চট্টগ্রাম বৃহষ্পতিবার, ২৫ এপ্রিল, ২০২৪

এবার মিলবে না রকমারি ইফতারি

রমজানুল মোবারক

মোহাম্মদ আলী

২৩ এপ্রিল, ২০২০ | ৮:০৫ অপরাহ্ণ

  •  থাকবে সীমিত আকারের পার্সেলের ব্যবস্থা
  • রোজাদারদের জন্য থাকবে সেহেরির ব্যবস্থা
  • বেকার হবে তিন লাখের বেশি কর্মচারী

অন্যান্যবারের মতো এবার রমজানে হালিম, হায়দ্রাবাদ বিরানী, মাটন চাপ, বিফ চাপ, শাহী জিলাপি, নেহেরীসহ মুখরোচক ইফতারের আইটেমগুলো সহজে মিলবে না। করোনার কারণে বন্ধ থাকবে সবগুলো রেস্টুরেন্ট। তবে হোম ডেলিভারি হিসেবে কিছু কিছু ইফতারি বিক্রি করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে কয়েকটি মাত্র রেস্টুরেন্ট। তাও আবার সীমিত আকারে পার্সেল হিসেবে বিক্রি হবে।

প্রতি বছর রমজান মাসকে ঘিরে রেস্টুরেন্টগুলোর ব্যাপক প্রস্তুতি থাকে। থাকে উৎসবও। কিন্তু এবার কোনটিই নেই। করোনা কেড়ে নিয়েছে আনন্দ-উৎসব। এ কারণে নেই ইফতারি তৈরির তোরজোড়। নগরীতে ইফতারি বিক্রির নাম করা রেস্টুরেন্ট ‘হান্ডি’। এ রেস্টুরেন্টের হালিম, হায়দ্রাবাদ বিরানী, মাটন চাপ, বিফ চাপ, শাহী জিলাপি, নেহেরীসহ বিভিন্ন ইফতারি খাদ্যের যথেষ্ট পরিচিতি রয়েছে। রমজানে এগুলো বিক্রিও হয় বেশি। কিন্তু এবার সেই পরিবেশ নেই। করোনার কারণে বন্ধ রয়েছে রেস্টুরেন্ট। এ অবস্থায় গ্রাহকদের কথা বিবেচনা করে এ রেস্টুরেন্টের স্বত্বাধিকারী মো. ইমতিয়াজ উদ্দিন নওশাদ শুধু পার্সেল হিসেবে বিক্রি করবেন ইফতারি। দৈনিক পূর্বকোণকে তিনি বলেন, রেস্টুরেন্টের ভিতরে বসে এবার ইফতারি খাওয়ার কোন ব্যবস্থা থাকবে না। সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখে শুধু ইফতারি বিক্রি এবং হোম ডেলিভারি দেওয়া হবে। এজন্য আমাদের নিজস্ব লোক থাকবে। তাছাড়া ‘ফুডপান্ডা’ ও ‘পাঠাও’ আমাদের ডেলিভারি পার্টনার হিসেবে থাকবে।’

‘হান্ডি’র মতো শুধু পার্সেল হিসেবে বিক্রি করবে চকবাজারের ‘সবুজ রেস্টুরেন্ট’। করোনার কারণে রেস্টুরেন্টটি সীমিত আকারে ইফতারি বিক্রি করবে বলে জানিয়েছেন স্বত্বাধিকারী মোহাম্মদ শাহজাহান। দৈনিক পূর্বকোণকে তিনি বলেন, ‘রমজানে প্রতিদিন হালিম, জিলাপি, কাবাব, সমুচাসহ ৭ থেকে ৮ আইটেমের ইফতারি বিক্রি করবো। তাও আবার ২৪ ঘণ্টা আগে অর্ডার দিতে হবে। অর্ডার ছাড়া সাধারণ ক্রেতার কাছে ইফতারি বিক্রি হবে না। এছাড়া রেস্টুরেন্টে রোজাদারদের জন্য সেহেরির পার্সেলের ব্যবস্থা থাকবে।’

রমজানে হান্ডি ও সবুজ রেস্টুরেন্ট ইফতারি বিক্রির সিদ্ধান্ত নিলেও ইস্পাহানি মোড়ে অবস্থিত ‘পিটস্টপ’ রেস্টুরেন্ট বন্ধ থাকবে বলে জানিয়েছেন প্রতিষ্ঠানটির ম্যানেজার (কর্পোরেট এফেয়ার্স) আবদুল্লাহ আল মামুন। দৈনিক পূর্বকোণকে তিনি বলেন, ‘রমজানে ইফতারির জন্য আমাদের রেস্টুরেন্টটি ব্যাপক পরিচিতি থাকলেও করোনার কারণে এবার বন্ধ রাখতে হচ্ছে। আমাদের স্টাফদের ছুটি দেওয়া হয়েছে। ইতোমধ্যে তারা দেশের দূর-দুরান্তে তাদের বাড়িতে চলে গেছে।’

অনুরূপ তথ্য জানিয়েছেন বারকোট ক্যাফের স্বত্বাধিকারী মনজুরুল হক। তিনি বলেন, ‘করোনার বন্ধের কারণে এবার রমজানে আমাদের কোন প্রস্তুতি নেই। স্টাফদের ইতোমধ্যে ছুটি দেওয়া হয়েছে।’
আর কয়েকদিন পরই শুরু হবে পবিত্র রমজান। কিন্তু করোনা পরিস্থিতিতে গত মার্চের শেষ সপ্তাহ থেকে বন্ধ রয়েছে নগরীর পাঁচ শতাধিক হোটেল ও রেস্টুরেন্ট। এ অবস্থায় আসন্ন রমজানে খোলার কোনো সম্ভাবনা দেখছেন না মালিকরা। প্রশাসনের কর্মকর্তারাও এ বিষয়ে আশ্বস্ত করতে পারছেন না। ফলে এসব হোটেল-রেস্টুরেন্টের তিন লাখের বেশি কর্মচারী বেকার হয়ে আর্থিক সংকটে পড়েছে।

জানতে চাইলে চট্টগ্রামের জেলা প্রশাসক মো. ইলিয়াস হোসেন দৈনিক পূর্বকোণকে বলেন, ‘করোনার কারণে গতমাস থেকে হোটেল-রেস্টুরেন্ট বন্ধ রয়েছে। এ পরিস্থিতিতে রমজানে হোটেল-রেস্টুরেন্ট খোলা রাখলে বড় ধরনের বিপর্যয় হওয়ার শঙ্কা রয়েছে। এখন যেভাবে মানুষ ঘরে অবস্থান করছেন, তাদের আটকে রাখা সম্ভব হবে না। ইফতারের সময় সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখাও দুঃসাধ্য হয়ে পড়বে।’

তিনি বলেন, ‘এখন পর্যন্ত উপর মহল থেকে কোনো নির্দেশনা আসেনি। ফলে রমজানে হোটেল-রেস্টুরেন্ট খোলার সম্ভাবনা খুবই ক্ষীণ। তবে দিনমজুরদের জন্য কিছু কিছু হোটেল খোলা রাখার সিদ্ধান্ত আসতে পারে।’
প্রসঙ্গত, করোনা সংক্রমণ ঠেকাতে সরকার গত ২৬ মার্চ থেকে ২৫ এপ্রিল পর্যন্ত সারাদেশে সাধারণ ছুটি ঘোষণা করে। বর্তমানে এটি আরো ১০দিন বৃদ্ধি করা হয়েছে।
সংশ্লিষ্টরা জানান, প্রতি বছর রমজান এলেই হোটেল-রেস্টুরেন্টগুলোতে তৈরি হয় রকমারি ইফতারি। তাতে বেচাবিক্রিও বাড়ে। তাই রমজান মাসে অতিরিক্ত শ্রমিক-কর্মচারীও রাখেন মালিকরা। নগরীর অধিকাংশ মানুষ ইফতারির জন্য আসরের নামাজের পর থেকে ভিড় করেন রেস্টুরেন্টগুলোতে।

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট