প্রাণীবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক মনজুরুল কিবরীয়া বলেন ‘ডলফিনটিকে হত্যা করে তা থেকে বেশকিছু চর্বি নিয়ে যাওয়া হয়েছে।’ ডলফিনের চর্বি কোন কাজে লাগে কিনা- এমন প্রশ্নের জবাবে কিবরীয়া বলেন ‘গ্রামের মধ্যে কিছু কুসংস্কার আছে যে, ডলফিনের চর্বি বা তৈল বিভিন্ন রোগের প্রতিষেধক। চর্বিগুলো ব্যবহারের জন্য এ কাজ করা হয়েছে। এ ধরণের ডলফিন খুনের ঘটনা এই প্রথম এবং এই ঘটনাটি হালদা নদীর ডলফিন সংরক্ষণের জন্য একটি অশনি সংকেত বলে মনে করি আমি। হত্যাকাণ্ডের এই চিহ্ন বিগত সময়ের মৃত ডলফিনগুলোর চেয়ে একটি নতুন ইঙ্গিত বহন করে।’

প্রসঙ্গত, গত ২১ মার্চ ২৩টি ডলফিনের মৃত্যুর পর ১৮ দিনের মধ্যে এটি ২৪তম ডলফিনের মৃত্যু হয়েছে। উল্লেখ্য যে, নদীতে এখন কার্প জাতীয় মা মাছের ডিম ছাড়ার ভরা মৌসুম। প্রতিবছর চৈত্র- বৈশাখ মাসে হালদায় মা মাছ ডিম দিয়ে থাকে। বজ্রবৃষ্টি, পাহাড়ি ঢলসহ প্রাকৃতিক বৈরী পরিবেশ হলেই মা মাছ ডিম ছাড়ে। বর্তমানে নদীর দুই পাড়ের (রাউজান-হাটহাজারীর) অসংখ্য মৎস্যজীবি ডিম সংগ্রহের জন্য প্রস্তুত রয়েছে

 

 

 

 

পূর্বকোণ/আরপি-জাহেদ

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট