চট্টগ্রাম বুধবার, ২৪ এপ্রিল, ২০২৪

সর্বশেষ:

ঝুঁকিতে ১৪০ কল সেন্টার এজেন্ট

নিজস্ব প্রতিবেদক

১৮ এপ্রিল, ২০২০ | ৮:৫৬ অপরাহ্ণ

বন্দরনগরী চট্টগ্রামেও বেশ জেঁকে বাসেছে করোনা। আজ পর্যন্ত ৩৪ জন আক্রান্ত হয়েছেন এই ভাইরাসে। মারা গেছেন পাঁচজন। তারা সাতকানিয়া, পটিয়া ও সরাইপাড়ার বাসিন্দা। তবে ১২ এপ্রিল একই পরিবারের ৪ জনের নমুনা সংগ্রহ করার পর ১৪ এপ্রিল ওই ৪ জন সদস্যের মধ্যে করোনাভাইরাস শনাক্ত হওয়ার পর নড়েচড়ে বসে পুরো চট্টগ্রাম। তারা সকলেই সাগরিকার বাসিন্দা।

প্রথমে বাবা পর্যায়ক্রমে মা, এক ভাই ও বোনসহ নিজের করোনাভাইরাসে আক্রান্তের বিষয়টি পূর্বকোণকে নিজেই নিশ্চিত করেছেন মতি (ছদ্মনাম)। এর আগে ৭ এপ্রিল মতির বাবার করোনা উপসর্গ দেখা দেয়ার মতির পরিবার হেল্পলাইনে কল করলে তার নমুনা সংগ্রহ করা হয়। ৮ এপ্রিল তাদের জানানো হয় মতির বাবার করোনা পজেটিভ। মাল্টিন্যাশনাল কোম্পানি জেনেক্সে ইনফোসিস এ কাস্টমার সার্ভিস এক্সিকিউটিভ হিসেবে কর্মরত ছিলেন মতি। শেষবার ৪ এপ্রিল গিয়েছিলেন নিজ কর্মস্থলে ডিউটি করতে। আর ১৪ তারিখ তার শরীরে ধরা পড়লো এই ভাইরাসের অস্তিত্ব। মাত্র ১০ দিনের ব্যবধান।

আইইডিসিআর এর নির্দেশনা অনুযায়ী কেউ ১৪ দিন হোম কোয়ারেন্টিনে থাকার পর বোঝা যায় কতটা নিরাপদ রয়েছেন ওই ব্যক্তি। এখন প্রশ্ন আসে আদো কি নিরাপদ সেই জেনেক্স, কেমন তার পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা আর কতটা নিরাপত্তা পাচ্ছেন সেখানে কর্মরত ১৪০ এজেন্ট? মানা হচ্ছে না নিরাপদ দূরত্ব নিশ্চিত করার বিষয়টি, অফিসে নেই হ্যান্ড ওয়াশ বা স্যানিটাইজার। দেয়া হয়নি মাস্ক ও হ্যান্ডগ্লাভস।

অফিস থেকে আনা-নেয়ার জন্য গাড়ি দিলেও তাতে ১৫-১৮ জনকে একসাথে গাদাগাদি করে আসতে হয়, যেখানে গাড়ির ধারণ ক্ষমতা ৭ জন। এই ধরনের বেশ কিছু অভিযোগ পাওয়া গেছে জেনেক্সের বিরুদ্ধে। আর এসব অভিযোগই করেছেন বর্তমানে সেখানে কর্মরত এজেন্টগণ।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক জেনেক্সে কর্মরত একজন এজেন্ট পূর্বকোণকে বলেন, ‘ওরা আমাদেরকে চাপ দিচ্ছে শিফট করার জন্য অনেক আগে থেকে, এমনকি যারা শিফটে জয়েন করতে পারবে না বলছে ওদের জবে আর না যেতে। তবে সবাই যখন এক সাথে যাওয়া বন্ধ করে তখন চিটাগং এ বিজনেস অফ করে দিবে বলে ছেলেদের ভয় লাগাচ্ছিলো। ওরা শুধু টাকা চায়’।

অন্য একজন বলেন, ‘৬-৭ জন ক্যাপাসিটির একটি গাড়িতে আমাদের ১৫-১৮ জনকে গাদাগাদি করে বসিয়ে আনা হচ্ছে। হ্যান্ড ওয়াশ, স্যানিটাইজার, মাস্ক বা হ্যান্ডগ্লাভস কোনো কিছুই আমাদের দেয়া হয়নি। শেষ পর্যন্ত নিরাপত্তার অভাব দেখে আমি আর অফিসে যাই না’।

এ ব্যাপারে জেনেক্স ইনফোসিসের এসিস্ট্যান্ট ম্যানেজার (অপারেশন) ইব্রাহীম ইরার কাছে মুঠোফোনে জানতে চাইলে এই মুহূর্তে তিনি ব্যস্ত আছেন এবং এই বিষয়ে তার কাছে আপডেট নেই বলে জানান। পরে তাকে একাধিক বার কল করা হলেও তিনি প্রত্যেকবার কল কেটে দেন।

তবে এই বিষয়ে জেনেক্স ইনফোসিসের টিম লিডার (অপারেশন) মো. মহিউদ্দিনের কাছে জানতে চাইলে সম্পূর্ণ অভিযোগ ভিত্তিহীন উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘আমরা অফিসে পর্যাপ্ত নিরাপত্তার ব্যবস্থা করেছি। প্রত্যেক ডেক্সে আমরা হ্যান্ড স্যানিটাইজার রেখেছি এবং নিয়মিত আমরা ফ্লোর পরিষ্কার করছি’।

নিরাপদ দূরত্ব বজায় না রেখে ৬-৭ জন ক্যাপাসিটির গাড়িতে ১৫-১৮ জনকে গাদাগাদি করে বসিয়ে আনার বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘এটা আসলে সত্য নয়। তবে কতজন করে আনা নেয়া করা হয় সেটা সঠিকভাবে বলতে হলে আমার ডাটা চেক করতে হবে, যা এই মুহূর্তে আমার কাছে নেই’।

বিটিআরসির সিনিয়র সহকারী পরিচালক (গণমাধ্যম) জাকির হোসেন খান কে বিষয়টি জানালে তিনি বলেন, এই বিষয়টি অবশ্যই খুবই নিন্দাজনক। জাতির এই ক্রান্তিলগ্নে এই ধরনের ব্যবহার কেউই আশা করে না। তবে আমি আমার ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাকে বিষয়টি অবশ্যই অবগত করবো এবং এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করবো।

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট