চট্টগ্রাম শনিবার, ২০ এপ্রিল, ২০২৪

সর্বশেষ:

করোনাভাইরাস : প্রশাসনের নজরদারিতে ভাটা

নাজিম মুহাম্মদ

৮ মে, ২০২০ | ৯:৪৭ অপরাহ্ণ

করোনাভাইরাস আক্রান্তের সংখ্যা দিন দিন বাড়ছে। তবে নগরীতে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার চেষ্টা কমেছে। লকডাউন বলা হলেও সড়কে দিন দিন বাড়ছে মানুষের সংখ্যা। যেন স্বাভাবিক রূপে ফিরছে নগরী। করোনা অক্রান্তদের তালিকায় চট্টগ্রাম মহানগরী উর্ধ্বমুখী অবস্থানে রয়েছে। শপিংমল খুলে দেওয়ার সরকারি ঘোষণার পরপরই নগরীর সবখানেই দোকানপাট খোলা। রাস্তায় যানবাহনের জটলা। বাজারগুলোতে মানুষের ঠেলাঠেলি। নগরীর পাঁচ প্রবেশমুখেও তেমন বিধি-নিষেধ নেই। ফলে করোনা সংক্রমণ থেকে বাঁচতে ঘরে থাকার প্রবণতা কমে গেছে নগরীতে। লোকজন এভাবে ঘর থেকে হর-হামেশা বের হওয়ার ফলও পাওয়া যাচ্ছে তাৎক্ষণিকভাবে। প্রতিদিন লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ছে করোনা সংক্রমণ। গত বুধবার একদিনেই নগরীতে আক্রান্ত হয়েছেন ১২ জন। মৃতের সংখ্যাও বাড়ছে পাল্লা দিয়ে। অথচ এর আগে টানা কোনো সংক্রমণ নগরীতে ছিল না। স্বাস্থ্য বিভাগ সংশ্লিষ্টরা বলছেন, এভাবে চলতে থাকলে অচিরেই সব অর্জন হাতছাড়া হয়ে যেতে পারে। সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখতে এপ্রিল মাস জুড়ে নগর পুলিশ ও জেলা প্রশাসনের তৎপরতা থাকলেও চলতি মাসে এ তৎপরতায় অনেকটা ভাটা পড়েছে বৈকি। সকাল থেকে বিকেল পর্যন্ত নগরীতে মানুষের মাঝে সামাজিক দূরত্বের বিষয়টি খুব একটা চেখে পড়ে না। তবে বিকেল চারটার পর থেকে ফাঁকা হতে থাকে নগরী। নগর পুলিশের পশ্চিম জোনের উপ-কমিশনার (ডিসি) ফারুকুল হক বলেন, মানুষের মাঝে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার প্রবণতা কম। কারণে-অকারণে ঘর থেকে বের হয়ে ঘোরাঘুরি করছে। মাঝে মাঝে রীতিমতো চেকপোস্ট করে মানুষকে ঘরে থাকার জন্য বুঝানোর হচ্ছে। কিন্তু কিছু হচ্ছেনা। তারপরও আমরা যতটুকু পারি চেষ্টা করছি।
চট্টগ্রামের সিভিল সার্জন ডা. সেখ ফজলে রাব্বি বলেন, সরকার সবকিছু চিন্তা করেই সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এসব সিদ্ধান্তের ক্ষেত্রে একাধিক টাস্কফোর্স কাজ করছে। এক্ষেত্রে আমাদের পরামর্শ একটাই, তা হলো স্বাস্থ্যবিধি মানলে সবার ভালো হবে, না মানলে খারাপ হবে। ঢাকা ও গাজীপুরে গার্মেন্টস কর্মীদের মধ্যে করোনার সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়ার শঙ্কা দেখা দিয়েছে, চট্টগ্রামেও গার্মেন্টস খোলা। এখানে কী পরিস্থিতি হতে পারে জানতে চাইলে সিভিল সার্জন বলেন, এক্ষেত্রেও একই বার্তা। স্বাস্থ্যবিধি কড়াকড়িভাবে মেনে চলতে হবে। এর ব্যত্যয় ঘটলে পরিস্থিতির অবনতি হবে। ঈদকে সামনে রেখে নগরীর শপিংমলগুলো খুলে দেবার সরকারি ঘোষণা এলেও লোকজন দোকান খুলছে সবখানে। তবে বড় বড় ঈদ বাজার ও শপিংমল মালিকদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ১০ মে ঈদ কেনাকাটার জন্য দোকান খোলার যে ঘোষণা রয়েছে, ততদিনে রোজার অর্ধেকই শেষ হয়ে যাবে। ফলে যারা এতোদিন নতুন কাপড় কিনে সেলাই করতে দিতেন, এবার তারা আর ঈদ বাজারে নাও যেতে পারেন। সেক্ষেত্রে টেরিবাজারের মতো থান কাপড় বিক্রির দোকানগুলো এবার প্রত্যাশা অনুযায়ী ক্রেতা পাবে না। আবার টেরিবাজারের বেশিরভাগ ব্যবসায়ী একং দোকান কর্মচারীর বাড়িই সাতকানিয়া এলাকায়। চট্টগ্রামে উপজেলা পর্যায়ে সবচেয়ে বেশি করোনা সংক্রমণের ঘটনা ঘটেছে সাতকানিয়ায়। ফলে সেখানে কেনাকাটা থেকে করোনা সংক্রমণের ঝুঁকিটা শুরু থেকেই আলোচনায় রয়েছে। তাছাড়া টেরিবাজার কিংবা রিয়াজউদ্দিন বাজারের মতো মার্কেটগুলোতে চেষ্টা করলে করোনার স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলা কোনমতেই সম্ভব নয়। থান কাপড়ের ব্যবসা না হলে শেষ মুহূর্তে তৈরি পোশাক বিক্রির বিভিন্ন শপিংমলে ভিড় বাড়তে পারে বলে ধারণা করছেন ব্যবসায়ীরা। মিমি শপিং সেন্টার, আফমি প্লাজা কিংবা বিপণী বিতানের মতো বিশেষায়িত বিক্রয়কেন্দ্রগুলোতেও এবার কতটুকু ব্যবসা হবে তা নিয়ে শঙ্কায় আছেন সেখানকার ব্যবসায়ীরা। তবে এসব মার্কেটের অধিকাংশ ব্যবসাী দোকান খোলার পক্ষে নয়। দেখা যায়, যে শপিংমল খোলার ব্যাপারে এতো তোড়জোড়, তাদেরই এ ব্যাপারে তেমন আগ্রহ নেই। কিন্তু সেই অজুহাতে ঘর ছেড়ে বেরিয়ে পড়েছে নগরবাসী। গতকাল নগরীর কয়েকটি জায়গায় পুলিশকে নতুন করে ভাসমান দোকানদারদের সরিয়ে দেওয়াসহ সামাজিক দূরত্ব মানানোর চেষ্টা করতে দেখা যায়। কিন্তু সড়কে যে পরিমাণ গাড়ি চলাচল করছে, তা বন্ধ করা পুলিশের পক্ষেও সম্ভব হয়নি। অন্যদিকে নগরীর প্রবেশপথগুলো আর আগের মতো পুলিশি তদারকিতে নেই। গণপরিবহন বন্ধ থাকলেও ছোট যানবাহন ব্যবহার করে মানুষের চলাচল দেখা গেছে।

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট