চট্টগ্রাম মঙ্গলবার, ২৩ এপ্রিল, ২০২৪

সর্বশেষ:

বিদ্যুৎ বিভ্রাটের কারণে ঘরে বসে থাকা যাচ্ছে না অভিযোগ নগরবাসীর

মিল কারখানা বন্ধ সত্ত্বেও বিদ্যুতের ‘ভেল্কিবাজি’

মেরামত করতে লাইন বন্ধ­ রাখা হয়, সত্য নয় লোডশেডিংয়ের অভিযোগ : বিদ্যুৎ বিভাগ

আল-আমিন সিকদার

১৯ এপ্রিল, ২০২০ | ২:৫৫ পূর্বাহ্ণ

করোনাভাইরাস। শব্দটি এখন পুরো বিশ্বের কাছে আতঙ্ক। লক্ষাধিক মানুষের প্রাণ কেড়ে নেওয়া এই ভাইরাসটিতে আক্রান্ত বাংলাদেশও। ছোঁয়াছে এ রোগটির মানব দেহে সংক্রমণ ঠেকাতে সাধারণ ছুটি ঘোষণা দিয়েছে সরকার। ঘোষণার পর থেকেই বন্ধ রাখা হয়েছে মিল-কারখানা থেকে শুরু করে অফিস আদালত। হোম কোয়ারেন্টিন এবং সামাজিক দূরত্ব নিশ্চিত করতে এ ছুটি ঘোষণা করায় ঘরেই সময় পাড় করছেন সাধারণ মানুষ। কিন্তু বিদ্যুৎ বিভ্রাটের কারণে এখন ঘরে বসে থাকতে পারছে না সাধারণ মানুষ। এমনটাই অভিযোগ নগরবাসীর। গত কয়েকদিন ধরে নগরীর বিভিন্ন জায়গায় ঘটেছে লোডশেডিং। তবে সাধারণ মানুষের করা এ লোডশেডিংয়ের অভিযোগ সত্য নয় বলে জানিয়েছে বিদ্যুৎ বিভাগ।
জানা যায়, গতকাল (শনিবার) নগরীর খুলশী আবাসিক ইপিজেড এলাকার নেভি হল রোডে বিকাল ৩টা থেকে ৪টার মধ্যে দুইবার বিদ্যুৎ সংযোগ চলে যায়। এছাড়া রামপুর, মোহরা, আন্দরকিল্লা ও বায়েজিদ এলাকাসহ নগরীর বেশ কয়েকটি স্থানে ঘটেছে লোডশেডিং। শুধু তাই নয়, গত ১৬ এপ্রিল বৃহস্পতিবারও ঘণ্টার পর ঘণ্টা বিদ্যুৎ ছিল না ইপিজেড এলাকাতে। এদিকে তাপমাত্রা বৃদ্ধির কারণে গরমে অতিষ্ঠ হয়ে উঠা জনসাধারণ বিদ্যুত না থাকায় ঘর ছেড়ে বাইরে বের হয়ে আসছে। যা মহামারী রোগ করোনা সংক্রমণে ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে উঠছে।
খালি গায়ে রাস্তায় ঘুরতে থাকা সোহেল নামে এক যুবকের সাথে কথা হয় প্রতিবেদকের। হোম কোয়ারেন্টিন না মেনে বাইরে ঘোরাফেরা করার কারণ জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘ঘরে বসে টিভিতে মুভি দেখছিলাম। চ্যানেল আই-তে ‘৯ নম্বর বিপদ সংকেত’ নামে একটি টেলিফিল্ম চলছিল। কিন্তু এ মুভি দেখার মাঝে দু’বার বিদ্যুৎ চলে যায়। আবহাওয়ার তাপমাত্রা বেশি থাকার কারণে অনেক গরম পড়ছে। তাই গরমে ঘরে বেশিক্ষণ বসে থাকতে পারিনি। বাচ্চাকে নিয়ে বাইরে বের হয়েছি একটু ঠা-া বাতাস গায়ে লাগানোর জন্য। জানি ঝুঁকি আছে কিন্তু কিছু করার নেই। গরমে ঘরে থাকা যাচ্ছে না’।
তিনি আরও বলেন, ‘কত গয়েক দিন ধরে বিদ্যুৎ এর লোডশেডিং হচ্ছে। দুইদিন আগে প্রায় ১০ ঘণ্টা বিদ্যুৎ ছিল না পুরো এলাকায়। মানুষ রাতে সহ্য করতে পারলেও দুপরের গরম সহ্য করতে পারেনি। সকাল থেকে তাই ঘর ছেড়ে বাইরে বের হয়েছিল বহু মানুষ। করোনাভাইরাসের মত এমন ক্রান্তিকালে মানুষ বাসায় রাখতে অবশ্যই নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সেবা প্রদান করতে হবে। অন্যথায় গরমে হাপিত্যেশ করা মানুষগুলো বাইরে গিয়ে করোনা ঝুঁকিতে ফেলে দিবে পুরো চট্টগ্রামকে’।
প্রথম থেকেই বিভিন্ন পত্র-পত্রিকার শিরোনামে উঠতে দেখা গেছে মানুষের করোনাভাইরাস রোগটিকে নিয়ে উদাসীনতার বিষয়টি। বিভিন্ন অলিগলিতে দেখা গেছে সরকারের নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে জনসাধারণের অবাদে চলাচলের দৃশ্য। সেনা-প্রশাসনের একাধিক অভিযান ও জরিমানাতেও পাল্টায়নি এ দৃশ্য। গতকালও একই অবস্থা ছিল নগরীর ইপিজেড এলাকার নেভি হল রোডটিতে। বন্ধু-বান্ধব নিয়ে খোশগল্পে মেতে থাকা একটি তরুণ দলের সাথে কথা হয় প্রতিবেদকের। তারাও বিদ্যুৎ চলে যাওয়ায় বাইরে বের হয়েছেন বলে জানান। আড্ডারত তরুণ মামুন বলেন, ‘বিদ্যুৎ আমাদের সাথে লুকোচুরি করছে। এই আসছে তো এই যাচ্ছে। আজ (শনিবার) একদিনে এক ঘণ্টার মধ্যে দুইবার কারেন্ট গেছে। তাই বাইরে বের হয়েছি। এখানে যাদের দেখছেন সবাই একই কারণে বের হয়েছে। বিদ্যুৎ থাকলে সবাই ঘরে বসে অনলাইনে গেমস খেলি। না হয় মুভি দেখি। বিদ্যুৎ ছাড়া ওয়াই-ফাই লাইন চলে না। এছাড়া গরমে ঘরে বসে থাকাও সম্ভব না। তাই বাইরে বের হয়ে আড্ডা দিচ্ছি। তাও পুলিশকে লুকিয়ে। কি আর করা, এখন ঘরেও থাকা যাচ্ছে না, বাইরে তো পুরাই রিস্ক’।
এদিকে জনসাধারণের ঘণ্টার পর ঘণ্টা লোডশেডিং-এর অভিযোগ সত্য নয় বলে জানিয়েছেন বিদ্যুৎ বিভাগের চট্টগ্রাম দক্ষিণাঞ্চলের প্রধান প্রকৌশলী শাহ আলম। তিনি পূর্বকোণকে বলেন, ‘ যেসব এলাকার নাম বলেছেন সেখানে ৩৩ কেভির লাইনে সমস্যা সৃষ্টির পাশাপাশি আবহাওয়াজনিত কারণে ত্রুটি দেখা দিয়েছিলো। সেগুলো মেরামত করতে লাইন বন্ধ রাখা হয়েছিল। এছাড়া আন্দরকিল্লার যে ঘটনাটি বলেছেন সেখানে জেনারেল হাসপাতালে করোনা ইউনিট করার কাজ চলছে। ওই ইউনিটে বিদ্যুৎ সেবা পৌঁছে দিতে কাজ চলছিল। তাই হয়ত কিছু সময় বিদ্যুৎ বন্ধ রাখা হয়েছিল। এছাড়া বিদ্যুৎ ঘাটতিতে কোথাও বিদ্যুৎ বন্ধ করা হয়নি। কারণ, নগরীতে প্রতি সন্ধ্যায় যে ৭০০ মেগাওয়াট বিদ্যুতের চাহিদা রয়েছে তার বেশি উৎপাদন আমাদের হচ্ছে। এছাড়া মিল-কারখানা বন্ধ থাকায় এবার গরমে লোডশেডিং হওয়ার কোনো আশংকাও নেই। গত কয়েকদিন যে ঘটনাগুলো ঘটেছে তা কেবল মেরামত ও আবহাওয়ার কারণে সৃষ্ট ত্রুটি সমাধানের জন্য হয়েছে’।

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট