চট্টগ্রাম বৃহষ্পতিবার, ২৮ মার্চ, ২০২৪

সর্বশেষ:

করোনা হেল্পলাইনে পাওয়া যায় না হেল্প নগরবাসীর অভিযোগ

মরিয়ম জাহান মুন্নী

৮ মে, ২০২০ | ৯:২২ অপরাহ্ণ

করোনা হেল্পলাইনে বাস্তবে নেই কোনো হেল্প। শুধু লোক দেখানো আর ধোকা দেয়ার জন্য যেন এই হেল্পলাইন। নম্বরগুলোতে সারাদিন ডায়েল করেও পাওয়া যায় না কারো কোনো ছাড়া। এমন ভয়াভহ পরিস্থিতিতে প্রতিদিনই দায়িত্বহীনতার পরিচয় দিচ্ছে চট্টগ্রামের করোনা হটলাইন সেন্টার। রোগাক্রান্ত হয়ে মানুষের মৃত্যু না হওয়া পর্যন্ত যেন কোনো দায় নেই কারো। এভাবে ক্ষোভ প্রকাশ করেন নগরীর বহদ্দারহাট এলাকার ইমরান হোসেন রনী, নুর বেগম জামে মসজিদ এলাকার মো. এনামুল হক, ষোলশহর দুই নম্বর গেট এলাকার নজরুল ইসলাম, তৌহিদুল পারবেজ ও চকবাজারের জান্নাতুল ফারজানা। এদিকে প্রতিদিনই জ্যামিতিক হারে দেশে বেড়ে চলেছে করোন আক্রান্ত রুগীর সংখ্যা। এমুহূর্তে ঋতু পরিবর্তের কারণে প্রতিটি ঘরেই কম বেশি সর্দি, কাঁশি, জ্বরসহ বিভিন্ন সিজনাল ফ্লুতে আক্রন্ত হচ্ছে মানুষ। তার উপর বৈশ্বিক মহামারী করোনাভাইরাসের প্রকোপ দিন দিন বেড়ে চলায় আতঙ্কিত হয়ে রয়েছে চট্টগ্রামসহ সারা দেশের মানুষ। এই পরিস্থিতিতে সারা দেশের মত চট্টগ্রাম বিভাগেও করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাব ঠেকাতে বিআইটিআইডি এর পক্ষ থেকে ৬টি গুরুত্বপূর্ণ হট লাইন নম্বর দেয়া হয়েছে। এ হট লাইন নম্বরগুলো থেকে করোনাভাইরাস জনিত চিকিৎসা সেবা, চিকিৎসকের পরামর্শ গ্রহণ ও নমুনা পরীক্ষার সুযোগ পাবে বলে উল্লেখ রয়েছে। কিন্তু করোনা শনাক্তে সেই হট লাইন থেকে কাঙ্খিত চিকিৎসা সেবা পাচ্ছে না কোনো সেবা প্রার্থী। কিন্তু চারদিকে এ ভাইরাস ছড়িয়ে পড়ায় অসহায় হয়ে পড়েছে নগরীর প্রতিটি নাগরিক।

এবিষযে বহদ্দারহাট এলাকার ইমরান হোসেন রনী বলেন, আমার মা আজ ১২ দিন যাবত অসুস্থ। তিনি জ্বর, সর্দি, শুকনো কাঁশি, ও বুকের ব্যথায় ভুগছেন। আমরা মাকে নিয়ে এক ভয়াভর পরিস্থিতির মধ্যে পড়েছি। এমন পরিস্থিতিতে আমরা করোনা টেস্ট ও ডাক্তারের পরামর্শ নিতে চট্টগ্রামের বিআইটিআইডি-তে কল দিয়েছি। কোথাও থেকে সাড়া পাইনি। বিআইটিআইডিতে কল দিতে দিতে আমি ক্লান্ত। কিন্তু তারা কল ধরে না। কিছু নম্বরে কল ঢুকেও না। আবার কোনো নম্বরে যদি কল যায়ও তারা রিসিভ করে না। আমরা মাকে নিয়ে খুব বিপদে পড়েছি। পরে আশপাশের কিছু পরিচিত ফার্মেসি ও ডাক্তার থেকে সাহায্য নিয়ে মাকে ওষুধ খাওয়াতে শুরু করি। এরইমধ্যে আমার ছোট ভাই এবং আমিও অসুস্থ হয়ে পড়ি। আমার মা এখনো অসুস্থ। তার গায়ে জ্বর মাঝেমধ্যে আসে আর গলাব্যথা এখনো রয়েগেছে। আমরা এখনো খুব ভয়ে আছি। এখনো করোনা টেস্ট করাতে পারিনি। আমার মা এমনিতে অনেক রোগে আক্রান্ত তাই তাকে নিয়ে বাইরে যেতেও সাহস পাচ্ছি না। কারণ তাতে তার আরো ক্ষতি হতে পারে। আমরা সঠিক সেবা কিভাবে পাবো বুঝতে পারছি না। যদি এমন হয় তবে ঘরে ঘরে মানুষ মারা যাবে। এভাবে কষ্টকর বর্ণনা দেন অন্যরাও। এছাড়া প্রতিটি ঘরেই জ্বর, সর্দি. কাঁশি ও গলাব্যথার রোগী রয়েছে বলে জানায় তারা।
আরেক ভুক্তভোগী নজরুল ইসলাম বলেন, করোনা হেল্পলাইনে করোনা টেস্ট ও ডাক্তারদের পরামর্শ নিতে হেল্প লাইনগুলোতে কল দিয়ে আপ্রাণ চেষ্টা করেছি। কিন্তু সব চেষ্টাই বিফল হয়েছে আমার। এখনো পর্যন্ত কেউ ভুল করেও একটি বারের জন্য কল ধরেনি। আমি এখনো খুব অসুস্থ। একমাত্র আল্লার উপর ভরসা করে ওষুধের দোকান থেকে ওষুধ নিয়ে খাচ্ছি।

এবিষয় বিআইটিআইডি’এ হাসপাতালের পরিচালক প্রফেসর ডা. এম এ হাসান চৌধুরী বলেন, বৈশ্বিক মহামারী মোকাবেলায় আমরা সর্বোচ্চ সেবা দিচ্ছি। এখন এটি আরো ভালোভাবে করার জন্য আমরা চট্টগ্রাম সিটির বাসিন্দাদের জন্য চট্টগ্রাম মেডিকেলে ফ্লু কর্নার চালু করা হচ্ছে। যাতে মানুষকে আরো ভালোভাবে সেবা দেয়া যায়। তিনি আরো বলেন, এখন যেহেতু দিনদিন রোগীর সংখ্যা বেড়ে চলেছে তাই ঘরে গিয়ে নমুনা সংগ্রহ করা আর সম্ভব হচ্ছে না। তবে যারা খুব অসুস্থ ও ঘর থেকে বেরুতে পারছে না তাদের নমুনা সংগ্রহ করতে আমাদের টিম বাড়ি যাচ্ছে। এছাড়া যারা হাসপাতালে আসতে পারবে তারা চট্টগ্রাম মেডিকেলের ফ্লু কর্নারে এসে নমুনা পরীক্ষা করতে হবে।

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট