চট্টগ্রাম মঙ্গলবার, ২৩ এপ্রিল, ২০২৪

সর্বশেষ:

মধ্যবিত্তরাও টিসিবির দীর্ঘ লাইনে

পণ্য কিনতে ভিড়

মুহাম্মদ নাজিম উদ্দিন

২২ এপ্রিল, ২০২০ | ৮:২৬ অপরাহ্ণ

  • খুচরা বাজারের চেয়ে ছোলায় ১৫ টাকা চিনিতে ১৫ টাকা, সয়াবিন ২০ টাকা খেজুরে ৩০ টাকা ও ডালে ৪০ টাকা সাশ্রয়

করোনাভাইরাসের প্রভাবে নিত্যপণ্যের দাম বেড়ে যাওয়ার কারণে চাহিদা বেড়েছে ট্রেডিং কর্পোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) বিক্রয়কেন্দ্রে। শুধু নিম্নবিত্ত নয়, মধ্য-উচ্চমধ্যবিত্ত শ্রেণির লোকজনও এখন খরচ বাঁচাতে ভর্তুকিমূল্যে পণ্য কিনতে ভিড় করছেন। শত শত মানুষ চক্ষু লজ্জা ভেঙে দাঁড়িয়েছেন দীর্ঘ লাইনে। কিনছেন কমদামে টিসিবির পণ্য। মানুষের ভিড়ে অনেক বিক্রয়কেন্দ্রে সামাজিক দূরত্ববিধি মানা হচ্ছে না।

টিসিবি’র পণ্যের চাহিদা বেড়ে যাওয়ার কারণে বাড়ানো হয়েছে ট্রাকের সংখ্যাও। ১৭ মার্চ মুজিব জন্মশতবার্ষিকী উপলক্ষে টিসিবি’র পণ্য বিক্রয় শুরু হয়েছে। ১৫-১৬টি স্থানে পণ্য বিক্রি দিয়ে শুরু করলেও বর্তমানে ২৬-২৮ জন ডিলার পণ্য বিক্রয় করছে। দৈনিক ৪২-৪৩টি স্থানে পণ্য বিক্রয় করা হচ্ছে বলে জানায় টিসিবি।

টিসিবি’র চট্টগ্রামের প্রধান মো. জামাল উদ্দিন পূর্বকোণকে বলেন, প্রতি ট্রাকে দিনে এক হাজার কেজি চিনি, এক হাজার কেজি সয়াবিন তেল, ৫শ’ কেজি ছোলা, ৫০ কেজি খেজুর ও দুশ’ কেজি করে ডাল বিক্রি করা হচ্ছে। করোনা সংকটের কারণে টিসিবি’র ডিলার ও ট্রাকের সংখ্যা এবং পণ্যের পরিমাণ বাড়ানো হয়েছে।

তিনি আরও বলেন, আগামী ২০ মে পর্যন্ত টিসিবি’র পণ্য বিক্রয় করা হবে। এজন্য পর্যাপ্ত পরিমাণ পণ্য মজুত রয়েছে। তবে সামাজিক ও শারীরিক দূরত্ব বজায় রেখে সুশৃঙ্খলভাবে পণ্য ক্রয় করার জন্য ভোক্তাদের প্রতি অনুরোধ করেছেন তিনি।
দেখা যায়, টিসিবি’র ভ্রাম্যমাণ ট্রাকে প্রতিকেজি চিনি বিক্রি করা হচ্ছে ৫০ টাকা, সয়াবিন ৮০ টাকা, ছোলা ৬০ টাকা, খেজুর ১২০ টাকা, ডাল ৫০ টাকা। কিন্তু খুচরা বাজারে চিনি বিক্রি করা হচ্ছে কেজি প্রতি ৬৫ টাকা, বোতলজাত সয়াবিন একশ টাকার বেশি, ছোলা ৭৫ টাকা, খেজুর ১৫০ টাকা, মসুর ডাল ৯০ টাকা। খুচরা বাজারের হিসাবে কেজিতে চিনিতে ১৫ টাকা, সয়াবিন তেলে ২০ টাকা, খেজুরে ৩০ টাকা ও ডালে অন্তত ৪০ টাকা তফাৎ রয়েছে। সংসারের খরচ সাশ্রয়ে টিসিবি’র পণ্য কেনায় প্রতিদিনই ভিড় বাড়ছে।

কয়েকটি কেন্দ্র ঘুরে দেখা যায়, গতকাল বৃষ্টির মধ্যে ভিজে লাইনে দাঁড়িয়ে রয়েছে পণ্য কেনার জন্য। পূর্বকোণ কার্যালয় সংলগ্ন কেন্দ্রে সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখতে রাস্তায় রিকশা টায়ার বসানো ছিল। তবে কয়েকটি কেন্দ্রে সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখার তাগিদ থাকলে মানুষের ভিড়ে তা বজায় রাখা হয়নি।
টিসিবি’র ডিলার তাপস চৌধুরী বলেন, বর্তমানে টিসিবি পণ্যের ব্যাপক চাহিদা রয়েছে। লাইনে মানুষের প্রচুর চাপ ও ভিড় থাকে। তা সামাল দিতে আমাদের অনেক সময় হিমশিম খেতে হয়।

বৃহত্তর চট্টগ্রাম টিসিবি ডিলার সমিতির সাধারণ সম্পাদক তাপস চৌধুরী আরও বলেন, প্রতিটি পণ্যের ভালো চাহিদা রয়েছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, বোতলজাত সয়াবিনের চাহিদা সবচেয়ে বেশি। সকাল ৯টায় পণ্য বিক্রি শুরু করলে ২টায় বিক্রি শেষ হয়ে যায়। প্রতিটি পণ্যের দ্বিগুন চাহিদা রয়েছে।
সার্কিট হাউস এলাকার ডিলার খোকন চৌধুরী বলেন, আগে টিসিবি’র পণ্যের ক্রেতাদের মধ্যে বড় অংশ ছিল নি¤œ আয়ের লোকজন। এখন মধ্য-উচ্চ মধ্য বিত্ত শ্রেণির লোকজনও টিসিবি’র পণ্য কেনার জন্য লাইন ধরছে। এমনকি মাঝে মাঝে চেনাজানা উচ্চবিত্ত শ্রেণির লোকজনও কেনার জন্য লাইনে দেখা যায়। দ্বিগুন চাহিদা রয়েছে উল্লেখ করে তিনিও বলেন, চার ঘণ্টার মধ্যে পণ্য বিক্রি শেষ হয়ে যায়। তারপরও লাইনে প্রচুর লোক দাঁড়ানো থাকে। বুঝিয়ে-সুঝিয়ে বিধায় করতে হয় তাদের।

টিসিবি সূত্র জানায়, নগরীর জামাল খান প্রেসক্লাব, বহদ্দারহাট, হালিশহর থানা সংলগ্ন, স্টিলমিল বাজার, জিইসি মোড়, পতেঙ্গা থানা সংলগ্ন, আগ্রাবাদ সিজিএস ভবন, ফিশারিঘাট, শাহ আমানত সেতু এলাকা, সিএন্ডবি, কাপ্তাই রাস্তার মাথা, কালুরঘাট মোহরা, আতুরার ডিপো, বিবিরহাট, মাঝিরঘাট, সদরঘাট, কোতোয়ালী মোড়, জেলা প্রশাসন ভবন সংলগ্ন, দামপাড়া পুলিশ লাইন, ২নং গেট, বায়েজিদ বালুচড়া, বন্দর-কাস্টমস সংলগ্ন, বিজয়নগর, পোর্ট কলোনি এলাকা, আকবরশাহ, অক্সিজেন মোড়, সার্কিট হাউস, পাঁচলাইশ থানা এলাকায় টিসিবি’র পণ্য বিক্রয় করা হচ্ছে।

টিসিবি কার্যালয়ের নজরুল ইসলাম খান জানান, মুজিব জন্মশতবর্ষ উপলক্ষে ১৫-১৬ জন ডিলার দিয়ে শুরু করেছিলাম। এখন ২৬-২৮ জন ডিলার প্রতিদিন পণ্য বিক্রি করছে। বিশেষ বিশেষ ক্ষেত্রে একজন ডিলারকে একাধিক স্থানে পণ্য বিক্রি করতে হয়।
সামাজিক দূরত্ব না মানার বিষয়ে জানতে চাইলে টিসিবির নজরুল ইসলাম খান বলেন, আমরা সামাজিক দূরত্ব মানার কথা বলে দিয়েছি। অনেক সময় আমরাই বিষয়টা নিশ্চিত করতে কাজ করছি। তবে অনেক সময় সাধারণ মানুষ তা মানছে না। আমরা কাজ করে যাচ্ছি। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীও আমাদের সহায়তা করছে। এবং ডিলাররাও কাজ করে যাচ্ছে। তবে মানুষ আগের তুলনায় অনেক সচেতন হয়েছে। সামাজিক দূরত্ব মেনে চলছে।

২নং গেট এলাকায় রবিউল হোসেন নামের এক ট্যাক্সিচালক বলেন, আয়-রোজগার নেই বললেই চলে। ট্যাক্সি বন্ধ থাকায় মাঝে-মধ্যে রিকশা চালাই। রিকশার আয় দিয়ে সংসার চালাতে পারছি না। ঘরভাড়া, সংসার খরচ ও নিত্যপণ্য কিনতে গিয়ে হিমশিম খাচ্ছি। এখানে বাজারমূল্যের চেয়ে অনেক কমে পণ্য কেনা যাচ্ছে। তাই লাইন ধরে কষ্ট করে পণ্য কেনার জন্য আসছি।

কালুরঘাট মোহরা এলাকায় পণ্য কিনতে আসা আয়শা খাতুন বলেন, ‘আমার স্বামী কালুরঘাট থেকে নিউমার্কেট রুটের মিনি বাস চালক। পরিবহন বন্ধ হয়ে যাওয়ার পর থেকে অনেকটা বেকার। বাসায় বসা। কাজ নেই। তাই টাকা-পয়সাও নেই। তাই টিসিবি’র বিক্রয়কেন্দ্রে এসে কম মূল্যে সয়াবিন তেল, মসুর ডাল ও চিনি কিনে নিয়ে যাচ্ছি।’ টিসিবি থেকে পণ্য কিনলে অনেক টাকা সাশ্রয় হয় বলে জানান তিনি। টিসিবি সূত্র জানায়, কয়েক বছরের তুলনায় টিসিবি এবার বেশি পণ্য নিয়ে মাঠে আছে। ডিলাররা পর্যাপ্ত পণ্য দিয়ে নগরীর বিভিন্ন স্থানে যাচ্ছে। পণ্যের কোনো সংকট নেই। সর্বস্তরের মানুষ পণ্য কিনতে পারবেন।

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট