চট্টগ্রাম শনিবার, ২০ এপ্রিল, ২০২৪

সর্বশেষ:

স্বরূপে অপরূপা প্রকৃতি

পতেঙ্গা সমুদ্র সৈকত

আল-আমিন সিকদার

২৩ এপ্রিল, ২০২০ | ৭:১৯ অপরাহ্ণ

  • জনশূন্য সাগর পাড়ে আঁছড়ে পড়ছে বিশাল ঢেউ
  • ভালো নেই সৈকতকে ঘিরে জীবিকা নির্বাহ করা মানুষগুলো

শো-শো বাতাস। মাঝে মাঝে শরীরে লাগছে পাড়ে আঁছড়ে পড়া বিশাল জলরাশির কয়েক ফোঁটা পানি। যতদূর চোখ যায় ততদূরই শুধু পানি আর ঢেউ। মাতাল হাওয়া আর সেই ঢেউতে দুলছে ছোট ছোট মাছ শিকারের ট্রলারগুলো, দুলছে নোঙর করা বিশাল জাহাজগুলোও। ভেসে আসা বিশাল জলরাশির ঢেউগুলোর সামনে দেখা যায়নি কোন প্লাস্টিকের বোতল কিংবা চিপস বা আচারের খালি প্যাকেট। দেখা যাবেই বা কি করে। প্রায় দেড় মাস এই সাগর পাড়ে পা পড়েনি কোন পর্যটকের। নেই সাগর পাড়ের খাবার থেকে শুরু করে বিভিন্ন পণ্যের দোকানগুলোও। তাইতো চারদিকে শুধু নিস্তব্ধতা। এই নিস্তব্ধতার মাঝেই, নিজের পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতা ঘুচিয়ে নিয়েছে প্রকৃতি। শুধু কি তাই, ভাটায় ভেসে উঠা বালুচরে উঁকি দিতে গেছে লাল রঙের কাকড়া। প্রকৃতির এই অপরূপ সৌন্দর্য চোখ বুলানোর সুযোগ পাচ্ছেন না পর্যটকরা। করোনাভাইরাসে সংক্রমণ ঠেকাতে বন্ধ করে দেয়া হয়েছে সৈকতে পর্যটক প্রবেশ। জনসমাগম ঠেকাতে কড়া পাহাড়া দিচ্ছে পুলিশ প্রশাসন। তাইতো যে বিকেল সময়টা অসংখ্য পর্যটকদের সাথে কাটাতো সাগর। এখন সে সময়টা কাটছে একাকীত্ব। গতকাল সরেজমিনে এমনই সব দৃশ্য চোখে পড়ে প্রতিবেদকের।

এদিকে সৈকতে পর্যটকদের প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা জারি হওয়ার পর থেকেই অনেকটা মানবিক জীবন যাপন করছেন সৈকত ঘিরে জীবিকা নির্বাহ করা মানুষগুলো। টানা দেড়মাস দোকান বন্ধ থাকায় পরিবারের সদস্যদের মুখে আহারের যোগান দিতে হিমশিম খাচ্ছেন তারা। একসময় সৈকতে বেড়াতে আসা মানুষগুলোর ক্লান্তি দূর করতে খাবার তুলে দিতেন যারা তারাই আজ ভুগছেন খাবার সংকটে। শুধু সৈকত পাড়ের খাবার দোকানদাররাই নয়, খাদ্য সংকটে আছেন সৈকত ঘিরে গড়ে ওঠা পুরো বীচ মার্কেটের ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীরা। এদের মাঝে অনেকেই পরিবারের কথা চিন্তা করে শুরু করেছেন অন্য কজ। কেউ চালাচ্ছেন রিকশা আবার কেউবা বিক্রি করছেন সবজি। মনে পড়ে, বীচে আসা মাত্র হাতে বড় বড় ক্যামেরা নিয়ে ছবি তোলার জন্য হুমড়ি খেয়ে পড়া যুবকগুলোর কথা। তারাও আজ রয়েছে অর্থ সংকটে। এদের মধ্যে কেউ জীবিকা নির্বাহের জন্য মানুষের কাছে সাহায্যের হাত পাতলেও অনেকেই লজ্জায় বলছেন না কষ্টের কথা। তবে এসময় তাদের পাশে দাঁড়ানোর আশ্বাস দিয়েছি বীচ সমতির নেতৃবৃন্দরা। বিচের প্রায় ৩শ ব্যবসায়ীর মাঝে খাবার পৌঁছে দিবেন তারা।

বীচ মার্কেটে আচার বিক্রি করে সংসারের যাবতীয় খরচের যোগান দেন আলমগীর। কিন্তু টানা দেড় মাস দোকান বন্ধ থাকায় অর্থ সংকটে ভুগছেন তিনি। তিনি পূর্বকোণকে বলেন, ‘আচারের দোকানটাই আমার একমাত্র সম্বল। এই দোকানের টাকা দিয়ে বউ, বাচ্চা আর ছোট বোনের লেখা পড়ার খরচ চালাতাম। কিন্তু এখন একটানা মাসের পর মাস দোকান বন্ধ থাকায় সংসার চালাতে কষ্ট হচ্ছে। কখনো কখনো ভাতের সাথে একটা ডিম বা ডাল থাকলেও। কখনো খেতে হয় শুধু ডাল দিয়ে। এভাবে চলতে থাকলে বাকি দিনগুলো কিভাবে চলবে বুঝতে পারছি না। অনেকেতো টাকার অভাবে অন্যকাজ করছেন। কেউ সবজি বিক্রি করছেন আবার কেউবা দিনমজুরি হিসবে ফসল তোলার কাজ করছেন। লকডাউন ও কাজের স্বল্পতার কারণে সবাই কাজের সুযোগও পাচ্ছে না। কোনো ত্রাণও পাইনি এখনো। শহরে অনেক বিত্তবান আছেন তারা এগিয়ে এলে আমরা হয়ত আরো কয়েকটি দিন বাঁচার সুযোগ পাবো। না হয় না খেয়ে মরতে হবে।
আচারের দোকানদারের মত না খেয়ে দিন কাটানোর কথা জানালেন ছবিওয়ালা মালেক। তিনি পূর্বকোণকে বলেন, ‘যখন ডিজিটাল ক্যামেরা বের হয়েছিল তখন থেকে ক্যামেরা দিয়ে পর্যটকদের ছবি তুলছি। সেই থেকে এখনো পর্যটকদের ছবিতুলেই চলছে আমার সংসার। কোনো রকম দিনে ৪ থেকে ৫শ টাকা ইনকাম করতাম। ছুটির দিনগুলো ছিল আমাদের কাছে আশির্বাদের মত। ওইদিন টাকা একটু বেশি পেতাম কারণ পর্যটক বেশি থাকতেন। এখন সপ্তাহের প্রতিদিন একইরকম যাচ্ছে। না খেয়ে। লকডাউন করে দেয়ায় সৈকতে না আসছে পর্যটক না হচ্ছে ইনকাম। অভাব অনটনে চলছে আমাদের সংসার। আগে সপ্তাহে অন্তত একদিন ভালো-মন্দ কিছু খেলেও এখন ডাল আর ডিম ছাড়া কিছুই নেই ভাগ্যে। অন্তত এই ডাল আর ডিম দিয়ে চলতেও যে অর্থের প্রয়োজন তাও পাচ্ছি না। শুনেছি সরকার ত্রাণ দিচ্ছে। কবে সেই ত্রাণ হাতে পাবো তা আল্লাহ জানে’।

এদিকে খুব শীঘ্রই বীচের অসহায় দোকানদার ও ব্যবসায়ীদের পাশে দাঁড়ানোর আশ্বাস দিয়েছেন। বীচ কমিউনিটি পুলিশ ও স্পিডবোট সার্ভিস সমিতির সাধারণ সম্পাদক মো. মুসা আলম। তিনি পূর্বকোণকে বলেন, আগামীকালের (আজ) মধ্যে বীচের ৩শ অসহায় ব্যবসায়ী ও স্পিডবোটের শ্রমিকদের মাঝে ত্রাণ পৌঁছে দেয়া হবে। যেখানে থাকবে ক্যামেরাম্যানরাও। বীচে স্পিডবোট ব্যবসায়ী মহিউদ্দিন, রহুল আমিন ও ৪১ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর প্রার্থী আলমগীরের সহযোগিতায় এ ত্রাণের ব্যবস্থা করা হয়েছে। পর্যায়ক্রমে আরো দুইশ বীচ সম্পর্কিত যারা রয়েছেন তাদের মাঝে রমজান উপলক্ষে ত্রাণ পৌঁছে দেওয়ার আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন তিনি।

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট