চট্টগ্রাম শনিবার, ২০ এপ্রিল, ২০২৪

সর্বশেষ:

জেএমবি’র কৌশল পরিবর্তন : ম্যাচের কাঠি থেকে ছাড়ানো বারুদে তৈরি হয় বোমা

নাজিম মুহাম্মদ

৬ মে, ২০২০ | ৯:১৪ অপরাহ্ণ

কর্মী বাছাই বিস্ফোরক সংগ্রহে কৌশল পরিবর্তন করেছে জঙ্গি গ্রুপ নব্য জেএমবি। নগরীর ট্রাফিক পুলিশ বক্সে বোমা বিস্ফোরণে অভিযুক্ত থাকার অপরাধে পুলিশ যে তিনজনকে গ্রেপ্তার করেছে তাদের মধ্যে দুইজন ছাত্রশিবিরের সাবেক কর্মী হলেও অন্যজনের বাবা মুক্তিযোদ্ধা। ম্যাচের কাঠি থেকে ছাড়ানোর বারুদ দিয়ে তৈরি করা হয়েছিল বিস্ফোরিত বোমা। দক্ষ কারিগরের হাতে বোমা তৈরি হয়েছে তাতে সন্দেহ নেই। পুলিশ কর্মকর্তাদের ধারণা গ্রেপ্তারকৃতদের জঙ্গি গ্রুপে জড়িত হওয়ার সময়কাল খুব বেশি দিনের নয়। তবে পলাতক সেলিম উদ্দিন ও আকিব চট্টগ্রামের জঙ্গি গ্রুপের নীতিনির্ধারণী পর্যায়ে নেতা এমনটি ধারণা আইনশৃঙ্খলা সংস্থার।
জানাযায়, সাইফুল্লাহ আর ইমরান একসাথে হাইস্কুল আর কলেজে পড়েছে। সেই সুবাদে দুজনের বন্ধুত্ব দীর্ঘদিনের। সাইফুল্লাহ ইমরানকে জঙ্গি নেতা সেলিমের সাথে পরিচয় করে দেয়।
তদন্ত সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানাযায়, ট্রাফিক পুলিশ বক্সে বিস্ফোরিত বোমায় ব্যবহৃত বিস্ফোরকগুলো দিয়াশলাইয়ের কাঠি থেকে সংগ্রহ করা হয়েছে। প্রায় দেড় মাসের বেশী সময় ধরে তারা ম্যাচের কাঠি থেকে বারুদ সংগ্রহ করে জমিয়ে তা দিয়ে বোমা তৈরি করেছে। মোটরসাইকেল কিংবা প্রাইভেট গাড়ির লক-আনলক করার কাজে ব্যবহৃত রিমোট ব্যবহার করে তারা বিস্ফোরণ ঘটিয়েছে। মূলত বোমাটি তৈরি করা থেকে চট্টগ্রাম শহরে নিয়ে আসা সব কাজ করেছে পলাতক জঙ্গি সদস্য সেলিম উদ্দিন, আকিব, জহির ও আবু সাদেক। গ্রেপ্তার এমরান পুলিশের প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে জানিয়েছে, এ প্রথম রিমোট কন্ট্রোল নিয়ন্ত্রিত বোমাটি তৈরি করা হয়েছে। বোমাটি আসলে কাজ করে কিনা তা পরীক্ষা করা হয়েছে। কিন্তু পুলিশ বক্সে বোমা পরীক্ষার উত্তর খুঁজছেন জঙ্গি দমনে নিয়োজিত আইন-শৃঙ্খলা সংস্থার সদস্যরা। তবে পলাতক সেলিম ও আকিবকে পাওয়া গেলে চট্টগ্রামে নব্য জেএমবির নতুন করে উত্থানের বিষয়ে অনেক প্রশ্নে উত্তর মিলবে এমনটি ধারণা করা হচ্ছে।
মাঠ পর্যায়ের তিন সদস্য গ্রেপ্তার হলেও তাদের মূল নেতারা ধরা পড়ছেন না। পুলিশ এতোদিন পলাতক জেএমবি নেতা রুবেলের খোঁজ নিতে গলদঘর্ম হলেও গ্রেপ্তার কর্মীরা জানালেন, রুবেল নয়, এখন চট্টগ্রামের জেএমবির দায়িত্বে আছেন সেলিম। সঙ্গে আছেন আবু সাদেক, জহির ও আকিব । ফলে তলে তলে জেএমবি নিজেদের কাজ এবং সমর্থক দুই-ই বাড়াচ্ছে।
জেএমবির কার্যক্রম বরারবই কাট আউট সিস্টেমে পরিচালিত হয়। এর অর্থ হলো-যিনি মাঠে কাজ করছেন, তিনি উপরে কেবল একজনকেই চিনবেন। তার উপরের কাউকে চেনার সুযোগ নাই। ফলে মাঠে কী পরিমাণ লোক কাজ করছেন কিংবা সংগঠিত হচ্ছেন, তা কয়েকজন জেএমবি সদস্য ধরা পড়লেই বোঝার সুযোগ নেই। জেএমবির মূল মাস্টারমাইন্ডদের একজন রুবেল এখনো পলাতক। চট্টগ্রামে জেএমবির বিস্তার শুরু হয়েছিল মিরসরাই উপজেলার সোনাপাহাড় গ্রাম থেকে। রুবেলের বাড়ি সেখানেই।
সম্প্রতি ঢাকায় গ্রেপ্তার এক নব্য জেএমবি সদস্য স্বীকারোক্তিতে বলেছে, নব্য জেএমবি নেতা মেজর জিয়া ছদ্মবেশে চট্টগ্রাম ও পার্বত্য চট্টগ্রামে চলাফেরা করছেন। তার নেতৃত্বে একদল জেএমবি সদস্য নতুন করে হামলা ও বিস্ফোরণের শক্তি অর্জনের চেষ্টা করে যাচ্ছে।
চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশের কাউন্টার টেররিজমের উপ-কমিশনার মো. শওকত আলী বলেন, নগরীর ষোলশহর পুলিশ বক্সে হামলা ছিল নতুনভাবে সংগঠিত জেএমবির প্রথম বিস্ফোরণ। তারা আরো বড় বিস্ফোরণের জন্য সরঞ্জাম জড়ো করেছিল, আমরা তা উদ্ধার করেছি। তাদের আগে পরে যারা আছে, তাদের গ্রেপ্তারে আমাদের অভিযান ও কার্যক্রম অব্যাহত আছে।
দেখা যায়, ২০১৫ সাল থেকে চট্টগ্রামে জেএমবি একটার পর একটা বড় ধরনের ঘটনা ঘটিয়েছে। গোয়েন্দা পুলিশও তাদের পিছু লেগে অনেক সাফল্য দেখিয়েছিল সেইসময়। এদের মধ্যে হাটহাজারীর আমানবাজারে ফারদিনের আস্তানা থেকে একে-১১ রাইফেলসহ অস্ত্রশস্ত্র উদ্ধার জঙ্গি জাবেদ খুন ও সদরঘাট এলাকায় জেএমবির ডাকাতি ও খুনের ঘটনার যথাযথ তদন্ত হয়। ধরা পড়ে অনেকে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত সব জঙ্গি ধরা পড়েনি। ফারদিনের মতো বড় জঙ্গিদের কেউ কেউ চট্টগ্রামের বাইরে পালিয়ে যায়। অন্য এলাকার পলাতকরা চট্টগ্রামে আসে। ষোলশহরে বিস্ফোরণের আগে দীর্ঘদিন ধরে চট্টগ্রামে জঙ্গি বিরোধী অভিযানও বন্ধ আছে।
তবে জঙ্গি কার্যক্রম তদারককারী কাউন্টার টেররিজমের উপ-কমিশনার শওকত আলী বলেন, যে তিনজন ধরা পড়েছে তাদের সঙ্গে আগের জঙ্গিদের সংযোগ নেই। তারা নিজ থেকে জঙ্গি হিসেবে বায়েত (মোটিভেটেড) হয়েছেন।
গত রবিবার ভোররাতে যে তিন জঙ্গি সদস্য ধরা পড়েছেন তাদের একজন আবু সালেহ’র বাড়ি সাতকানিয়ায়। তিনি একসময় ছাত্র শিবির করতেন।
পারিবারিক সূত্রে জানা যায়, তিনি মাকে বলেন তার ভাগের সম্পদ ভাই বোনদের মধ্যে ভাগ করে দিতে। তিনি জিহাদের মাধ্যমে জীবন উৎসর্গ করার ইচ্ছাও পোষণ করেন। স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, আনু ফকিরের দোকান নামক স্থানে একটি মসজিদে আবু সালেহ’র সঙ্গে বিভিন্ন সময় এমরানসহ কিছু যুবক মোটরসাইকেলে করে দেখা করতে আসতেন। সঙ্গে আনতেন কাগজপত্র। এদের মধ্যে ইমরানের বাবা মুক্তিযোদ্ধা। স্থানীয়ভাবে তারা আওয়ামী পরিবার হিসেবেই স্বীকৃত। তবে সাইফুল্লাহ একসময় ছাত্রশিবির করতেন।
তিন নব্য জেএমবি সদস্য গ্রেপ্তারের পর তারা চট্টগ্রাম অঞ্চলে নতুন নেতা হিসেবে সেলিমের নাম বলেছেন। তবে সেলিমের সঙ্গে আছেন আবু সাদেক, মো. জহির ও আকিব। গত ২৮ ফেব্রুয়ারি পুলিশ বক্সে বিস্ফোরণের জন্য সেলিম লোহাগাড়া থেকে বিস্ফোরক নিয়ে আসেন। আর ইমরানের নাসিরাবাদ আপন নিবাসের বাসা

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট