চট্টগ্রাম বৃহষ্পতিবার, ২৫ এপ্রিল, ২০২৪

প্রবাসীর বাড়িতে পেট্রোল বোমা নিক্ষেপের নেপথ্যে ইয়াবা ব্যবসা

নাজিম মুহাম্মদ

৩ মে, ২০২০ | ৯:০৮ অপরাহ্ণ

* সাজ্জাদের সহযোগী আকবরের আদালতে জবানবন্দি
* পেট্রোল বোমা তৈরি করা হয় শিবির ক্যাডারের বাড়িতে

করোনার এ আপদকালীন সময়েও থেমে নেই সন্ত্রাসী সাজ্জাদের চাঁদাবাজি। ভারতে বসে নগরীতে রীতিমতো চাঁদাবাজি করে যাচ্ছে মোস্ট ওয়ান্টেট সন্ত্রাসী শিবির ক্যাডার সাজ্জাদ। তার নির্দেশে চাঁদাবাজি করছে বায়েজিদ চালিতাতলির ইকবাল, শাহজাহানসহ একটি সংঘবদ্ধ গ্রুপ।
দুবাই প্রবাসী আবছারকে ফোন করে সাজ্জাদের চাঁদাদাবির একটি অডিও রেকর্ড এ প্রতিবেদকের হাতে এসেছে। দুবাই ‘আল আইন’ শহরে থাকা আবছারকে ফোন করে সাজ্জাদ বলেন, ‘আমি সাজ্জাদ বলছি। ছোট ভাইগুলো মনে হয় কথা বলেছে। ওরা যা বলেছে তা করে দেন। আরেকটি অডিও রেকর্ডে আবছারকে ফোন করে আকবর বলেন, ‘বড় ভাইয়ের (সাজ্জাদ) কথামতো কাজ না করলে আক্কাস (আবছারের ভাই) রাস্তায় আসলে যা করার আমরা করবো।
সাজ্জাদের নির্দেশে গত ২১ এপ্রিল ভোরে পাঁচলাইশ বিবিরহাটের পশ্চিম পাড়ায় প্রবাসীর বাড়িতে পেট্রোল বোমা নিক্ষেপ করে ইকবালের গ্রুপ। বোমা ছোঁড়ার ঘটনায় অংশ নিয়েছিলো ইকবালসহ সাতজন। সাজ্জাদের সাথে ইকবাল ও আকবরের নিয়মিত যোগাযোগ রয়েছে। নগরীর বায়েজিদ-পাঁচলাইশ এলাকার বিভিন্ন শিল্প কারখানা, প্রবাসী ও ব্যবসায়ীরা সাজ্জাদের চাঁদাবাজির টার্গেট। বোমা ছুঁড়ে মারার ঘটনায় জড়িত থাকার অভিযোগে লক্ষ্মীপুরের শ্বশুরবাড়ি থেকে আকবর ওরফে ঢাকাইয়্যা আকবরকে গ্রেপ্তার করে নগর গোয়েন্দা পুলিশ। এর আগে নিশাত ও হোসেন নামে আরো দুইজনকে গ্রেপ্তার করে পাঁচলাইশ থানা পুলিশ। ভারতে বসে বন্দর নগরীতে সাজ্জাদের চাঁদাবাজির বিস্তারিত বর্ণনা দিয়েছেন গোয়েন্দা পুলিশের হাতে গ্রেপ্তার করিমগঞ্জের মনজুর আলমের ছেলে আলি আকবর ওরফে ঢাকাইয়্যা আকবর।
নগর গোয়েন্দা পুলিশের উপ-কমিশনার মিজানুর রহমান জানান, আকবরকে লক্ষ্মীপুরের সদর থানার শাকচর ইউনিয়নের শ্বশুরবাড়ি থেকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। বিবিরহাটের পশ্চিম পাড়ায় প্রবাসীর বাড়িতে পেট্রোল বোমা বিস্ফোরণ ভারতে পালিয়ে থাকা দুর্ধর্ষ সন্ত্রাসী শিবির ক্যাডার সাজ্জাদের নির্দেশে হয়েছিলো। ঘটনায় অংশ নিয়েছিলো সাজ্জাদের পাঁচ অনুসারী।
আকবরের জবানবন্দি : আকবর আদালতে দেয়া জবানবন্দিতে বলেন, তার বাড়ি কিশোরগঞ্জোর করিমগঞ্জ হলেও বড় হয়েছেন নগরীর চালিতাতলির নানার বাড়িতে। খারাপ বন্ধু বান্ধবের সাথে মিশে ছিনতাই ও ডাকাতিতে জড়িয়ে পড়ে। দীর্ঘদিন জেলও কাটেন। আকবরের সাথে ভারতে থাকা দুর্ধর্ষ সন্ত্রাসী শিবির ক্যাডার সাজ্জাদের সম্পর্ক দীর্ঘদিনের। শুধু আকবর নয়। চালিতাতলির দারোগাবাড়ির ইউনুছের ছেলে ইকবাল, ওয়াজেদিয়া এলাকার মোহাম্মদ জামালের ছেলে শাহজাহান ওরফে শিবির শাহাজাহান, মিজান সবাই সাজ্জাদের নির্দেশে চট্টগ্রামে চাঁদাবাজিসহ নানা অপকর্ম করে বেড়ায়। সাজ্জাদ বর্তমানে ভারতে রয়েছে। কারাগারে থাকা অবস্থায় নিশাত ও হোসেন নামে দুজনের সাথে পরিচয় হয় আকবরের।
আকবর বলেন, গত ১৬ এপ্রিল ইকবাল তাকে ফোন করে বলেন, আক্কাছের ভাই আবছার দুবাই থাকে। দুবাইয়ের একটি মোবাইল নম্বর দিয়ে বলেন, আবছারকে ফোন করে বলবি সাজ্জাদ ভাই ফোন দেবে। ইকবালের নির্দেশ অনুযায়ী দুবাই বসবাসরত আবছারকে ফোন করে নিজের পরিচয় দিয়ে আকবর বলেন, ‘সাজ্জাদ ভাই তাকে ফোন করবে। কথাবার্তা যেন ঠিকমতো বলেন’। আকবরের দাবি-আক্কাছ আগে দুবাই ছিলো। সেখানে সন্ত্রাসী সাজ্জাদের সাথে তার ইয়াবা ব্যবসা ছিলো। ইয়াবা ব্যবসার জের ধরে কালো তালিকাভুক্ত হবার পর বাংলাদেশে চলে আসে। তার কাছ থেকে সাজ্জাদ ইয়াবা ব্যবসার লেনদেনের টাকা পাবে। এ কারণে আক্কাছের কাছে একটি ফ্ল্যাট দাবি করেছে।
আক্কাছের বাড়িতে ককটেল ছুঁড়ে মারা প্রসঙ্গে আকবর বলেন, ১৮ এপ্রিল ইকবাল তাকে ফোন করে বলেন- সাজ্জাদের দাবি আক্কাছ ও আবছার মেনে নেয়নি। কিছু একটা করতে হবে। আকবর তখন লক্ষ্মীপুরে বাড়িতে ছিলো। যানবাহন চলাচল বন্ধ থাকায় চট্টগ্রাম আসতে না পারলেও সাজ্জাদের নির্দেশ অনুযায়ী আকবর, ইকবাল, শাহজাহান ও মিজান ফোনে কথা বলে প্রবাসীর বাড়িতে ককটেল ছুঁড়ে মারার পরিকল্পনা করে। ভারত থেকে ফোন করে সাজ্জাদই বলেছিলো- আক্কাছের বাসায় যেন আগুন লাগিয়ে দিই, নয়তো পেট্রোল বোমা ছুঁড়ে মারি। কারাগারে পরিচয় হওয়া নিশাত আর হোসেনকেও ঘটনায় থাকতে বলেন। তাদের বিকাশ নম্বরে ইকবাল খরচের টাকা পাঠায়।
ঘটনার আগের দিন নিশাত ও হোসেন প্রবাসীর বাড়ির ছবি তুলে আকবরের ইমো নম্বরে পাঠায়। পরবর্তীতে ইকবাল ছবিগুলো ভারতে সাজ্জাদের কাছে পাঠায়।
শাহজানের বাসায় তৈরি হয় পেট্রোল বোমা : আকবর জবানবন্দিতে জানান, সিদ্ধান্ত হয় শিবির ক্যাডার শাহজাহানের বাসায় পেট্রোল বোমা তৈরি করা হবে। সোহেল প্রকাশ চাকমা সোহেল, ইকবাল, হোসেন ও নিশাত ঘটনার আগের দিন শাহাজাহানের বাসায় কাঁচের বোতল, অকটেন ও সুতা নিয়ে যায়। লক্ষ্মীপুর শ্বশুরবাড়িতে বসে, ফোনে ফোনে সব খবরাখবর নিচ্ছিলো আকবর। ২০ এপ্রিল দুপুরে চারটি পেট্রোল বোমা তৈরি করা হয়। কথা ছিলো। ঐদিন সন্ধ্যায় পেট্রোল বোমা মারা হবে। সেই অনুযায়ী সবাইকে তৈরি থাকতে নির্দেশ দেন। পরদিন (২১ এপ্রিল) ইকবাল আকবরকে ফোন করে জানান- ভোর রাতে পরিকল্পনা অনুযায়ী আক্কাসের বাড়িতে বোমা ছুঁড়ে মারা হয়েছে। ইকবালের সাথে কথা শেষ করেই দুবাই থাকা আবছারকে ফোন করে আকবর বলেন, ‘পেট্রোল বোমা মেরে দিয়েছি। এটা একটা স্যাম্পল মাত্র’।
পাঁচলাইশ থানার পরিদর্শক (ওসি) আবুল কাশেম ভূইয়া জানান, চাঁদা না পাওয়ায় সাজ্জাদের নির্দেশে প্রবাসীর বাড়িতে পেট্রোল বোমা ছুঁড়ে মারা হয়। এ ঘটনায় আকবরসহ তিনজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। ঘটনায় জড়িত অন্যদের গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে।

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট