চট্টগ্রাম বৃহষ্পতিবার, ২৫ এপ্রিল, ২০২৪

সর্বশেষ:

পেঁয়াজ আদা রসুনের দাম দ্বিগুণ

সরবরাহ সংকটের অজুহাতে বাড়ানো হচ্ছে পণ্যের দাম

বরাবরের ন্যায় এবারও কথা রাখেননি ব্যবসায়ীরা। ভোগ্যপণের দাম বেড়েছে রোজা শুরুর আগেই

মুহাম্মদ নাজিম উদ্দিন

১৯ এপ্রিল, ২০২০ | ২:৪৯ পূর্বাহ্ণ

  • ‘ভোগ্যপণ্য খালাস প্রক্রিয়ায় সরকার বিশেষ ব্যবস্থা নিলে দাম বাড়ানোর সুযোগ থাকবে না’।

রমজান মাস এলেই বাড়ে নিত্যপণ্যের দাম। এবারও তার ব্যতিক্রম হয়নি। বরঞ্চ যোগ হয়েছে করোনোভাইরাস। এবারতো ব্যবসায়ীদের সোনায় সোহাগা। বাড়তি চাহিদা আর সরবরাহ সংকটের অজুহাতে বাড়ানো হচ্ছে ভোগ্যপণ্যের দাম। কয়েকটি পণ্যের দাম দ্বিগুণ পর্যন্ত বেড়েছে।
রমজান মাসে ইফতারের প্রধান অনুষঙ্গ চিনি, পেঁয়াজ, আদা, রসুন, ছোলা, চিড়া, তেলসহ নিত্যপণ্যের চাহিদা বাড়ে। চাহিদা বৃদ্ধির এ সুযোগ নেন ব্যবসায়ীরা। ফলে বরাবরই সংযমের মাস রমজান আসার আগেই বেড়ে যায় অধিকাংশ ভোগ্যপণ্যের দাম। পেঁয়াজ, আদা, রসুনের দাম দ্বিগুণ বেড়েছে। চাল ও ডালজাতীয় পণ্যের দামও বেশি বেড়েছে। অথচ এসব পণ্যের মজুদেই ঘাটতি নেই। এছাড়া আন্তর্জাতিক বাজারে এসব পণ্যের দামও পড়তি। তারপরও বরাবরের মতো বাড়ছে দাম। কয়েক বছর ধরে রমজান আসার আগে ভোগ্যপণ্যের দাম বাড়ানোর প্রবণতা চলে আসছে বলে জানান খুচরা ব্যবসায়ীরা। খাতুনগঞ্জ পাইকারি বাজারে গতকাল মিয়ানমার থেকে আদমানি করা পেঁয়াজ বিক্রি হয়েছে ৬০ টাকা দরে। ভারতীয় পেঁয়াজ বিক্রি হয়েছে ৬৫ টাকায়। দেশি ও হল্যান্ডের পেঁয়াজ বিক্রি হয়েছে মানভেদে ৪৫-৫০ টাকা। ১৫ দিন আগে তা ৩০ টাকায় বিক্রি হয়েছিল। আদার দাম বেড়েছে দ্বিগুণ। গতকাল আদা বিক্রি হয়েছে ২৪০-২৫০ টাকা। আগে তা ১২০-১৩০ টাকায় বিক্রি হয়েছিল। রসুন ১০৫ টাকা থেকে বেড়ে বিক্রি হচ্ছে ১৪০ টাকা। খাতুনগঞ্জের আড়তদার মো. জাবেদ ইকবাল বলেন, করোনা সংকটের পর ভারত ও মিয়ানমার থেকে পেঁয়াজ আমদানি বন্ধ রয়েছে। রোজা ও করোনায় ত্রাণ বিতরণে চাহিদা বেড়েছে। সংকটের মধ্যে চাহিদা বেড়ে যাওয়ার কারণে এসব পণ্যের দাম বেশি বেড়েছে।
প্রতিবছর রোজা আসলে সরকারের পক্ষ থেকে বলা হয়, রজমানে ভোগ্যপণ্যের দাম বাড়বে না। সরবরাহ স্বাভাবিক থাকবে। ব্যবসায়ীরাও সরকারের সঙ্গে বৈঠকে পণ্যের দাম না বাড়ানোর আশ^াস দিয়ে থাকেন। এবারও তার ব্যত্যয় ঘটেনি। বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে বৈঠকে দাম বাড়ানো হবে না বলে সরকারকে প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন ব্যবসায়ী নেতারা। বরাবরের ন্যায় এবারও কথা রাখেননি ব্যবসায়ীরা। সব ধরনের ভোগ্যপণের দাম বেড়েছে রোজা শুরুর আগেই।
চাক্তাই-খাতুনগঞ্জ আড়তদার ও সাধারণ ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি আলহাজ মো. জাহাঙ্গীর আলম পূর্বকোণকে বলেন, রমজানের ভোগ্যপণ্যের কোনো সংকট নেই। এখনো পর্যাপ্ত সরবরাহ ও মজুত রয়েছে। তবে করোনাভাইরাস সংকটের কারণে বন্দর ও ডিপোতে আমদানি করা প্রচুর পণ্য আটকে রয়েছে। ব্যাংক, কাস্টমস, শিপিং এজেন্টের জটিলতা ও পরিবহন-শ্রমিক সংকটের কারণে সরবরাহ চেইনে কিছুটা বিঘœ সৃষ্টি হচ্ছে। ভোগ্যপণ্য খালাস প্রক্রিয়ায় সরকার বিশেষ ব্যবস্থা নিলে পণ্যের দাম বাড়ানোর সুযোগ থাকবে না। কারণ বিশ^মন্দায় অনেক পণ্যের দাম বিশ^বাজারে নতুন করে বাড়েনি, বরং কমেছে।
তিনি আরও জানান, সিন্ডিকেট করে দাম বাড়ানোর সুযোগ নেই। বাজারে সবার মধ্যে প্রতিযোগিতা রয়েছে। তাই পবিত্র রমজান মাসের আগে পণ্যের অবৈধ মজুদ ও দাম বৃদ্ধির সুযোগও নেই।
রমজানের প্রধান অনুষঙ্গ চিনি বিক্রি হচ্ছে ৫৮ টাকা দরে। ১৫ দিন আগে তা বিক্রি হয়েছিল ৫২ টাকায়। ৭০-৮০ টাকার খেজুর বিক্রি হচ্ছে একশ টাকার বেশি। ভালোমানের খেজুর বিক্রি হচ্ছে ১৬০ টাকা দরে। খেজুরের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বেড়েছে কিসমিসের দামও। প্রতিকেজিতে ২৩০ টাকা থেকে বেড়ে বিক্রি হচ্ছে ২৮০ টাকায়। কিসমিস আমদানি হয় আফগানিস্তান ও পাকিস্তান থেকে। রমজানে এসব পণ্যের চাহিদা বেশি থাকায় আন্তর্জাতিক বাজারে দাম বেড়ে যায় বলে দাবি ব্যবসায়ীদের।
খাতুনঞ্জের ট্রেডিং ব্যবসায়ী মেসার্স আমানত ট্রেডাসের মালিক হাজি আমান উল্লাহ বলেন, গত এক সপ্তাহ ধরে মিলগুলো থেকে যথাসময়ে চিনি সরবরাহ করা হচ্ছে না। চিনি আনার জন্য ট্রাক গেলে মিল গেটে দাঁড়িয়ে থাকতে হচ্ছে কয়েক দিন। প্রতি রোজায় ডিও অনুযায়ী চিনি দিতে টালবাহানা করা হয়। এতে পরিবহন খরচও কয়েকগুণ বেড়ে যাওয়ার কারণে চিনির দাম বেড়ে গেছে।
চিড়ার দামও বেড়েছে প্রায় দ্বিগুণ। কেজিপ্রতি ২৮ টাকা থেকে বেড়ে বিক্রি হচ্ছে ৫৩ টাকা দরে। সেমাই প্রতিটুকরিতে (৩৫ কেজি) বেড়েছে দুইশ টাকা। কেজিতে বেড়েছে ৫ টাকা।
সকল ধরনের ডালের দাম অতিরিক্ত বেড়েছে। কেজিপ্রতি ৩০ টাকা পর্যন্ত বেড়েছে। মূলত করোনাভাইরাসে অসহায়-কর্মহীন মানুষের মধ্যে খাদ্য সহায়তায় ডালের ব্যবহার বেড়েছে। অতিরিক্ত চাহিদা থাকায় ডালের দাম বেশি বেড়েছে। ৬০-৭০ টাকা দামের খেসারি এখন বিক্রি হচ্ছে ৯০-৯২ টাকায়। মোটা মসুর ৫২-৫৫ টাকা থেকে বেড়ে বিক্রি হচ্ছে ৮০ টাকা দরে। চিকন দানার মসুর বিক্রি হচ্ছে ১২০ টাকা। আগে বিক্রি হয়েছিল ৯০ টাকা। মাঝারিমানের মসুর ৬০ টাকা থেকে বেড়ে বিক্রি হচ্ছে ৯০ টাকা দরে। ৩০-৩২ টাকার মটর ডাল বিক্রি হচ্ছে ৪০ টাকায়।
চাহিদা বেড়ে যাওয়ায় দাম বেড়েছে সব ধরনের মসলারও। জিরার দাম ২৭০ টাকা থেকে বেড়ে বিক্রি হচ্ছে ৪শ টাকা। জিরা আমদানি হয় ভারত ও সিরিয়া থেকে। করোনাভাইরাসের পর ভারত থেকে আমদানি বন্ধ থাকায় জিরার দাম বেড়েছে।
ব্যবসায়ীরা জানান, রমজানে যেসব পণ্যের চাহিদা বাড়ে সেগুলোর মজুদ বাড়তি রয়েছে। তারপরও প্রতিবছরের ন্যায় এবারও দাম বাড়ানো হয়েছে। এ জন্য খুচরা বিক্রেতারা দায়ী করছেন পাইকারদের। আর পাইকারি বিক্রেতারা দায়ী করছেন আমদানিকারক কিংবা ট্রেডিং ব্যবসায়ীদের। এভাবে বিভিন্ন পর্যায়ে দাম বাড়তে থাকায় ভোক্তাদের দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে।
২নং গেট ষোলশহর কাঁচার বাজার ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি আলহাজ এয়াকুব চৌধুরী বলেন, ভ্যোপণ্যের দাম আমরা বাড়াইনি। এটি পাইকারি বাজারে বেড়েছে। বেশি দামে কিনতে হয় বলে বেশি দামে বিক্রি করতে হচ্ছে। মানুষের চাহিদার সুযোগে পাইকারি বাজারে সব ধরনের পণ্যের দাম দিন দিন বাড়ছে। এছাড়া ক্রেতারা অতিরিক্ত পরিমাণ পণ্য কেনায় বাজারে চাপ বেড়েছে।
সরকারি কর্মজীবী মো. কামাল হোসেন বলেন, রমজান শুরু হলেই দেশে পণ্যের দাম বাড়ে, এটি নতুন নয়। বিভিন্ন দেশে বিভিন্ন উৎসবে পণ্যের দাম কমে। আমাদের দেশে বাজার দরে উল্টো চিত্র।

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট