চট্টগ্রাম বৃহষ্পতিবার, ২৫ এপ্রিল, ২০২৪

রোজার পণ্য বেচাকেনায় চাঙ্গা

চাক্তাই-খাতুনগঞ্জ

মুহাম্মদ নাজিম উদ্দিন

২৪ এপ্রিল, ২০২০ | ৬:৩৪ অপরাহ্ণ

‘গোয়েন্দা নজরদারি ও পর্যাপ্ত পণ্য মজুদ থাকায় দাম বাড়ার সম্ভাবনা নেই’

করোনো আতঙ্কের মধ্যেও হঠাৎ চাঙা হয়ে ওঠেছে দেশের ভোগ্যপণ্যের বড় পাইকারি মোকাম চাক্তাই-খাতুনগঞ্জে। রমজান, করোনার ত্রাণ ও পণ্য মজুদ নিয়ে একেবারে বেচাকেনা ছিল জমজমাট। গতকাল (বৃহস্পতিবার) সাপ্তাহিক শেষদিনে রোজার পণ্য বেচাকেনা ও পরিবহনের জটে করোনা আতঙ্ক বা লকডাউনের বালাই ছিল এ পাইকারি বাজারে।

ব্যবসায়ীরা জানায়, অন্যান্য বছর ছিল শুধু রমজানের বেচাকেনা। এবার যোগ হয়েছে করোনাভাইরাসের ত্রাণ বিতরণ ও করোনা আতঙ্কে খাদ্যপণ্য মজুত করা। তিন কারণে বেচাকেনা একেবারে জমজমাট। তবে চাহিদা বেশি থাকলেও পণ্যের দাম অনেকটা স্থিতিশীল রয়েছে। গোয়েন্দা নজরদারি বাড়ানোর কারণে পণ্যের দাম বাড়ানোর সুযোগ নেই বলে জানান ব্যবসায়ীরা।

খাতুনগঞ্জের আড়তদার মো. জাবেদ ইকবাল বলেন, রোজা ও করোনায় ত্রাণ বিতরণের জন্য প্রচুর পরিমাণে পণ্যের চাহিদা রয়েছে। স্বাভাবিকের তুলনায় অনেক বেশি বেচাকেনা হচ্ছে। রোজা ও ত্রাণ ছাড়াও অনেকেই করোনা আতঙ্কে খাদ্য মজুত করছে। এসব কারণে বেচাকেনা একেবারে জমজমাট চলছে। আশা করছি, আরও কয়েকদিন এভাবে থাকবে।

ব্যবসায়ীরা জানান, রোজার পণ্য আমদানি ও মজুদ কয়েক গুণ বেড়েছে। ভোগ্যপণ্য সংকটের কোনো আশঙ্কা নেই। বন্দর থেকে খালাসের অপেক্ষায় রয়েছে আরও বিপুল পরিমাণ পণ্য। তবে জোগান বাড়লেও পণ্যের দাম কমেনি। প্রতিবারের ন্যায় রোজার আগে পণ্যের দাম বেড়েছে। তবে গত কয়েকদিনে পেঁয়াজ, আদা, রসুনের দাম অনেকটা স্থিতিশীল থাকলেও ভোগ্যপণ্যের মধ্যে কয়েক পদে পণ্যের দাম কিছুটা কমেছে।

এদিকে, পাইকারি মোকামে পণ্যের চাহিদা কয়েক গুণ বাড়লেও দাম বাড়েনি। বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থার নজরদারি বাড়ানোর কারণে দাম বাড়ানোর সুযোগ নেই বলে জানান ব্যবসায়ীরা। এছাড়াও বিশ^বাজারে মন্দার কারণে বিভিন্ন পণ্যের দাম কমতি রয়েছে।
চাক্তাই-খাতুনগঞ্জ আড়তদার ও ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি মো. জাহাঙ্গীর আলম জানান, রমজান উপলক্ষে চাহিদার কয়েক গুণ বেশি ভোগ্যপণ্য আমদানি করা হয়েছে। যোগাযোগ ব্যবস্থা থেকে শুরু করে ব্যবসা-প্রতিষ্ঠান, মার্কেট লকডাউন ঘোষণার পর ব্যবসায়ীরা আমদানি করা পণ্য চাক্তাই-খাতুনগঞ্জের গুদামে নিয়ে আসছে। গত কয়েক দিনে প্রচুর পরিমাণ খাদ্যপণ্য মজুদ করা হয়েছে। এরফলে ভোগ্যপণ্যের বাজারে যে অস্থিরতা ছিল, তা নেমে আসবে। বিশ^ বাজারে সব ধরনের পণ্যের দাম কমতি রয়েছে। আমাদের দেশেও কমে আসবে।

গতকাল সরেজমিন ঘুরে দেখা যায়, কিছু দোকানপাট বন্ধ থাকলেও বেশির ভাগ দোকান, আড়ত, ব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠান খোলা রয়েছে। ব্যস্ত সময় কাটান ব্যবসায়ী, শ্রমিক-কর্মচারীরা। ট্রাক-কাভার্ডভ্যান থেকে পণ্য উঠা-নামায় ব্যস্ত শ্রমিক ও কর্মচারীরা।
করোনাভাইরাসের কারণে বিশ^ বাজারে মন্দাভাব বিরাজ করছে। লকডাউন ঘোষণার পর দেশের ভোগ্যপণ্যের বড় বাজার চাক্তাই-খাতুনগঞ্জের বেচাকেনা স্থবির হয়ে পড়ে। স্থবিরতা কাটিয়ে কয়েকদিন ধরে পণ্য বেচাকেনায় ব্যস্ত ব্যবসায়ীরা।

দেখা যায়, চাক্তাই এলাকায় ছিল চালবাহী ট্রাকের দীর্ঘ লাইন। প্রতিটি মোকামে প্রচুর পরিমাণ চাল মজুত রয়েছে। শুধু চাক্তাই এলাকায় নয়, খাতুনগঞ্জেও ছিল ট্রাক-কাভার্ডভ্যানের বহর। খাতুনগঞ্জ ছাড়িয়ে ট্রাক-কাভার্ডভ্যানের যানজট আশপাশ এলাকায় ছড়িয়ে পড়ে। প্রতিটি ট্রাক-কাভার্ডভ্যানে ছিল ভোগ্যপণ্য। এছাড়াও বিপুল পরিমাণ পেঁয়াজ, রসুনও আমদানি হয়েছে।

চট্টগ্রাম রাইস মিল মালিক সমিতির সভাপতি শান্তু দাশগুপ্ত বলেন, ‘করোনা-সংকটের কারণে অনেক দিন বেচাকেনা কমে গিয়েছিল। কিন্তু রমজান সামনে রেখে কয়েকদিন ধরে বেচাকেনা বেড়েছে। করোনা সংকটে ত্রাণ বিতরণ ও রোজার কারণে ব্যবসায়ীদের ভিড় বেড়েছে। অনেক ব্যবসায়ী মাসের, কেউবা অতিরিক্ত পণ্য কেনায় বাজারে চাপ পড়েছে। চালের দাম স্থিতিশীল রয়েছে বলে জানান তিনি। তিনি বলেন, এক শ্রেণির অসাধু ব্যবসায়ী প্রতি রোজায় পণ্যের দাম অতিরিক্ত বাড়িয়ে বাজার অস্থির করার চেষ্টা করে। এর চাপ পড়ে ভোক্তাদের উপর। এজন্য অতিরিক্ত পণ্য না কেনার জন্য পরামর্শ দিয়েছেন তিনি। তিনি বলেন, চালের দাম না বাড়ানো ও অতিরিক্ত মুনাফা না করার জন্য চাল মিল মালিকদের চিঠি দিয়ে অনুরোধ করা হয়েছে। তিনি আরও বলেন, পর্যাপ্ত চাল মজুদ রয়েছে।

বাজার ঘুরে দেখা যায়, ডালের বাজার মাসখানেক ধরে অস্থিতিশীল ছিল। এ সপ্তাহেও অনেকটা স্থিতিশীল রয়েছে। বরং কেজিতে ২-৩ টাকা কমেছে। মসুর ডাল ৮৫ টাকা থেকে কমে গতকাল বিক্রি হয়েছে ৭৮-৮০ টাকায়। খেশারির ডাল ৯৫ টাকা থেকে কমে বিক্রি হয়েছে ৯০-৯১ টাকা দরে। মটর ডাল ৪২ টাকা থেকে কমে বিক্রি হয়েছে ৪০-৪১ টাকায়। দক্ষিণ আফ্রিকা থেকে আমদানি করা ছোলা ৬৫ টাকা ও অস্ট্রেলিয়ান ছোলা ৬৭ টাকা দরে বিক্রি করা হচ্ছে। মটর ৩৯ টাকা থেকে কমে ৩৭ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। চিড়া মণপ্রতি ২৭শ টাকা থেকে কমে ২৬শ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। পামওয়েল মণপ্রতি ২৪শ টাকা থেকে কমে ২৩৫০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। চিনি ২১৮০ টাকা থেকে কমে ২১৪০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। এদিকে পাইকারি বাজারে ভোগ্যপণ্যের কয়েক পদের পণ্যের দাম কমলেও খুচরা বাজারে কমেনি।

চাক্তাই-খাতুনগঞ্জ আড়তদার ও ব্যবসায়ী সমিতির সাধারণ সম্পাদক আলহাজ মো. মহিউদ্দিন বলেন, বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থার নজরদারি বেড়েছে। প্রশাসনের নজরদারিও রয়েছে। তাই বাজার অস্থির বা দাম বাড়ানোর কোনো সুযোগ নেই। দাম বরং কয়েকটি পণ্যে কিছুটা কমেছে। তবে খুচরা বাজারে এখনো দাম বাড়তি রয়েছে। বিভিন্ন বাজারে বাজার মনিটরিং জোরদার করতে হবে। না হলে পাইকারি বাজারে দাম কমার প্রভাব পড়বে না। ভোক্তারা ঠকবেন।
করোনো আতঙ্কে ১৫ দিন আগে মসলাজাতীয় পণ্য পেঁয়াজের বাজার ছিল ঊর্ধ্বমুখী। পাইকারি বাজারে ৩০ টাকা দরের পেঁয়াজের দাম বেড়ে ৬০ টাকায় উঠেছে। কয়েক দিন ধরে পেঁয়াজের সরবরাহও বেড়েছে।

বাজার ঘুরে দেখা যায়, গতকাল ভারতীয় আমদানি করা ভালোমানের পেঁয়াজ বিক্রি হয়েছে কেজিতে ৬০-৬৫ টাকা, মিয়ানমারের পেঁয়াজ বিক্রি হয়েছে ৫০-৫৫ টাকা, দেশি পেঁয়াজ ৪৫-৫০ টাকা, মেহেরপুরের পেঁয়াজ ৪৫ টাকা, হল্যান্ডের পেঁয়াজ ৪০-৪২ টাকা, চায়না পেঁয়াজ ২০-২৫ টাকা।
রোজা উপলক্ষে বাজারে পেঁয়াজের জোগান বাড়ায় দাম বাড়েনি বলে জানান আড়তদার জাবেদ ইকবাল। কেজিপ্রতি ২-৫ টাকা কমেছে বলে জানান তিনি।

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট