চট্টগ্রাম শনিবার, ২০ এপ্রিল, ২০২৪

সর্বশেষ:

করোনায় গৃহবন্দী

ছাদ বাগানে সময় পার করছেন অনেকে

ইফতেখারুল ইসলাম

১৯ এপ্রিল, ২০২০ | ২:৫৬ পূর্বাহ্ণ

সারা পৃথিবী করোনভাইরাস মহামারীর সঙ্গে লড়াই করছে, অনেক মানুষ যখন চাকরি হারিয়েছে, সমস্ত ব্যবসা-বাণিজ্য, রেস্তোরাঁ, সিনেমাহল এবং পার্কগুলি করোনাভাইরাসের কারণে বন্ধ রযেছে। এসময় এমন কিছু জিনিস রয়েছে যা বাড়িতে বসেও করা যাচ্ছে। অনেকেই সেদিকে মনোনিবেশ করেছেন। সেটি হল ছাদ বাগান। শহরের মানুষ এখন যাদের সুযোগ আছে তারা ঘরের ছাদে বাগান করতেই ব্যস্ত। আগে থেকেই যারা বাগান করেছে তারা এখন তা ভালভাবে পরিচর্যা করছেন। নার্সারিগুলোও মৌসুমী শাক-সবজির চারা বিক্রি করছে। কেউ কেউ বাড়ির ছাদে বীজ থেকে চারা তৈরি করে রোপন করছে। কেউ কেউ ছাদে বাগান করে সময় কাটিয়ে মানসিক প্রশান্তি পাচ্ছেন। অপরদিকে খেতে পাচ্ছেন বিষমুক্ত তাজা শাক-সবজি এবং ফল।
নগরীর শুলকবহরস্থ এশিয়ান হাউজিং সোসাইটির বাসিন্দা আন্তর্জাতিক ইসলামি বিশ্ববিদ্যালয় চট্টগ্রামের ইংরেজি (সম্মান) বিভাগের ছাত্রী ফাতেমা জান্নাত তাহিন পূর্বকোণকে জানান, এখন বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ। তাই বাড়িতে মায়ের কাজে সাহায্য করার পাশাপাশি ছাদ বাগানে সময় দিচ্ছেন। তাদের ছাদে আগে থেকেই বাগান ছিল উল্লেখ করে বলেন, ছাদে এখন টমেটো এবং বেগুন আছে। ছাদ বাগান থেকে কয়েকটি পাকা টমেটো থেকে বীজ নিয়ে আবারো টমেটোর চারা তৈরি করছেন। নতুন করে আবার টমেটোর চারা লাগাবেন। কারণ আগের লাগানো টমেটোগাছগুলো আর বেশিদিন থাকবে না।
একই এলাকার আরেক বাসিন্দা গৃহবধূ সালমা আকতার নীলা পূর্বকোণকে জানান, তাদের ছাদে আম, ড্রাগন, লেবু, বেলেম্বু, বিদেশি খেজুর গাছসহ বিভিন্ন ধরনের ফলের গাছ রয়েছে। এখন হাতে অঢেল সময় তাই বাগানের পরিচর্যা করছেন। আসন্ন বর্ষায় বেশ ভাল ড্রাগন ফল পাবেন বলে আশা প্রকাশ করে বলেন, আমও বেশ ভাল ধরেছে। আম বড় হতে শুরু করেছে। কোন আমের গুটি যাতে ঝরে না যায় তাই সকাল-বিকাল ছাদে যান। দেখেন কোন গাছের কি সমস্যা। প্রয়োজনীয় পরিচর্যা করছেন। ঝড় -তুফান না হলে আমের ভাল ফলন পাবেন বলে তিনি আশা প্রকাশ করেন।
তবে সংশ্লিষ্ট বিশেষজ্ঞরা মনে করেন অনেক সময় মানুষের সৃষ্ট বিপর্যয় প্রাকৃতিক দুর্যোগের চেয়ে আরও বেশি ভয়াবহ হয়। সামাজিক অজ্ঞতা, অসাবধানতা, অনুপযুক্ত কৌশল এবং সঠিক কারিগরি দক্ষতার অভাবে গত কয়েক দশকে বেশ কিছু জাতীয় দুর্যোগ ঘটেছে, যা যথাযথ সঠিক ব্যবস্থার মাধ্যমে প্রতিরোধ করা যেত। ছাদ থেকে পানি নিষ্কাশন পথ বন্ধ হয়ে গিয়ে বৃষ্টির পানি ছাদে জমার কারণে ১৯৮৫ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের জগন্নাথ হলের টিভিকক্ষের ছাদ ধসের ঘটনায় ৩৯ জনকে প্রাণহানি ঘটেছিল। অপর্যাপ্ত নিরাপত্তার কারণে ২০১২ সালে তাজরীন ফ্যাশন গার্মেন্টসে ভয়াবহ অগ্নিকা-ে প্রায় ১১৭ জনের প্রাণহানি ঘটে। ২০১৩ সালে অনুপযুক্ত নকশা ও নির্মাণকৌশলের ফলে রানা প্লাজা ধসে গিয়ে ১ হাজার ১৩৪ জনের প্রাণহানির মতো মর্মান্তিক ঘটনা ঘটে।
সময়োপযোগী সতর্কবাণী, সঠিক ও অভিজ্ঞ কারিগরি দক্ষতায় ভবন নির্মাণ এবং যথোপযোগী ব্যবহার দালান কাঠামোতে দুর্ঘটনা রোধ হতে পারে। বাগান করার আগে একটি বিষয় খুব ভালভাবে গুরুত্বেও সাথে বিবেচনা করতে হবে যে, ছাদের কাঠামোগত দুর্বলতা, ভবনের কাঠামো, বাড়তি ভার গ্রহণের জন্য ভিত্তিপ্রস্তরের ধারণক্ষমতা, চাষের স্থান থেকে রাস্তায় বর্জ্য ও জমে থাকা বৃষ্টির পানি নিষ্কাশন পদ্ধতি, চাষাবাদের জন্য ওয়াসা থেকে ব্যবহৃত পানি ইত্যাদি। ছাদকৃষির নেতিবাচক এবং ক্ষতিকারক প্রভাব বিস্তারের আগেই যদি এগুলো বিবেচনা না করা হয় তবে এটার কারণে ভবনধস, সম্পত্তির ক্ষতিসহ সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ মানবজীবন নাশ হতে পারে। কারণ ছাদকৃষির কারণে ছাদে যেসব বাড়তি ভার সংযোজন করা হয়, যেমন চাষের মাটি, কম্পোস্ট, গাছ, ঝোপ, ফুল, সবজির বেড, ফলের গাছ এবং বাগানের সবজি, ফল ইত্যাদির জন্য তৈরি অস্থায়ী কাঠ, বাঁশ ও ইস্পাত কাঠামো থেকে, যেগুলো এসব ভবনে স্থাপিত করা হয়। এছাড়া বাগানের জন্য কংক্রিটের বক্স, জালের জন্য অস্থায়ী স্থাপনা, সবজি চাষের জন্য পোস্ট ও ফ্রেমের স্থাপন এবং মাছের চাষ ও হাঁস-মুরগি পালনের জন্য অন্যান্য স্থাপনাও সংযোজন করা হয়। যখন অতিরিক্ত ভার একটি ভবনে স্থাপন করা হয়, যা ভবনের নকশায় ছিল না, তখন ভবনটির ভার ধারণ ক্ষমতার চাইতে বেশি হতে পারে, যার কারণে দুর্ঘটনা ঘটতে পারে। এটির কারণে ছাদ ধস, ভবনের স্থাপনা এবং ফাউন্ডেশন ধস নামতে পারে। এর কারণে ভবনের সামগ্রিক কাঠামোতে ধসের ফলে ভবনটি ব্যবহারের অনুপযোগী হয়ে পড়তে পারে। পাশাপাশি প্রতিবেশী ভবনগুলোও গুরুতর হুমকির মুখে পড়তে পারে।
তাছাড়া বাংলাদেশ একটি গ্রীষ্মপ্রধান দেশ এবং ঘূর্ণিঝড় ও তীব্র বাতাসে লম্বা গাছ এবং প্রশস্ত ঝোপ উড়ে গিয়ে পাশের ভবন বা রাস্তায় পড়ে প্রাণহানি ঘটতে পারে।

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট