চট্টগ্রাম বৃহষ্পতিবার, ২৮ মার্চ, ২০২৪

সর্বশেষ:

করোনা রোগীর সেবা

গুরুত্বপূর্ণ এন ৯৫ মাস্ক সংকট

চরম ঝুঁকিতে চিকিৎসক, নার্স, ওয়ার্ডবয় ও আয়া

ইফতেখারুল ইসলাম

১৮ এপ্রিল, ২০২০ | ৬:৫৬ অপরাহ্ণ

চট্টগ্রামে চরম স্বাস্থ্য ঝুঁকি নিয়ে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত রোগীদের সেবা দিচ্ছেন চিকিৎসক, নার্স, ওয়ার্ডবয় এবং আয়ারা। স্বাস্থ্যমন্ত্রী প্রতিদিন পর্যাপ্ত পারসোনাল প্রোটেকটিভ ইকুইপমেন্টের (পিপিই) কথা বললেও বাস্তবে তা নেই। এমনকি সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ এন-৯৫ মাস্ক বা তার সমমানের মাস্ক পর্যন্ত তারা পাচ্ছেন না। এছাড়া সংকট রয়েছে ফেস শিল্ডের (মুখের উপর আলাদা নিরাপত্তা ব্যবস্থা)। প্রথমদিকে যেসব গগলস এসেছিল তার মান কিছুটা ভালো ছিল। এখন যেসব এসেছে তা অনেকটা সানগ্লাসের মতই। তাই করোনাভাইরাসে আক্রান্ত রোগীদের সেবায় নিয়োজিতরাই সবচেয়ে বেশি ঝুঁকিতে আছেন।
অপরদিকে, সংকটাপন্ন রোগীদের জন্য এখনো নিশ্চিত করা যায়নি আইসিইউ ভেন্টিলেটর সেবা। তাই কোন করোনাভাইরাস আক্রান্ত রোগীর অবস্থা সংকটাপন্ন হলেই আল্লাহর বিশেষ রহমত ছাড়া তাকে বাঁচানো এক প্রকার অসম্ভব। করোনায় আক্রান্ত হয়ে ইতিমধ্যে চট্টগ্রামে পাঁচজন রোগী মারা গেছেন।
নগরীর আন্দরকিল্লা জেনারেল হাসপাতাল এবং ফৌজদারহাট বিআইটিআইডি’তে করোনা রোগীদের চিকিৎসার ব্যবস্থা করা হয়েছে। করোনা রোগীদের সেবায় নিয়োজিত একাধিক চিকিৎসক ও নার্সের সাথে কথা বলে জানা গেছে, তারা এক সপ্তাহ সেবা দেন। পরের ১৪ দিন প্রাতিষ্ঠানিক কোয়ারেন্টিনে থাকেন। এরপর এক সপ্তাহ পরিবারের সাথে থেকে পরের সপ্তাহে আবার করোনা রোগীর সেবায় নিয়োজিত হন। এভাবেই তাদের দায়িত্ব ভাগ করে দেয়া হয়েছে। দায়িত্ব পালন করেন চিকিৎসক, নার্স, আয়া এবং ওয়ার্ড বয়। দায়িত্ব পালনকারীদের সবার সমান নিরাপত্তা প্রয়োজন। কারণ এদের মধ্যে কেউ আক্রান্ত হলে সবাই ঝুঁকিতে পড়ে যাবেন। করোনা রোগীর কাছে যাওয়ার সময় সবচেয়ে বেশি নিরাপদ করতে হয় মুখ, নাক এবং চোখ। এর মধ্যে নাক এবং মুখের জন্য এন-৯৫ বা তার সমমানের মাস্ক অবশ্যই পড়তে হবে। আর চোখ বাঁচানোর জন্য গগলস। আর একটু বাড়তি নিরাপত্তার জন্য ফেস শিল্ড। যা একটি স্বচ্ছ আবরণ দিয়ে পুরো মুখকে ডেকে রাখবে। আর পুরো শরীরের জন্য রেইনকোটের মত একটি গাউন এবং জুতা। কিন্তু চট্টগ্রামে করোনা রোগীদের যারা সেবা দিচ্ছেন তাদের পর্যাপ্ত ফেস শিল্ড দেয়া হচ্ছে না। গগলস দেয়া হয়েছে নিন্মমানের। আর পুরো শরীর ঢেকে রাখার জন্য যে নিরাপত্তা গাউন দেয়া হচ্ছে তা অনেকটা টিস্যু পেপারের মত। একটু পানি পড়লেই চুষে নেয়। করোনা রোগীদের সেবায় নিয়োজিতদের অভিযোগ, যে পিপিই পানি থেকে নিরাপদে রাখতে পারে না তা ভাইরাসকে কিভাবে শরীর থেকে দূরে রাখবে।
বিএমএ চট্টগ্রামের সাধারণ সম্পাদক ডা. ফয়সাল ইকবাল চৌধুরী পূর্বকোণকে বলেন, চট্টগ্রামে দুইটি হাসপাতালে কোভিড ১৯ আক্রান্ত রোগীদের সেবায় নিয়োজিত চিকিৎসক নার্স, আয়া থেকে ওয়ার্ড বয় সবাই ঝুঁকিতে আছে উল্লেখ করে বলেন, করোনাভাইরাস প্রতিরোধী মাস্ক এখনো একটাও চট্টগ্রামের চিকিৎসকরা পায়নি। যেসব গগলস দেয়া হয়েছে তা বাচ্চাদের খেলনার গগলস। পিপিইগুলো মানসম্মত নয়। পিপিই এর সেলাইগুলো পর্যন্ত সিল করে দিতে হবে। যাতে কোনভাবেই পানিও ভিতরে প্রবেশ করতে না পারে। যে পিপিই দিয়ে পানি প্রবেশ করে তা ভাইরাস রোধ করতে পারবে না। এসব ঝুঁকির কারণে চট্টগ্রামে একজনসহ সারাদেশে শতাধিক চিকিৎসক এই ভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছে। এভাবে ঝুঁকিপূর্ণভাবে চিকিৎসা সেবা দিতে থাকলে দেশে একসময় চিকিৎসা সেবা দেয়ার জন্য চিকিৎসকও থাকবে না।
জানতে চাইলে চট্টগ্রাম বিভাগীয় পরিচালক (স্বাস্থ্য) ডা. হাসান শাহরিয়ার পূর্বকোণকে বলেন, এন-৯৫ মাস্ক একমাত্র আমেরিকায় তৈরি হয়। আমেরিকা তা রপ্তানি বন্ধ করে দিয়েছে। এছাড়া এর সমমানের মাস্কও সরকারের কাছে নেই বলে তিনি জেনেছেন। তাই সার্জিকেল মাস্ক দিয়েই কাজ চালাতে হচ্ছে। যারা করোনা রোগীদের সেবায় নিয়োজিত আছেন তাদেরকে ডাবল সার্জিকেল মাস্ক পড়ে ওয়ার্ডে প্রবেশের নির্দেশনা দেয়া আছে। ফেস শিল্ড সীমিত আকারে আছে উল্লেখ করে বলেন, যার প্রয়োজন তাকে দেয়া হচ্ছে। তাছাড়া পুরো শরীর ঢাকার জন্য যে পিপিই সেটি পর্যাপ্ত আছে। তার মান নিয়েও প্রশ্ন নেই বলে তিনি উল্লেখ করেন।

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট