চট্টগ্রাম শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল, ২০২৪

সর্বশেষ:

১০ চিকিৎসকসহ চমেকের ল্যাবে ২৪ ঘণ্টায় ১০১ জন করোনা শনাক্ত

চট্টগ্রামে করোনাযুদ্ধে জয়ী হয়ে বাড়ি ফিরলেন ২০% রোগী

ইমাম হোসাইন রাজু

২৩ এপ্রিল, ২০২০ | ৬:৫৮ অপরাহ্ণ

  •  একদিনেই বাড়ি ফিরেছেন ৫ জন
  • অপেক্ষায় আছেন আরও একাধিক

একদিকে করোনা আক্রান্তের সংখ্যা বৃদ্ধি অন্যদিকে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যু। দু’টি সংবাদেই প্রতিদিন চট্টগ্রামের জন্য ছিল দুঃখের। কিন্তু এবার সুখের খবর হচ্ছে, নানান সীমাবদ্ধতা থাকা সত্বেও চট্টগ্রামে করোনাভাইরাসে মোট আক্রান্তের ২০ শতাংশ রোগীই চিকিৎসা শেষে সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরেছেন। এদেরমধ্যে শুধুমাত্র গতকাল বুধবারেই বাড়ি ফিরেছেন পাঁচজন। যারা সকলেই এতদিন চট্টগ্রাম আন্দরকিল্লাহ জেনারেল হাসপাতালের আইসোলেশনের চিকিৎসাধীন ছিলেন। এর আগে ফৌজদারহাট বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ট্রপিক্যাল এন্ড ইনফেকশাস ডিজিজেজ (বিআইটিআইডি) হাসপাতালের আইসোলেশন থেকেও আক্রান্ত আরও দুই রোগী বাড়ি ফিরেছেন। বর্তমানে তারা নিজ বাড়িতেই অবস্থান করছেন। শুধু সুস্থ হয়ে বাড়ি ফেরাই নয়। আরও সুখের খবরের কথা জানিয়ে চট্টগ্রাম স্বাস্থ্য বিভাগ বলছেন, আক্রান্তের অধিকাংশরাই বর্তমানে সুস্থ রয়েছেন। যারা কিছুদিনের মধ্যেই পুরোপুরি সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরতে পারবেন।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, গতকাল বুধবার বাড়ি ফেরাদের মধ্যে পাঁচজনেই চট্টগ্রাম জেনারেল হাসপাতালের করোনা আইসোলেশন ইউনিটে চিকিৎসাধীন ছিলেন। যাদের মধ্যে চট্টগ্রামে প্রথম করোনা আক্রান্ত হওয়া নগরীর দামপাড়া ২ নম্বর গলির বাসিন্দা ৬৭ বছর বয়সী বৃদ্ধের ছেলেও রয়েছেন। যিনি চট্টগ্রামের করোনা আক্রান্তদের মধ্যে দ্বিতীয় রোগী ছিলেন। এছাড়া পুরোপুরি সুস্থ হয়ে গতকাল বাড়ি ফেরাদের মধ্যে রয়েছেন নগরীর হালিশহর শাপলা আবাসিক এলাকার প্রথম করোনা শনাক্ত হওয়া নারী। রয়েছেন নারায়ণগঞ্জ থেকে ফেরত আসা সীতাকু- পৌরসভার গোডাউন গলির বাসিন্দা ব্যাংকার ব্যাংকার, নগরীর পাহাড়তলী সিডিএ মার্কেট এলাকায় বাসিন্দা এবং সাগরিকা এলাকায় বসবাসরত গার্টেক্স গার্মেন্টসের কর্মকর্তাও।

বিষয়টি নিশ্চিত করে চট্টগ্রাম জেনারেল হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডা. অসীম কুমার নাথ পূর্বকোণকে বলেন, ‘পরপর দুই বার কারও তিনবার করোনা পরীক্ষায় ফলাফল নেগেটিভ আসায়, চিকিৎসাধীন পাঁচজনকে ছাড়পত্র দেওয়া হয়েছে। তারা পুরোপুরিই সুস্থ আছেন। হাসপাতাল থেকে ছাড়পত্র দেওয়া হলেও সকলেই বাড়িতে আরও ১৪ দিন কোয়ারেন্টিনে থাকবেন। এরমধ্যে তাদের সকলের নমুনা আবারও পরীক্ষা করা হবে। একই সাথে তারা চিকিৎসকদের তত্ত্বাবধায়নে থাকবেন বলেও জানান তিনি।’

এদিকে, চট্টগ্রামে প্রথম করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হওয়া নগরীর দামপাড়ার বাসিন্দা ৬৭ বছর বয়সী ওই বৃদ্ধও সুস্থ হওয়ার পথে রয়েছেন বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্ট চিকিৎসকরা। শুধু প্রথম করোনা আক্রান্ত এই বৃদ্ধও নয়, চট্টগ্রামে করোনা আক্রান্ত প্রথম চিকিৎসকও সুস্থ রয়েছেন। যাদের গত মঙ্গলবার নমুনা সংগ্রহ করে পরীক্ষা করা হয়। এতে দুজনেরেই ফলাফল নেগেটিভ এসেছেন। এ দুইজন ছাড়াও এই দিন আরও তিনজনের পরীক্ষা করা হয়। তাদের নমুনার ফলাফলও নেগেটিভ আসেন বলে জানায় স্বাস্থ্য বিভাগ। তবে আক্রান্তদের মধ্যে যাদের প্রথমবার নমুনা পরীক্ষায় ফলাফল নেগেটিভ এসেছে, তাদের এই মুহূর্তে ছাড়া হবে না। বরং আরও কিছুদিন হাসপাতালে চিকিৎসা শেষে পূণরায় নমুনা পরীক্ষা করা হবে তাদের। এরপরেই তাদের বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়ার হবে বলে জানিয়েছেন চট্টগ্রাম সিভিল সার্জন ডা. সেখ ফজলে রাব্বি।

তিনি এ প্রসঙ্গে পূর্বকোণকে বলেন, ‘নিয়ম অনুযায়ী যাদের প্রথমবার ফলাফল নেগেটিভ আসে, তাদের আরও কিছুদিন চিকিৎসা শেষ করে নমুনা পরীক্ষা করা হয়। তাতেও যদি নেগেটিভ আসে, তাহলে ওই রোগীকে শঙ্কা মুক্ত হিসেবে চিহ্নিত করা হয়। তবুও কিছু বিষয়ে চিকিৎসকরা দেখভাল করে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। এরপরেই তাদের ছাড় দেওয়া হয়। ইতোমধ্যে চট্টগ্রামে করোনা আক্রান্ত হয়ে যারা আইসোলেশনে আছেন, তাদের মধ্যে মোট সাতজন বাড়ি ফিরেছেন। এ সাতজন ছাড়াও আরও অধিকাংশ রোগীই আছেন, যারা বর্তমানে সুস্থ রয়েছেন। আশা করছি তারাও কিছুদিনের মধ্যে পুরোপুরি সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরতে পারবেন।’

উল্লেখ: চট্টগ্রামে এখন পর্যন্ত করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হওয়াদের মধ্যে পাঁচজনের মৃত্যু হয়েছে। যাদের মধ্যে তিনজন করোনা শনাক্ত হওয়ার আগেই মৃত্যু বরণ করেন। আরেকজন শনাক্ত হওয়ার মাত্র কয়েকঘণ্টা পর মৃত্যু হয়। অন্যজন বিআইটিআইডি হাসপাতালে শনাক্তে ১২ ঘণ্টা পর মৃত্যু হয়।

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট